• Uncategorized
  • 0

গল্পেসল্পে কৌস্তভ দাস

অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্প

“ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো
তোমার মনের মন্দিরে।
আমার পরানে যে গান বাজিছে
তাহার তালটি শিখো
তোমার চরণমঞ্জীরে।। “
ভালোবাসা মানুষের জীবনে একটি অমূল্য সম্পদ, যা সরাসরি ভাবে বা পরোক্ষ ভাবে মানুষের জীবনযাপনের সাথে জড়িয়ে রয়েছে। যার পাঠ অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রীকে স্কুল জীবনের সান্নিধ্যে এক নিবির আটুট বন্ধনে বেঁধে রেখেছে। সেইরকম ই কিছু ভালোবাসা আছে যা চিরন্তন সত্য, যাহার মূল্য কখনোই হ্রাস পায় না বা পেতে পারে না। ভালোবাসা চিরন্তর, যা আজ সফল না হলেও একদিন ঠিকই সফলতা অর্জন করবেই।……
তবে এ কথাটাও খাঁটি একশো ভাগ সত্য, যে পৃথিবীর সকল ভালোবাসা কখনও পূর্ণতা পায় না বা তা পাওয়া ও সম্ভব নয়।
যদি তা সম্ভব হত, তবে হয়ত ভালোবাসার তরে কাতর সেই সব মানুষদের ভগ্ন হৃদয়ে থাকা সেই সব ব্যর্থ ভালোবাসা ও সার্থকতা লাভ করত। তাই মেনে নিতে কষ্ট হলেও এ কথা সত্য যে কোন ভালোবাসার সফল ভাবে পূর্ণতা লাভ করা খুবই কঠিন।
এই সব অসম্পূর্ণ ভালোবাসার জন্য বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম(Kazi Nazrul Islam) বলেছেন-
“তোমারে যে চাহিছে ভুলেও একদিন
সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন”
— কাজী নজরুল ইসলাম
আর সত্যিই তাই, অসম্পূর্ণ ভালোবাসার যন্ত্রনা যা অতিব মর্মস্পর্শী। এইরকমই একটি ঘটনার তোমাদের জানাবো যা আমার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং বাস্তবে যা ঘটেছে।
আমি তখন ক্লাস সেভেন এর ছাত্র। বয়সে নেহাত ছোট্ট না হলেও সেই সময়ে আমি বুঝতাম না ভালোবাসার সঠিক মর্ম। তবুও বলতে পারো অবচেতন মনের খেয়ালে বা সেই মেয়েটির সাগরের মতো গভীর নিরব চোখের দিকেই তাকিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলাম এক অদ্ভুত জগৎ এর খোঁজে। আর ঠিক এভাবেই আমার জীবনে প্রথম ভালোবাসার সূএপাত ঘটে। কিন্ত তার কাছে গিয়ে তাকে ভালোবাসা নিবেদন করার সাহস টুকু ও আমার ছিলো না। তো নীরবেই তাকে ভালোবেসে গেছি সবসময় নিজ অন্তর হতে।
যে দিন তার সাথে প্রথম পরিচিত হয়েছিলো আমার মানে সেই গোলাপের পাপড়ির মত মেয়েটির সাথে তার সাথে কথা বলতে গিয়ে আমার শরীরের রক্ত হিম হয়ে গিয়েছিল। সেই উপহারটির কথাটাও খুব মনে পড়ে, যেটা রেখেছিলাম তার জন্মদিনের দিন তাকেই দেবার জন্য, সেটা এখনও আমার টেবিলের ডয়ারে রাখা আছে কারন ভাগ্যের দোষে স্কুল বন্ধ হওয়ার জন্য আর তাকে সেটা দেওয়া হয়নি।
বেস কয়েকমাস এভাবেই অতিবাহিত হল নীরবে। দেখতে দেখতে মাস যা বছরে পরিনত হল। একদমই যে চেষ্টা করিনি তা নয়, একবার মনে সাহস নিয়ে চেয়ে ছিলাম বলতে, কিন্ত ঘটনাক্রমে বলা হয়নি তাকে কিছুই, সব কিছুই কেবল রয়ে গেছে আমার মনে । আর নিজের অজান্তেই যে তাকে নিজের কতটা কাছে এনে ফেলেছি তা পরিমাপ করার সাধ্য আমার এখন আর নেই।
” আমি তোমার বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনি,
দীর্ঘ বরস-মাস
যদি আর কারে ভালবাসো
যদি আর ফিরে নাহি আসো
তবে তুমি যাহা চাও তাই যেন পাও
আমি যত দুঃখ পাই গো
আমারও পরান যাহা চায়
তুমি তাই, তুমি তাই গো “—-
ভাগ্যের দোষেই হোক বা নিজের দোষে আমার ভালোবাসা অসম্পূর্ণ ই থেকে গেল। কারণ দশম শ্রেণির পরীক্ষার পর সে আর আমাদের সাথে স্কুলে পরে না, বন্ধুদের কাছ থেকেই শুনেছিলাম সে নাকি কোন এক মিশনে চলে গেছে। তার সাথে দেখা হয়তো আর কোনো দিনই হবে না আমার। এভাবেই আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা এক অসম্পূর্ণ বাস্তবতার মধ্যে দিয়েই এখন তা সমাপ্ত।
স্কুলের তিনটি বছরের মধ্যেই আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসার সীমাবদ্ধ হলে যায়।
এখন আমি তাকে ভুলেই গেছি, বা হয়তো ভুলেও ভুলতে পারিনি। মাঝে মাঝেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখার একটি কথা বারংবার হৃদয় স্পর্শ করে যায়। ———-
“আমার মন কেমন করে-
কে জানে, কে জানে,
কে জানে কাহার তরে “।।
——– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।