T3 ক্যাফে হোলি স্পেশাল এ কুণাল রায়

ছেলেবেলার দোল উৎসব : এক উষ্ণ স্মৃতি

স্মৃতি অমলিন। স্মৃতি, “এস না বারবার, অতীতে আমি ক্লান্ত”। তবু স্মৃতি সবারই প্রিয়। বিশেষত ছোটবেলার। জীবনের অবসর মুহূর্তে স্মৃতি টোকা দেয় এই মনের দুয়ারে। হাতে এক পেয়ালা চা বা কফি নিয়ে, জানলার বাইরের পৃথিবীটা দেখতে দেখতে গতকালে ফিরে যাওয়া, এক আনন্দ, এক বিষাদ বা অন্যকিছু!
আমি মূলত দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। পৈতৃক বাড়ি। এখানেই এক সময় দোল উৎসবে চুটিয়ে রং খেলা হত। বাড়ির মূল দরজাটা সামনেই ছিল এক খোলা জায়গা। চলতি ভাষায় উঠোন। দোলের আগের দিন আনন্দ অপরিসীম। উল্লাস অসীম। আমার মেজ কাকা বিভিন্ন রং কিনে আনতেন বাজার থেকে। লাল, নীল, সবুজ, হলুদ – কি ছিল না ঝুলিতে আজ ভাবি! তবে কোন ভেজাল রং নয়! খাঁটি হার্বাল। সূর্যের আলো স্পর্শ করতে না করতেই আমরা তিন ভাই বোন উঠে পড়তাম ঘুম থেকে। ঘড়ির কাঁটায় আটটা বাজতে না বাজতেই ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়তাম। একটা বড় বালতিতে রং ঘোলা হত। পিচকারী দিয়ে একে অপরকে রং দেওয়া দিয়ে শুরু হত খেলা। তারপর মূল পর্বের শুভ সূচনা। বাতাসে আবির ছড়ানো। একে অপরকে কাবু করে রং মাখানো, বিশেষ করে মুখে। এক কথায় রং মেখে শঙ সাজা ! রং মেখে ভূত সাজা। দারুণ ও নির্ভেজাল মজা। প্রায় দু ঘন্টা ধরে খেলা হত। পাড়া প্রতিবেশীরাও রং দিতে আসত আমাদের বাড়িতে। বাড়ির কাজের দিদি ও মেজ কাকিমাও খেলতেন সমান তালে। বাবা বা মাকে সেই ভাবে কখনো খেলতে দেখিনি। বাবা খুব একটা রং খেলা পছন্দ করতেন না। তবে আমাকে কখনো নিষেধ করতেন না। যাই হোক প্রতি বছর খেলা হত। এক মুঠো আকাশের নীচে একত্রিত হওয়া। খেলার শেষে সাবান শ্যাম্পু দিয়ে ভালো করে স্নান করা। রং তাতেও উঠত না। মনে মনে ভাবতাম রং না থাকলে লাভটা কি? দোল উৎসব উদযাপন করেছি, কে বলবে!
দেখতে দেখতে বহু বছর অতিক্রান্ত। জীবনের বহু বসন্ত পার করে এসেছি। তবু ফিরে দেখতে ইচ্ছে হয় বারবার। রিক্ত হয় মনের সকল বাহার! আজ পৈতৃক বাড়িতে তেমন কেউ নেই। বেশীর ভাগ অংশীদার ফ্ল্যাট কিনে চলে গেছে। ঠাকুমা, বাবা, মা, কাকু কেউ নেই। সকলেই গত হয়েছেন বহুদিন। এই বাড়ির দু তলায় কাকিমা ,ভাই ও এক তলার ফ্ল্যাটে আমি একা থাকি। সোনাঝরা দিনগুলো বইয়ের মাঝেই লিপিবদ্ধ হয়ে থেকে গেছে। নেই উৎসব। নেই রং। নেই প্রাণ। আছে শুধু উমুক্ত জায়গাটা যেখানে খেলতাম আমরা! এযেন সবুজে ঘেরা মাঠের মাঝে এক বিবর্ণ পলাশ।
এখনো দিনটি নিজের মত করে পালন করি। ঠাকুরের পায়ে আবির দেওয়া, ফুল মালা দিয়ে সাজানো, ধূপ ধুনো ,প্রদীপ জ্বালানো – সবই আছে। এক নিছক ছুটির আমেজ। বাকি পাঁচটা দিনের মত এই ‘বিশেষ’ দিনটাও কেটে যায়। বাড়ছে বয়স। বাড়ছে চিন্তা। বাড়ছে নৈরাশ্য। তবু স্মৃতিটুকু নিয়ে বেঁচে থাকবার তাগিদটা আছে আজও!!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।