সাপ্তাহিক টুকরো হাসিতে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় – পাঁচ

টুকরো হাসি – পাঁচ

উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক

আমাদের পাড়ায় খুবই বাঁদরের উৎপাত।মাঝে মাঝেই ওরা দল বেঁধে আসে।বাড়ির সাবান থেকে শুরু করে মাছের মুড়ো,গামছা,কলা যা পায় নিয়ে হাওয়া।লোকজন ওদের অত্যাচারে জেরবার।
ক’দিন ধরে রোজই আসছে।তবে কোনো অত্যাচার করছে না।এলাকায় প্রোমোটারের নজর এড়িয়ে টিকে থাকা একটিমাত্র আম গাছের মগডালে উঠে বসে থাকছে।
করোনার দাপট আর লকডাউনে ফোনেই সবার সঙ্গে যোগাযোগ।বিতান বলল,‘বাঁদরের এই উচ্চস্থানে বসে থাকার বিলাসের কথা গুলেদা জানে?’
বললাম,‘তা তো বলতে পারব না।’
ফোন করে ক’দিন আগে গুলেদার তোপের মুখে পড়েছি।কথা বলতে ভরসা পাই না।এক আমলার ছেলে, উচ্চপদের বাড়ির লোকেরা হোলির রঙের মতো করোনা ভাইরাস নিয়ে খেলেছে।পাবলিক পাগলের মতো বাজারে হামলে পড়েছে।অতিরিক্ত খাবার মজুত করছে।মাস্ক,স্যানিটাইজারেও ব্যাপক কালোবাজারি।জনতাকার্ফু শেষ হতেই লোকজন মিছিল করে কাঁসর ঘন্টা নিয়ে রাস্তায়।লকডাউনে টালা থেকে টালিগঞ্জ,গ্রাম গঞ্জের লোকজন ছুটির আনন্দে মোচ্ছবে মেতেছে।এইসব দেখে গুলেদা ফায়ার।বলল,‘গোটা পৃথিবী যেহানে রসাতলে যাইতাছে সেহানে বোধবুদ্ধিহীন এগুলান কি মানুষ না বান্দর।এক্কেরে উচ্ছন্নে গ্যাছে।’
বাঁদররা গাছের মগডালে বসে থাকায় লোকজন ভয় পাচ্ছে।গুলেদা অচেতন মানুষদের সঙ্গে বাঁদরের তুলনা করেছিল।ওরা কি সে কথা শুনতে পেয়েছে?অপমানিত হয়ে এখন যদি আমাদের উপর হামলা করে। তাহলে উপায়!ভাবছি বাঁদরদের হামলা সামলাব কি করে?ইতিমধ্যে কয়েকজন আমাকে ফোন করল।বলল,‘আমরা পটকা ফাটাব?
এরা লকডাউনে প্রদীপ জ্বালিয়ে পটকাও ফাটিয়েছিল।তাও মজুত করেছে!এরাই হয়ত এলাকায় বোমা বিস্ফোরণের আওয়াজও করবে।পুজোর কেনাকাটা আর ঠাকুর দেখার ভিড় দেখে গুলেদা নিশ্চয়ই বেদম চটেছে।
তবু বাধ্য হয়ে ফোন করলাম।গুলেদা বলল,‘কইয়া ফ্যালা?’
বললাম,‘বাঁদরগুলি গাছের মগডালে বসে।সবাই ভয় পাচ্ছে।কোনো সমস্যা হবে না তো?’
‘তর অত মাথাব্যথা ক্যান?’
‘তুমি যে ওদের সঙ্গে উৎকট মানুষদের তুলনা করেছ,তাতে ওরা যদি রেগে আমাদের উপর হামলা করে?’
গুলেদা খানিকক্ষণ চুপ থেকে দুঃখ করে বলল,‘খুব ভুল হইছে রে।রাগের মাথায় মাইনষের লগে অগো তুলনা করাডা ঠিক হয় নাই।’
‘এখন কী হবে?’
‘চিন্তা করিস না।অগো মধ্যে তো আমলা আর উচ্চপদস্থ নাই,অরা মাইনষের ক্ষতি করবো না।আমাগো বিটকাইল্যা বুদ্ধি,বিবেচনা নিয়া বৈঠক কইরাই চইল্যা যাইবো।’
‘বৈঠক?’
‘হ।বান্দর থিকা পরিবর্তন হইয়াই আমরা মাইনষের মতো হইছি,না মাইনষে একদিন বান্দরের আকৃতি নিবো এই নিয়া জরুরি বৈঠক।’
‘বাঁদরামো না করে বৈঠক করছে?অত উঁচুতে বসে!’আমি বললাম।
গুলেদা বলল,‘আমরা যে অগো তুলনায় কত অপদার্থ হেইয়ার আলোচনা তো! তাই উঁচুতে বইস্যা এক্কেরে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক।’
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।