গারো পাহাড়ের গদ্যে জিয়াউল হক

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আকরাম হোসেন

বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আকরাম হোসেন, বিএলএফ গেজেট নম্বর-ত্রিশাস-১২৫৩, লাল মুক্তিবার্তা নম্বর-০১১৫০৫০২৯৫, এমআইএস নম্বর-০১৬১০০০৩৬৪৬, মোবাইল নম্বর-০১৭২৬৫৫৯৪৯৯, পিতা ঃ আজগর আলী খান, মাতা ঃ মেহেরুন্নেছা, স্থায়ী ঠিকানা ঃ গ্রাম ও ডাকঘর ঃ ধানিখোলা, উপজেলা ঃ ত্রিশাল, জেলা ঃ ময়মনসিংহ। বর্তমান ঠিকানা ঃ ১/ক, লিচু বাগান, আকুয়া মাদ্রাসা কোয়ার্টার, ময়মনসিংহ।
বাবা মায়ের ৪ সন্তানের মধ্যে আকরাম হোসেন -। ১৯৭১ সালে তিনি ময়মনসিংহ শহরের আলমগীর মনসুর(মিন্টু) মেমোরিয়াল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি যেমন ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন, তেমনি ফুটবল ও হাডুডু ছিল তার প্রিয় খেলা। ১৯৬৯ সালে হাই স্কুলে পড়াকালীন সময়ের তিনি স্বৈরাচারী আইয়ুব সরকার বিরোধী গণআন্দোলনে সক্রিয় ভাবে অংশ গ্রহণ করেন। সেই আন্দোলনের জোয়ারে আইয়ুব খান পদত্যাগ করলে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় এসে গণতান্ত্রিক ভাবে পকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ওয়াদা করেন। সেই ওয়াদা মোতাবেক ১৯৭০ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনের সময় আকমরাম হোসেন তাদের এলাকার আওয়ামী লীগ মনোনীত এমএনএ প্রাথর্ী অধ্যাপক নজরুল ইসলামের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করা সত্বেও তাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে ইয়াহিয়া খান সময়ক্ষেপনের নীতি গ্রহণ করেন। শুধু তাই না, দেরিতে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহবান করার পর ১৯৭১ সালের ১ মার্চ আবার তা স্থগিত ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণায় বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নেমে এসে সরকারের বিরুদ্ধে প্রচন্ড গণআন্দোলন গড়ে তোলেন। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানের এক বিশাল জনসভায় তার নীতি নিধার্রণী ভাষণ প্রদান করেন। তিনি তার ভাষণে এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম বলে ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে বাংলাদেশের মানুষের মনে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন জাগ্রত হয়ে উঠে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা অনুযায়ী ধানিখোলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সংগ্রাম কমিটি গঠন হলে সেই কমিটির সদস্য হিসাবে আকরাম হোসেন গ্রামে গ্রামে ঘুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষে প্রচার কাজ শুরু করে দেন।
২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা সারা বাংলাদেশের উপর আক্রমণ করে নির্বিচারে মানুষ হত্যা এবং মানুষের বাড়িঘরে আগুন দিয়ে পুড়াতে শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনেই আকরাম হোসেন যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করেছিলেন। শত্রসেনারা যখন নিরস্ত্র নিরীহ বাঙালিদের হত্যা করা শুরু করলো, তখন তিনি কিছুতেই নিজেকে ধরে রাখতে পারছিলেন না। কিন্তু তখনও তার জানা ছিল না, কোথায় গেলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করা যায়। ইতোমধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র চালু হওয়ার পর তিনি জানতে পারেন যে ভারতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। তখনও তার জানা ছিল না, কোন পথে কি ভাবে ভারতে যাওয়া যায়। এসব খোঁজ নেওয়ার পর জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার নালিতাবাড়ি সীমান্ত পার হয়ে ভারতের ডালু ইয়ুথ ক্যাম্পে গিয়ে ভর্তি হলেন। সেখানে অল্প কিছু দিন অবস্থান করার পর মুজিব বাহিনীর উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য বাছাই করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ট্রাকযোগে আকরাম হোসেনদের প্রথমে জলপাইগুড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর পাশের বাগডোগড়া বিমান বন্দর থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর কাগ্রো বিমান যোগে তাদের উত্তর প্রদেশের শাহরানপুর বিমান বন্দর হয়ে দার্জিলিং জেলার টান্ডুয়া প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ৪৫ দিন প্রশিক্ষণ শেষে শাহরানপুর বাগডোগরা বিমান বন্দর হয়ে তাদের আসাম রাজ্যের গোহাটিতে ফিরিয়ে আনা হয়।
সেখান থেকে তাদের ছেড়াপাড়া ট্রানজিট ক্যাম্পে প্রেরণ করা হয়। ছেড়াপাড়া ক্যাম্পে অবস্থান কালে আকরাম হোসেনরা রাজনৈতিক নেতাদের অধীন পলিটিক্যাল ও বঙ্গবন্ধুর জীবনের উপর ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন । তারপর সেখান থেকে মঞ্জুরুল হক মঞ্জুর নেতৃত্বে ফফুলবাড়ি ও ত্রিশাল থানার ১১জন মুক্তিযোদ্ধার একটা গ্রুপ গঠন করে আকরাম হোসেনদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ প্রদান করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধাদের ৬টি গ্রুপকে একত্রে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রেরণ করা হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ময়মনসিংহ জেলার পূর্বধলা সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে ফুলবাড়ি থানার পাহাড়ি এলাকায় সেল্টার গ্রহণ করেন।
নাওভাংগা ও ভাংনামারি চরের যুদ্ধ ঃ আকরাম হোসেনদের মুক্তিযোদ্ধা দলটি তখন ময়মনসিংহ শহরের পাশের গৌরিপুর থানার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ মাইল পূর্বে একটি গ্রামে অবস্থান করছিল। সেপ্টেম্বর মাসের মাঝের দিকে একদিন বিকেল ৩টার সময় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্প থেকে শত্রুসেনারা এসে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর আক্রমণ শুরু করে। শত্রুদের জানা ছিল না যে, সেখানে ৬ গ্রুপের ৬০ জন মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছে। তারপর উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। প্রায় ৫ ঘন্টা অবিরাম যুদ্ধ চলার পর অনেক জানমালের ক্ষতি স্বীকার পরে শত্রুসেনারা পিছু হটে যেতে বাধ্য হয়। এই যুদ্ধে ৫০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। তারপর এই মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপটি ফুলবাড়ি থানার পোড়াবাড়ি বাজার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করলে সেখান থেকে ৬০ জন রাজাকার অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। তাছাড়াও তারা আছিম বাজার, ফান্দালিয়া বাজার ও জনিখোলা বাজার রাজাকার ক্যাম্প আক্রমণ করে তাদের পরাজিত করতে সক্ষম হন । এই সব ক্যাম্প থেকে আরও ৮৫ জন রাজাকার অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে। আকরাম হোসেনদের মতো সাহসী যোদ্ধারা জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে আমাদের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন। তাইতো আমাদের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যথাযথ সম্মান দেখানো উচিৎ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।