গারো পাহাড়ের গদ্যে জিয়াউল হক

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবু বকর সিদ্দিক

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবু বকর সিদ্দিক, এফ.এফ. ভারতীয় তালিকা নম্বর-১৯৫৬৯, গেজেট নম্বর-ফটিকছড়ি-৩৪৭৬, লাল মুক্তিবার্তা নম্বর-০২০৩০৩০৯৫২, এমআইএস নম্বর-, মোবাইল নম্বর-০১৮১৮০৮৯৪১৪, পিতা ঃ আলী আহমেদ, মাতাঃ আমিনা খাতুন, স্থায়ী ঠিকানা ঃ গ্রাম ও ডাকঘর ঃ ধর্মপুর, উপজেলা ঃ ফটিকছড়ি, জেলা ঃ চট্টগ্রাম। বর্তমান ঠিকানা ঃ মৌসুমী আবাসিক এলাকা, ডিসি রোড, পশ্চিম বাকুলিয়া, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন চট্টগ্রাম।
২ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে আবু বকর সিদ্দিক ছিলেন বাবা মায়ের ২য় সন্তান। ১৯৭১ সালে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও ছাত্র রাজনীতির সাতে জড়িত ছিলেন। তিনি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ সম্পাদক ও ধর্মপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাটা সভাপতি ছিলেন। ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার সুবাদে তিনি ১৯৬৯ সালের স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার বিরোধী গণআন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭০ সালের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ নির্বাচনের সময় তিনি তাদের এলাকার আওয়ামী লীগ মনোনীত এমপিএ প্রাথর্ী মির্জা আবু মনসুর ও এমএনএ প্রাথী ফজলুল হক বিএসসির পক্ষ্যে নির্বাচনী প্রচার কাজে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করার পরও তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে সময়ক্ষেপনের নীতি গ্রহণ করেন। প্রেসিডেন্টের এই একচোখা নীতির প্রতিবাদে সারা বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমে এসে প্রচন্ড গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। সরকারের বিরুদ্ধে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন। দেশের শাসন ব্যাবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশ মোতাবেকই তখন দেশ পরিচালিত হচ্ছিল। দেশের এহেন অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক নীতিনিধার্রণী ভাষণ প্রদান করেন। তিনি তার ভাষণে যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুকে মোকাবেলা করার আহবান জানানোর সাথে সাথে এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম বলে ঘোষণা প্রদান করেন। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণার পর থেকেই সারা বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্রনেতা আবু বকর সিদ্দিক তখন গ্রামে গ্রামে ঘুরে যুবক ছেলেদের স্বাধীনতার স্বপক্ষে সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা সারা বাংলাদেশের উপর আক্রমণ করে মানুষ হত্যাসহ মানুষের বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ এবং বিশেষ করে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অমানুসিক নির্যাতন শুরু করে। ্তখন আবু বকর সিদ্দিকসহ এলাকার যুবক ছেলেরা হিন্দু সম্প্রদায়দের আশ্রয় এবং যারা শরনাথর্ী হিসাবে ভারতের পথে যাত্রা শুরু করে তাদের সাহায্য ও সহযোগিতা করতে থাকেন। দিনে দিনে শত্রুসেনাদের অত্যাচার ও নির্যাতন বৃদ্ধি পেতে থাকে। আবু বকর সিদ্দিক তখন প্রত্যন্ত গ্রামের বনে জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতে শুরু করেন। এরই মধ্যে বিশ্বাসঘাতক বাঙালিদের সহযোগিতায় শত্রুসেনারা রাজাকার বাহিনী গঠন করার পর জনগনের উপর অত্যাচার ও নির্যতন আরও বৃদ্ধি পায়। তখন যুবক ছেলেদের পক্ষে দেশে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তাই আগষ্ট মাসের মাঝের দিকে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের উদ্দেশ্যে আবু বকর সিদ্দিক দেশ ছেড়ে ভারতের পথে যাত্রা করেন। তারপর ফেনী নদী পার হয়ে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের হরিণা ইয়ুথ ক্যাম্পে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেন।
হরিণাতে ৭ দিন অবস্থান করার মুক্তিযুদ্ধের উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য আবু বকর সিদ্দিকসহ অন্যদের বাছাই করে একই রাজ্যের পালাটোনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়। প্রশিক্ষণ কালীন সময়ে আত্মীয় স্বজনহীন ভিন দেশে নিজেদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় তাদের মন সব সময় উতলা হয়ে থাকতো। তারপরও কঠোর পরিশ্রম করে ৩০ দিনের প্রশিক্ষণ শেষ করে তারা আবার হরিণা অপারেশন ক্যাম্পে ফিরে আসেন। সেখানে আসার পর আবু বকর সিদ্দিকের নেতৃত্বে ৫১ জন মুক্তিযোদ্ধার একটা প্লাটুন গঠন করে তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রদান করা হয়। এই প্লাটুনকে ৩টি সেকসনে ভাগ করে অক্টোবর মাসের শেষের দিকে তাদের বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রেরণ করা হয়। বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে ফটিকছড়ির পাহাড়ি এলাকা পেরিয়ে আবু বকররা নিজ গ্রাম ধর্মপুরে এসে সেল্টার গ্রহণ করেন।
খংখাইয়া খালের পাড়ের যুদ্ধ ঃ খংখাইয়া খালের উত্তর পাড়ে ফটিকছড়ি থানা আর দক্ষিণ পাড়ে রাউজান থানা অবস্থিত। খালের উত্তর পাশে বেঙ্গল রেজিমেন্টসহ রেশ কয়েকটি মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ অবস্থান করছিল। খালের দক্ষিণ পাড়ের রাউজান থানার মধ্যে ছিল পাকিস্তানি সেনাদের অবস্থান। ডিসেম্বর মাসের ১২ তারিখে পাকিস্তানি সেনারা মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করে। তখন উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। আবু বকর সিদ্দিকরা তখন সেখান থেকে ২ মাইল দূরে ধর্মপুরে অবস্থান করছিল। এই খবর পেয়েই তারা সন্মুখে অগ্রসর হয়ে শত্রুসেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত যুদ্ধ চলার পর প্রচুর জানমালের ক্ষতি স্বীকার করে শত্রুরা পিছু হয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে মাত্র ২ জন মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়। তার মাত্র ৪ দিন পর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। আবু বকর সিদ্দিকদের মতো সাহসী যোদ্ধারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল বলেই আজ আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসাবে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছি।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।