সুপ্রভাত। তোমায় জানাই ভোরের শিশির ভেজা এক গুচ্ছ লাল গোলাপের শুভেচ্ছা প্রিয়। ‘গোলাপ’, প্রণয়ের প্রতীক। সাধারণ ভাষায় প্রেম বা ভালোবাসার প্রতীক। তবে আমরা একটা কথা সবসময় ভুলে যাই, বা মনে রাখতে বা আলোচনা করতে বা বলতে পছন্দ করিনা যে গোলাপের কাঁটা আছে, যা একবার স্পর্শ করলে রক্তক্ষরণ অনিবার্য। প্রেম বড়ই দুর্গম পথ। পথিক যতই সঠিক পথের খোঁজ পাক না কেন, গন্তব্য সহজে ধরা দিতে চায় না। পথে শুধু বাধা না, মাঝে মধ্যে বিপর্যয়ও নেমে আসে। মনে হয় যেন এক দমকা বাতাস এসে ঠাকুর ঘরের সকল প্রদীপ নিভিয়ে দিল। চারিদিক তখন এক নিবিড় অন্ধকারে ডুবে আছে। সে এক কঠিন যন্ত্রনা, যা শব্দে প্রকাশ করা যায় না। ভালোবাসার অপর এক নাম আছে, পরীক্ষা, নিরন্তর পরীক্ষা- তবে কিসের প্রয়োজনে তা আজও অধরা। প্রেম এক অধরা মাধুরী সম, যার সুবাস পেলেও, উৎস কোন স্থানে বলা কঠিন। এই প্রণয়লিপি এক অভিশাপের ঝড়ও ডেকে আনে। ইতিহাস তার সাক্ষ্য বহন করে চলেছে আজও। মনে পড়ে পসেইদন ও মেদুসার সেই কাহিনী! মেদুসা তাঁর আরাধ্যা গ্রীক দেবী এথেন্সকে আরাধনার করার উদ্দেশ্যে এক রৌপ্য থালায় বিভিন্ন রঙের ফুল সাজিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তাঁর রাজপ্রাসাদের সামনে উত্তাল সমুদ্র। আকাশে পেঁজা তুলোর মত মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে। চারপাশ পাখির কলতানে মুখরিত। অকস্মাৎ পসেইদন সেই সমুদ্র থেকে উঠে আসে, নিবিড় ভাবে আলিঙ্গন করে মেদুসাকে। হাত থেকে মাটিতে পড়ে যায় পূজার থালা। অনাবশ্যক মৈথুনে লিপ্ত হয়ে দুই কায়া, রচিত হয় এক নবীন ইতিহাস! এই মহাপাপের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ গ্রীক দেবীর দ্বারা অভিশপ্ত হয় মেদুসা। এক সর্পকন্যা এ রূপান্তরিত হয় সে। প্রণয় তখন তার কাছে এক অভিশাপ, এক আকাঙ্খিত বিরহ! একটু পেছনের দিকে আরেক বার তাকালে আশ্রম কন্যা শকুন্তলা ও রাজা দুষ্মন্ত এর প্রেমের কাহিনী মনে পড়ে যায়। তাঁদের প্রকৃত প্রেম ও পরবর্তীকালে গন্ধর্ব বিবাহ সেই দিন ঋষি দুর্বাসার অভিশাপ থেকে রক্ষা করতে পারেনি। কতটা অসহায় ছিল এই মুহূর্তগুলো। রাজা সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়েছিলেন শকুন্তলার কথা সেদিন। প্রেমের দেবতাও নিজের পরাজয় স্বীকার করেছিলেন। তবু ও এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে প্রেম ছাড়া অন্য কোন অনুভূতির কোনও অস্তিত্ব নেই। যদি থেকে থাকে তা কেবল প্রণয়ের বিভিন্ন বহিঃপ্রকাশ!
এক ক্ষুদ্র শব্দ অথচ কি অসীম ক্ষমতা সম্পন্ন এই অনুভূতি। সৃষ্টি ও ধ্বংসের এই নিত্য লীলা একে ঘিরেই। ভালোবাসি,আহত হই, কিন্তু বিরত থাকতে পারিনা, এ এক প্রকার অক্ষমতা। এই স্থানেই পরমেশ্বরের বিজয়। কারণ একটাই: মায়ার এই বাঁধন ভালোবাসাই নির্মাণ করে। তবে কেন এই যন্ত্রণা? এই অশ্রুসিক্ত নয়ন? কেন স্বেচ্ছায় অন্তিম ক্ষণকে চয়ন করবার এক বিরল সিদ্ধান্ত? কেন এই অস্থিরতা? কেন বারংবার তোমার কাছে সেই আকুল প্রার্থনা? কেন এই অপূর্ণতা? বিধাতা আজ তোমার নিকট আমার মত কোটিকোটি মানুষ উপস্হিত- অপেক্ষা শুধু তোমার উত্তরের!!