সাপ্তাহিক গল্প নেই-তে কল্যাণ গঙ্গোপাধ্যায় – ১৮

গল্প নেই – ১৮

একসময় শুনতাম যুদ্ধের বাজারে কারও পয়সা করার কথা।
কখনো ছায়াছবির সংলাপে এমন শুনেছি। দেখেছি গল্প,উপন্যাসে। যখন অসংখ্য মানুষ বিপদগ্রস্ত, তখন কিছু মানুষকে দেখা যায় অমূল্য রতন পাওয়ার জন্য ছাই ওড়াতে।
কলকাতায় বোমা পড়ার আতঙ্কে যখন দিশাহারা মানুষ,পালিয়ে যাচ্ছে অন্যত্র তখন কিছু মানুষ সেখানে থেকেই টাকা রোজগারের সন্ধান করছে।
এখনও দেখা যায় অনেক মানুষেরা তাদের আগামী দিনগুলো কে সুন্দর করার বাসনায় যে সব মানুষকে তাদের প্রতিনিধি করেছে, সেই প্রতিনিধিদের আর্থিক সচ্ছলতা দিনের পর দিন ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। কখনো এতটাই যে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতে হয়। গুটিকয়েক মানুষ তাদের ইচ্ছে মতো যা খুশি করে। কারও কথার তোয়াক্কা করে না তারা। সাধারণ মানুষ ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে মনের মতো প্রার্থী নির্বাচন করার সুযোগ পেলেও কখনো তাদের ইচ্ছের কথা বা প্রয়োজনের কথা জানাবার উপায় থাকে না। কোথায় জানাবে? মানুষের কথা শুনবে কে? কিভাবে জানাতে হয় এটা জানেনা সাধারণ মানুষ। জানাবার কিছু পদ্ধতি থাকলেও যাকে জানানো হচ্ছে সে যেন তখন অন্য গ্রহের বাসিন্দা। কথাটা যদি তার পছন্দমতো না হয় তবে দেশদ্রোহী থেকে শুরু করে অমুকবাদী তমুকবাদী তকমা জুড়ে দেওয়া হয়।
প্রতিদিন যেমন সূর্য ওঠে,ফুল ফোটে, খুব দুর্ভাগ্য না হলে মানুষ দেখতে পায় একটি সুন্দর সকাল তেমনই তার কানে আসে কোনো এক মধ্যবিত্ত আদর্শবান শিক্ষকের কথা। যিনি তাঁর জীবনের সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে এলাকায় তৈরি করতে চেয়েছেন একটি স্কুল, কখনো বা চিকিৎসা কেন্দ্র। ছোটো ছেলে-মেয়েদের খেলার জন্য একটি সুন্দর উদ্যান।
এমন শুনলে মনে হয় বাতাসে যেন বইছে প্রচুর অক্সিজেন, আমাদের চারিদিক সুন্দর হয়ে ওঠে। কত মনীষীর জীবনী পাঠ করে জানতে পারি দেশের ও মানুষের জন্য তিনি সবকিছু ত্যাগ করেছেন। তাঁদের প্রতি প্রণাম জানিয়ে যখন শুরু হয় দিন, তখন সবকিছু মধুর মনে হয়।
করোনার প্রথম ঢেউ, আম্ফান চলে গিয়ে এখন দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। এই অসুখ বিশ্বজুড়ে। এমন ভয়াবহ তার উপস্থিতি মনে হয় যেন তা কোথাও ঘাপটি মেরে বসে আছে। একটু অসতর্ক হলে আর রক্ষা নেই। ধনী-দরিদ্র কাউকে ছেড়ে কথা বলছে না।
আমার বাড়ি গাড়ি প্রচুর অর্থ ও ক্ষমতা আছে এই রোগ আমাকে কিছু করতে পারবে না এ কথা কেউ বুক বাজিয়ে বলতে পারবে না।
তবে? সময় এলে সবাইকে চলে যেতে হবে। যখন অসময়ে চলে যেতে হচ্ছে তখনও কেউ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সঙ্গে কথা বলছি না। উল্লাসে আনন্দে নিজেদের মহান করে তুলে ধরবার জন্যে শুধু আস্ফালন।
পৃথিবীজুড়ে আমাদের দেশ ও রাজ্যজুড়ে কাতারে কাতারে মানুষ মারা যাচ্ছে।
একটা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে পেরেছি আমরা। সেটা মানুষের কাছে পৌঁছাতে কত বাধা কত তর্ক। মানুষকে দিনের পর দিন হতাশা বুকে টেনে নিয়ে, বয়ে বেড়াতে হচ্ছে। তুমি তুমি আর আমি আমি এই দড়ি টানাটানির খেলা কবে শেষ হবে তা মানুষ জানে না।
এরই মধ্যে উধাও হয়ে যাচ্ছে জীবনদায়ী ওষুধ। অক্সিজেন মজুত করছে তারা, যাদের প্রচুর পয়সা। কালোবাজারি হচ্ছে। পরিস্থিতি যাই হোক মানুষের শবদেহের উপর অসৎ উপায়ে কিছু বাড়তি পয়সা রোজগার করার বাসনা সবসময়ের ও সববিষয়ের মতো এখানেও বহাল আছে।
তবু কোথাও ফুল ফুটে ওঠে। পাখি গান গায়। যখন শুনি করোনা রুগিদের বাড়িতে বিনামূল্যে খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিবেদিত কিছু প্রাণের কথা। কিছু ফোন নম্বর চলে আসে। যেখানে ফোন করলে সব রকম সাহায্য নিয়ে চলে আসবে দেবদূতের মতো মানুষেরা। দেওয়া হবে বিনামূল্যে অক্সিজেন, অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন হলে আরও অনেক কিছু, তখন বুকের ভিতরটা কেমন আনন্দের কান্নায় ভরে ওঠে। মনে হয় যেন প্রচুর অক্সিজেন জমা হয়ে যাচ্ছে সেখানে।
আছে! আছে! বুকের মধ্যে ভিতর খুশির দামামা বেজে ওঠে আচমকাই। এখনও সবকিছু ফুরিয়ে যায়নি।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।