সাপ্তাহিক গল্প নেই-তে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় – ৩

গল্প নেই – ৩

মিতু বলল,‘আমি বিরিয়ানি করে আনব।’
জয় উৎসাহে প্রায় লাফিয়ে উঠল।মিতুর তৈরি বিরিয়ানি খেয়ে ও এর আগে তিনবার লাগাতার প্রশংসা করেছে। আমরা অন্য বন্ধুরা ওকে সবাই হাতে ধরে থামিয়েছি।জয়ের আনন্দে মিতু খুশি হল।প্রশংসা শুনতে কার না ভালো লাগে।
রাকা জুলেখা ওদের ইচ্ছে জানাল।ওদের তিনজনেরই খুব ভালো রান্নার হাত।যে রান্নাই ওরা করুক আমরা প্রশংসা করতে বাধ্য হই।
রাকা আমাকে বলল, ‘তুমি কি দায়িত্ব নিচ্ছ?’
বললাম,‘আমি রাজীবকে ওর গাড়ি আনতে অনুরোধ করব।’ সবাই হেসে উঠল।
রাজীব আমাকে বলল,‘তুই আমাকে একবার সত্যি সত্যি অনুরোধ কর।আমি খুব খুশি হব।’ আরও একবার হাসল সকলে।
গাড়ি ছুটছে রবীন্দ্র সঙ্গীত।গাড়ি ছুটছে জীবনমুখী।অনেকটা রাস্তা হা হা হি হি।এরই মধ্যে একটু আধটু খুনসুটি।আহ্লাদীপনা।আমরা ডায়মন্ডহারবারে পৌঁছলাম।
এবার প্রথমেই ঠিক করেছিলাম কোনো হোটেলে নয়,বসব খোলা আকাশের নিচে।খাব নিজেদের রান্না করা খাবার।
রাজীব বলেছিল,‘থাকব একেবারে শিকড়ের কাছাকাছি।’
গাড়ি থামতেই কয়েকজন এদিক ওদিক থেকে ছুটে এল।কেউ ঝালমুড়ি বিক্রি করছে। কেউ ডাব।মিতু রাকা জুলেখাকে দেখে মনে হল যেন ওরা কেউ জীবনে ঝালমুড়ি দেখেনি।মিতু লঙ্কার ঝালে উঃ আঃ করছিল।সেদিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিল জয়।রাজীবের হাতের ক্যামেরা ওদের দিকে ক্লিক শব্দ করল।মিতু আর জয়ের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল রোগা হাড়সার ন্যাংটো দুটি বাচ্চা।ওরাও কি আটকে রইল ছবিতে?
ডাব নিয়ে জলকেলি চলল খানিকক্ষণ।তারপর অনেকটা সময় কাটল গল্পে,গানে ও কবিতায়।কথার স্রোতে ভেসে গেল মুখ্যমন্ত্রী,প্রধানমন্ত্রী,পোখরান,সীমান্ত যুদ্ধ,করোনা,শেয়ার বাজার আরও অসংখ্য বিষয়।কখনো একটুকু ছোঁয়ার জন্য শুধু দু’জনে অন্য চারজনের চোখের আড়ালে যাওয়া।এইসব খেলা চলতেই লাগল।
একসময় সবারই মনে হল খিদে পাচ্ছে।খোলা জায়গায় চাদরের উপরে মিতু রাকা জুলেখা একটু একটু করে সাজাতে শুরু করল খাবার।অদ্ভুত সুবাস বাতাসে ।
খেয়াল করিনি আমাদের চারপাশে একটা একটা করে জেগে উঠল মাথা।শিশুর,বালকের,যুবকের, বৃদ্ধের।যুবতি,বৃদ্ধার।সবারই রুগ্ন মলিন চেহারা।সবাই স্থির।শান্ত।তাকিয়ে আছে আমাদের খাবারের দিকে।প্রত্যাশায়।
আমাদের খাবার যদি বাড়তি হয় তা নেবার জন।
চারপাশে তাকিয়ে মিতু,রাকা,জুলেখা একসঙ্গে বলে উঠল,‘উঃ মাগো।’
চমকে উঠলাম।আমাদের এই দুষ্টু মিষ্টি শৌখিন খাবার সাজানোতে কোনো অন্যায় হল কি?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।