এদিকে হল কি মেয়ে তো বড় হয়ে কলেজ যাচ্ছে ,বি এ পড়ছে সকালে ক্লাস। আমি আছি আরো বন্ধুরা সকলে মিলে একই জায়গায়
প্রাইভেট টিউশন ।সেখান থেকে পিকনিক্ আয়োজন করা হচ্ছে সবাই দুদিনের জন্য দীঘা যাবো ।
টুকি ও আর আগের মতো নেই ,এখন চেহারা টা দেখতে বেশ লাগে—- কেমন যেন ওর শরীরের পরিবর্তন ,একচোখেই পছন্দ হয়ে যায় ।
আমি তো একদিন বলেই ফেললাম জানিস তো আমি যদি ছেলে হতাম তোকে সরাসরি প্রেমের প্রস্তাব দিতাম আর ধুর তোকে কবে তুলে নিয়ে চলে যেতাম !!
আমি ওসব ভয় টয় পাইনা বুঝলি ।
ও বলল কি যে বলিসনা তুই !!!
সব্বাই কি হাসি বলল —এই হল বাপের বেটার মত কথা বলা ।
তখন যৌবন বয়স সবাইকির কত গল্প কত কিছু ,ও যেন কেমন মন মরা হয়ে থাকত ।
যাই হোক বাড়িতে গিয়ে বলিস কেমন না হলে আমি যাবোক্ষন । বাড়িতে গিয়ে দেখে মায়ের শরীর খারাপ ,তার মার গাইনো সমস্যা ছিল আগে থেকেই ,কিন্ত গা করেনি ।এখানে হাসপাতালে দেখিয়ে ছিল ওখানে বলেছে যে যদি সম্ভব হয় তো কলকাতায় গিয়ে দেখান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ..
তার তো সমানে রক্ত গঙ্গা বইছে —কিআর করা বলল তুই তোর বাবার খাবার বানিয়ে ,যা কাজকর্ম আছে কর। পাশের বাড়ির রতনের মাকে ছেলের কাছে পাঠিয়েছি ,তোর বৌদি আসবে দেখি কি হয় ..
ও তখন বলল ঠিক আছে ,চোখের কোণে জল গড়িয়ে আসছে এত হই- হুল্লোড় করে এসে এ অবস্থা!
ঠাকুর আমার কপালে কি আছে কে জানে বলে কাঁদতে কাঁদতে কাজ করতে লাগল ।
এদিকে তার বড়দিদি কে খবর পাঠিয়ে দিয়েছে পাড়ার কাকে দিয়ে সে পাশেই থাকে।
একটু বাদে এসে বলল, কি হয়েছে তোমার ?
আমি তো তোমার জামাই কে খেতে দিয়ে এলাম আজ দোকান থেকে দেরী করে এসেছে।
বড় মেয়ে আসাতে বাপ ও বিছানা ছেড়ে উঠে এসে বলল ও বুড়োন এয়েছিস দেখ কি করবি ….
হ্যাঁ করতে তো হবে ,আমি তো ভেবেছিলাম আজ ওবাড়ি যাবো।
ওবাড়ি মানে শহরে দাদার বাড়ি তা ভালোই হলো বৌদি যখন আসছে কথা বলি …
তার বাপ বললো, হ্যাঁ রে তোদের তরকারীর লিস্ট টা দিস।
ওইতো কাল দোকানের ছেলেটা যাবে ও নিয়ে যাবে ।
কচুটা কেমন ছিল রে ?
হ্যাঁ খুব ভালো ..
মা বললো মাছ রান্না আছে বুলেট কে নিয়ে রাতে খাস জ্যান্ত মাছ ও ভালো খায়। টুকি দিদি কে দুধ গরম করে দে খেয়ে নিক আর শীতের ছোট বেলা তোর ভোম্বলদার জন্য ছানাটা করে দে খেয়ে দোকানে যেতে পারবে ।
বাবা বললো টুকে আমার জল গরমটাও করিস …
বাপ সারা বছর জলগরম খায় ।
দিদি বললো কি রে তোর কি হয়েছে ?
মুখটা ভার ….
অমনি মা বলে উঠলো হবেনা —কাজের কথা বলা হয়েছে না ওই জন্য! এখন ওনার ধিঙ্গিপানা বেড়েছে ।
সব বন্ধু জুটেছে ওই যে ঐ মেয়েটা ডানপিটে সব সময় ছেলেদের জামা কাপড়ের পরে স্কুটার চলে ওইই বড়লোকের মেয়ে তো তাই ফুটানি !
ওনার সাথে মিশেই তো এমন ধারা,তার নয় বাপের পয়সা আছে তাতে তোর কি?
ও তো সেদিন এসেছিল বললো জেঠিমা ওকে গানের স্কুলে যেতে দিচ্ছোনা,ও কত ভালো গান করে ।
এখন নিজে বলতে পারে না ওকে দিয়ে বলায় শয়তান একখানা ।
আমি ও বলেছি আমার পক্ষে মাইনে দেওয়া সম্ভব না রে …
তোমার বাবার পয়সা আছে তুমি ওসব করো ।বাপ বললো মগের মুল্লুক যা বলবে তাই করতে হবে!! এই তো বাড়ি এয়েছি কখন তোর মা শুয়ে আছে এসে কফি করে খেলাম ,গরমজল করা নেই ও দেখে কিছু…..! আমার কোন কামটা করে বল দেখিনি ?
দিদি বলল তুই কলেজে গেছিলি ?
বললো হ্যাঁ ..
তোর ছুটি পড়েনি?
আজ লাস্ট ছিল আর লাইব্রেরী থেকে বই আনলাম, একটা অনিমার থেকে নিয়ে এলাম এগুলো তো কিনে দেবেনা ।
ওকে মা সবসময় যাতা বলে ।ওদিকে সুমিও কতভাবে আমায় সাহায্য করে বই এবং আলাদা করে সব দিয়ে আর এক মাস্টারের কাছে পড়ে সেগুলো ও আমাকে দেয় ।কত সময় খাতা কিনতে না পারলে অনিমা দেয়। সুমি তো প্রায় সবাইকেই অসুবিধায় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।
ওর ঠাকুমা গেলে কত আদর করে কত কিছু বানায় আমার জন্য রেখে দেয় ।ওর মা বাবা ও আমাকে বলে কোন অসুবিধা হলে সুমিকে বলবি পড়াশুনায় তোর এত আগ্ৰহ কেমন ।
ওরাই ওর মাথা খেয়েছে বাপ বললো …!
এখন এখানে মন টেকে না বাবুর দোতলা বাড়িতে গিয়ে কারেন্টের আলোয় পড়তে হয় ।
এখানে হ্যারিকেনের আলোয় ওনার পোষায় না মা বললো দাঁড়া আজ ছেলে এলে সব বলবো ওর গুনপনার কথা ।
তখন টুকি মুখ খুললো যে তুমি তো কখনও ভালো ব্যবহার করো না মা ?এখন তো তুমি আমার সাথে সবসময় খারাপ ব্যবহার করো আর কত গলি দাও ।
আমি কি কিছু করিনা? বলতেই পারতে আর পড়াতে পারবো না মিটে যেত সব ।
তুমি নিজের অত্যাচারের শোধ আমার সাথে নিচ্ছো,তুমি ও তো একটা মেয়ে কি করে বলো আমাকে এসব ?
শুধু ওকে দিয়ে একে দিয়ে তুলনা দাও ।
জন্মানোর পর গলা টিপে মেরে ফেলোনি কেন বলো?
তোমার ওপর সবাই দাসীর মতো ব্যবহার করতো তাই তুমিও চাও আমাকে দাসীর মতো কাজ করাতে—– বলছে আর কাঁদছে ।
এমন সময় বুলি এলো বললো, ও বৌদি চুপ করোনা গো ওতো এখন মণিমেলায় ও যায়না তুমি তো প্রায় যাও টাউনে।
ও বলে সন্ধ্যা দেবো পুজো করতে হবে।
তুই আর বলিস না …..ও মাগী বড় জাহাবেজে হয়ে উঠেছে ।
এর মধ্যেই দাদা এল বাইক নিয়ে —-বড় বোনকে দেখে বললো ও তুই ও এসেছিস ?হ্যাঁ
এই তো শুনে এলাম। কলকাতায় যাবে কার বাড়ি ?বুলি বলে উঠলো কেন তোমার মেজো মেয়ে বুলার কলকাতায় বাড়ি? শুনেছি ওরা খুব বড়োলোক আর ওর বর মস্ত অফিসার তোমার বিপদের সময় রাখবে না !!ওর দাদা বললো তুই চুপ কর যা বুঝিস না কথা বলিস না ।
বুলির মাও এল বললো, বৌমা তোমার ছোট বোনের বাসা আছে না? ওখানে যেতে পার তো …..
ওর দাদা বললো আমার পক্ষে ব্যবসা ফেলে তো যাওয়া সম্ভব নয় ।
দেখি কি করি মাসির কাছে চিঠি লিখে দিয়ে লোক দিয়ে পাঠিয়ে দিল সবাই আলোচনা করে।
মা বললো দেখ বাবা টুকি বড্ড বার বেড়েছে বড় চোপা কথায় কথায় কথা শোনায় যেই না বলা অমনি যৌবন বয়সের মেয়েটাকে সামনে একটা কাঠ ছিল তাই দিয়ে মারতে লাগল!!!
বাপ বললো বড় বেড়েছে এটাই ওর উচিৎ শিক্ষা। বুলির মা গিয়ে হাত পা ধরে বলে মেয়ে মানুষ ওরকম এলোপাথাড়ি মারে কেউ !
কই আমি তো দেখিনা কোন সময় ওকে খারাপ কথা বলতে ।
এর মধ্যে বুলির বড়দা এল বললো এটা কি করছিস? ওরা ছেলে মানুষ বুলির সাথেই তো থাকে বল —এই তো বয়েসে তো ওরা একটু আনন্দ করবে না তুইই বল দেখি ।
এই তো টাকার জন্য বুলিক পড়াতেই পারলাম না ..
আমাদের দুঃখ হয় না বলতো!!
আমাদের মণিদিদি আছে ও অনেক করে রে।
দিদি বলে উঠলো— মা শোনো আমাদের ছানা টানা করতে হবে না আর আমাদের জন্য মাছরান্নাও করবে না ।
তোমরা এখন তোমাদেরটা ভাবো ।
বুলির মা ও দাদা আর বুলি টুকিকে ধরে নিয়ে গেল ।
টুকির তো হেঁচকি উঠে কি অবস্থা !!
ওরা সবাই বলছে ঈস এভাবে কেউ মারে এত বড় মেয়েকে!!
তাড়াতাড়ি করে কেটে যাওয়া জায়গায় ডেটল দিয়ে পরিষ্কার করে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে ।
করুণার মা বলছে ওই দেখেন ঘাড়ের পেছন দিয়ে কত রক্ত বেরোচ্ছে !!!
চেপে ধর তুলো দিয়ে বুলির বৌদি কতগুলো গেঁদা ফুলের পাতা চটকে চেপে ধরলো অমনি কি চিৎকার টুকির…. দেখা যাচ্ছিল না ..
বুলির মা তো কেঁদেই ফেললো, বলে ওরে ঘরে নে গিয়ে শুইয়ে দে বড় বৌ যে কি ব্যবহার করে ওর সাথে নিজের পেটের মেয়ে আহারে!!!
ওর আর একজন দাদা বললো, দেখ এখন বিপদের সময় ওরা কি বললো দেখে লাভ নেই চলো ওকে আমরা হাসপাতালে নিয়ে যাই দত্তদা আছে সব ব্যবস্থা করে দেবে ।
পাড়ার লোকে তো ছি ছি করতে লাগল ..
মুরোদ নেই মেয়ে মানুষ করার তার ওপর এসব!
তার বাপের গুনের শেষ নেই জানো অন্য মেয়েমানুষের সঙ্গে ওর বাপের সম্পর্ক আছে গো….
দেখোনা রাতে বেরোয়।নারায়ণের মা বললো আমরা জানি গো জানি ……
ওর জম্মা ছেলেও আছে ছ্যাঁ ছ্যাঁ ধম্মেও সইবে না । হাসপাতাল থেকে নিয়ে এসে ওদের বাড়িতেই আছে ।
ওর বৌদি এসেছে ,বড় বোন সব বসেছে—-বৌদি বলছে ও এরকম করে আমাদের ওপরে থাকে ডলি পলি কত কাজ করে ,ভাইদেরকে যত্ন করে ,মেশিনে সায়া ব্লাউজ ডজন ডজন করে ফেলে, পয়সার কাজও করে আবার ঘরের সব কাজ করে।
কলকাতা থেকে দাদারা এলে ঠাকুরের মতো যত্ন করে ।মেয়ে ছেলে মানুষ অত লেখা পড়ার কি দরকার !!
সেই তো বিঁয়ে দিতে হবে ভোগান্তি তো আমাদের, পাড়ার লোক করবে ?
এই সব আলোচনা করছে ….
বলি কি কলেজে যাওয়া বন্ধ করেন ,আপনে কলকাতায় গেলে তো ওকেই করতে হবে ।আপনেরে বলে কে বলছে যে সোনার দোকানের ছেলেটার সঙ্গে বিঁয়ে দিতে?
আমাকে ওই ছেলে নিজেই যেচে বলেছিল যে কিছু লাগবেনা বিঁয়ের খরচ যা সব আমার ,সোনা তো আমার নিজের এছাড়া সবই আমি দেব আপনাদের কিছু লাগবে না ।
এর থেকে কত ভালো ছেলে আশা করেন !
পয়সা ভালোই করেছে ,বাড়ি করেছে দোতলা —-ওর বাবা দুই বিঁয়ে আগের পক্ষের দুই ভাই আর দিদি ।
দিদির তো বিঁয়ে হয়ে গেছে ভাইরা আলাদা আগের পক্ষের মা তো মরে গেছে ,বাবা প্রসকোয়ার্টারে যেতে যেতে বেটির সাথে ভাব হয়েছিল তার পরে ঘরে নিয়ে এসে উঠিয়েছে।শুনেছি উনি নাকি খুব ভালো ও এই পক্ষের ওর নাম শংকর এমন কিছু খারাপ না দেখতে ,এই কি একটু বেটে ..
পয়সা থাকলে সব হয় ,পয়সাই আসল ।তবে বলছি এই মেয়ে নিয়ে ভুগতে হবে আপনাকে ।বাপ বললো বাড়াবাড়ি করলে কেটে বস্তায় ভরে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেবো কাক পক্ষীতে টের ও পাবে না ..
আমার মনে হয় ওর কিছু আছে নাহলে এত পয়সা তাও রাজী হচ্ছে না !
চরিত্র ঠিক আছে নাকি দেখেন গে,
কার কাছে কিসের কথা!! যার বাপের চরিত্রের ঠিক নেই তার এই ভালো মেয়েটার নামে কি কথার ছিরি বাপু !
মেয়েকে ভাত দিতে পারেনা তাদের বড় বড় কথা …
পাড়ার লোক বললো আমরা গরীব হতে পারি তাই বলে মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার কখনও করিনা।
জন্ম দিয়ে তাকে পৃথিবীতে এনে এই অবস্থা ,বলি তখন খুব সুখ লেগেছিল যত্তসব ,বলি মেয়েতো উড়ে আসেনি …..!
এদিকে স্বামী যে এত অত্যাচার করেছে বল গে ধরে খেতে আসবে ।শুনলাম কোন মনসা বাড়ি যায় স্বামী কে সৎপথে ফেরানোর জন্য ..হুঁ তালেই হয়েছে ,কত দেখলাম। ও পুরুষ মানুষ ফেরার নয় গো ..
চোরের আবার গেরস্থ সাজা !!সে গুড়ে বালি ..
বেঁচে তো থাকবো ,মরবো তো না দেখবোক্ষন চলি গো কমলাবৌ…….