• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিক কথা সাগরে কৌশিক চক্রবর্ত্তী (পর্ব – ৭)

কলকাতার ছড়া

রাজা চৈতন্য সিংহের সময়ে বিষ্ণুপুরে দেখা দেয় আর্থিক সঙ্কট। প্রবল সে সঙ্কট। পলাশীর যুদ্ধের পরে পরে ধীরে ধীরে বিদেশী শক্তির আনাগোনার প্রভাবে দিকে দিকে দেশীয় রাজন্যকূলের অস্তিত্ব সঙ্কট দেখা যেতে থাকে। বাদ যাননি বিষ্ণুপুরের মল্লরাজবংশও। অর্থাভাবে দিগ্বিদিকজ্ঞানশূন্য অবস্থায় রাজা চৈতন্য সিংহ শেষমেশ ইষ্টদেবতা মদনমোহনকে বাঁধা রাখেন বাগবাজারের তৎকালীন প্রতিষ্ঠিত মৈথিলী কায়েত গোকুল মিত্রের কাছে। পরিবর্তে এক লক্ষ টাকা ঋণ নিয়ে বিষ্ণুপুর ফিরে যান তিনি। এদিকে বিষ্ণুপুরের মদনমোহন কলকাতায় মিত্রবাড়িতে সেবিত হতে থাকেন প্রতিদিন। গোকুল মিত্রের এক বাল্যবিধবা কন্যা ছিল যাঁর নাম বিষ্ণুপ্রিয়া। পুজোর ছলে কখন মদনমোহনের সাথে তার গড়ে ওঠে মনের সম্বন্ধ। নিজের স্বামীরূপে বরণ করে বিষ্ণুপ্রিয়া প্রাণ দিয়ে সেবায় মেতে ওঠেন ঠাকুর মদনমোহনের। ইতিমধ্যে অর্থের জোগাড় করে রাজা চৈতন্য সিংহ আসেন কলকাতায়। গোকুল মিত্রের কাছে। নিজের ঠাকুরের দাবী নিয়ে। কিন্তু যথারীতি বিষ্ণুপ্রিয়ার অনুরোধে বাবু গোকুল মিত্র বেঁকে বসেন ঘরের দেবতাকে ত্যাগ করতে। রাজাকে একটি নকল মূর্তি দিয়ে সেযাত্রায় রক্ষা পান। যদিও পরে রাজা এই প্রতারণা ধরতে পারলেও আসল ঠাকুর তিনি মোকদ্দমা করেও ফেরত পান নি।
আজও মদনমোহন বাগবাজারের রাজবল্লভ পাড়ায় মিত্রদের ঠাকুরবাড়িতে পূজিত হয়ে আসছেন। শোনা যায় এই মন্দিরে একসময় রোজ তিনশ কাঙালি ভোজনের ব্যবস্থা করা হত।
এই ঘটনার পরে সেই যুগে কলকাতায় নিম্নলিখিত ছড়া দুটি মুখে মুখে শোনা যেত…
“সুবুদ্ধি রাজার কুবুদ্ধি ঘটিল
সোনার মদন মোহন বাঁধা দিয়ে গেল ||”
অপরটি—
“কারুর কিছু হারিয়েছে
বাগবাজারের মদন মোহন পালিয়েছে ||”
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।