গারো পাহাড়ের গদ্যে জিয়াউল হক

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ খলিলুর রহমান
আমি মোঃ খলিলুর রহমান, ইপিআর নম্বর-১৬২৯৭, ইপিআর গেজেট নম্বর-২৯৪, এমআইএস নম্বর – ০১৮৮০০০১৪১৫,
মোবাইল নম্বর – ০১৮২৭৭৯৬২৭৭
পিতা – জামাত আলী আকন্দ, মাতা – জমিলা খাতুন
স্থায়ী ঠিকানা – গ্রাম: কুঠি সাতবাড়িয়া, ডাকঘর: খাস সাতবাড়িয়া, উপজেলা: শাহজাদপুর, জেলা: সিরাজগঞ্জ। বর্তমান ঠিকানা: ঐ।
১৯৬৮ সালে আমি ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসে সৈনিক পদে ভর্তি হই। পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তরে ৭ মাস প্রশিক্ষণ শেষে আমি চট্টগ্রাম হালিশহর ৫ নম্বর ইপিআর সেক্টরে চাকুরীতে যোগদান করি। ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত আমি সেখানেই কর্মরত ছিলাম। আমাদের সেক্টর এ্যাডজুট্যান্ট ছিলেন তৎকালীন ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে খুব ভালোবাসতেন এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলতেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের রাতে পাকসেনারার যখন চট্টগ্রাম ইবিআরসিতে নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ পরিচালনা করে, তখন আমরা শত্রুদের বিরুদ্ধে সর্বাত্বক যুদ্ধে লিপ্ত হই। হালিশহর ও পোর্ট এলাকায় ৭/৮ দিন যুদ্ধ করার পর এপ্রিল মাসের ৪/৫ তারিখে আমরা চট্টগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র এলাকায় চলে আসি। কিন্তু পাকিস্তান সেনাদের বিমান ও ভারী কামানের গোলাবর্ষণের মুখে টিকতে না পেরে আমরা সেখান থেকে পিছু হটে পার্বত্য এলাকার চন্দ্রঘোনা থেকে লঞ্চযোগে খাগড়াছড়ি থানা এলাকায় গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করি। খাগড়াছড়ি থানার উল্টাদিকের পাহাড়ে ছিল পাকসেনাদের অবস্থান। সেখান থেকে তারা প্রতিদিনই আমাদের উপর কামানের গোলা ও মেসিনগানের গুলিবর্ষণ করতে থাকে। ৭ দিন যুদ্ধ চলার পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে আমরা রামগড়ে পিছু হটে আসি। শত্রুর ভারী অস্ত্রের প্রচন্ড গোলা বর্ষণের মুখে সেখানেও টিকতে না পেরে ফেনী নদী পার হয়ে আমরা ভারতের সাব্রুম থানা এলাকায় গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হলাম।
সাব্রুম থেকে আমাদের ত্রিপুরা রাজ্যের ছোট হরিণায় প্রেরণ করা হয়। সেখানে ক্যাম্প স্থাপন করে ২০ দিন অবস্থানের পর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে ক্যাপ্টেন সামসুল আলমের নেতৃত্বে আমাদের বাংলাদেশের ভেতরে তৎকালীন নোয়াখালী জেলার চাঁদগাজী ডিফেন্সে প্রেরণ করা হয়। চাঁদগাজী থেকে ১০ মাইল দূরে ফেনীতে ছিল পাকসেনাদের অবস্থান। প্রায় প্রতিরাতেই আমরা সন্মুখে অগ্রসর হয়ে ফেনীর শত্রুঘাঁটিতে মটার্রের গোলাবর্ষণ করে আবার নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে আসতাম।
চাঁদগাজীর যুদ্ধ ঃ ক্যাপ্টেন সামসুল আলমের নেতৃত্বে আমরা এক কোম্পানি মুক্তিযোদ্ধা চাঁদগাজী ডিফেন্সে অবস্থান করছিলাম। আমাদের ডাইনে ও বাঁয়ে আরও দুটি মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানী অবস্থান করছিল। আগষ্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে শত্রুসেনারা ফেনী থেকে হেলিকপ্টার ও ট্যাংকবহর নিয়ে আমাদের উপর প্রচন্ড আক্রমন পরিচালনা করে। শত্রুর প্রবল আক্রমণের মুখে দিশেহারা হয়ে যখন আমরা পিছু হটার পথ খুজছিলাম তখন ভারতীয় আর্টিলারী বাহিনী কামানের গোলা বর্ষণ করে আমাদের পিছু হটতে সাহায্য করে। এই সুযোগে আমরা আবার ভারত সীমান্তের মধ্যে প্রবেশ করি।
ভারত সীমান্তের ভেতরে আসার পর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে হাবিলদার আব্দুল লতিফ পাটোয়ারীর নেতৃত্বে আমাদের ১১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে ভারতের আগরতলার নিকট গুতমা বিএসএফ ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়। সেখান থেকে আমরা মাঝেমাঝেই বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করে শত্রুসেনাদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করে আবার নিজেদের ক্যাম্পে ফিরে আসতাম। ডিসেম্বর মাসে নিয়মিত যুদ্ধ শুরু হলে ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে আমরা মিরেরশরাই, ভাঠিয়ারী ও আনোয়ারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার পর বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। যে দেশের স্বাধীন তার জন্য আমরা যুদ্ধ করেছি, সেই বাংলাদেশের প্রতিটা নাগরিককে দেশের প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শণ করা উচিৎ বলে আমি মনে করি।