কবি, অনুগল্পাকার, প্রচ্ছদশিল্পী হিসেবে শিল্পাঞ্চলে খ্যাত। দেশ, নন্দন, তথ্য কেন্দ্র ইত্যাদি ছাড়াও অনেক ছোট পত্রিকায় নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়।
ভালবাসা, শুধু ভালবাসা
ভোরবেলা টোকা পড়ল দরজায়।আজকাল আর উঠতে ইচ্ছে করে না।মনে হয় না উঠে দরজা খুলে দেখি।কেউ তো আসার নেই!চিৎকার করে বলে উঠি —কে!!
কোনো উত্তর নেই।তবে কি মনের ভুল!কেউ কি আসার ছিল!বিছানা ছেড়ে উঠে যাই দরজার দিকে।দরজা খুলতেই ফাঁক দিয়ে একফালি রোদ্দুর মুখে এসে পড়ে।অবাক হই।সত্যিই তো কতদিন ভোরের আকাশ দেখা হয়নি তো!
ভোরের সূর্য হাসির আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে। শিশিরস্নাত সামান্য ঘাস. ও মাথা তুলে জানান দিচ্ছে —ভালো আছি।
সকালবেলা মন কেমন ভাললাগায় ভরে ওঠে।বহুদিন পর বাড়ির বাইরে।সকালবেলার মিঠে কড়া রোদ আলিঙ্গন করে সম্ভাষণ জানায়।রেডিওতে ঠিক এই সময় বাজছে —“আনন্দ ধারা বহিছে ভুবনে…”।
এমনই কোনো দিনে লিখেছিলাম হয়তো–
তুমিই বলো–
এখুনি কি চলে যাওয়া যায়!
সোনালী রোদ ঝিকমিক আকাশ
এমন বোগেনভোলিয়া আর চন্দ্রমল্লিকা সকাল
যে চন্দ্র মল্লিকা ছিঁড়ে
তুমি মিহি চুলে গুঁজে নিতে…
বলো মেয়ে,এখনই কি যাওয়া উচিত!!
যেদিকে দুচোখ যায় মনে হয় আনন্দ আর আনন্দ।গুরুদেব তাঁর গানের মধ্যে দিয়ে সেই কথাই বারবার বলে গেছেন।এই আনন্দের যেন শেষ নেই।জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত,প্রতিটি বাঁকেই আনন্দের সমাহার।শুধু খুঁজে নিতে হবে।তাকে চিনতে হবে।জানতে হবে।
দুঃখ -কষ্ট-যন্ত্রনা -হতাশা ও থাকবে।হয়ত সাময়িক ভাবে ।অনেকদিন একঘেয়ে কালো মেঘ আর বৃষ্টির পরে সূর্যের দেখা মিলবেই!
আমরা সকলেই আনন্দের খোঁজে পরিব্যাপ্ত।আমরা যাই করি না কেন আনন্দ পাওয়ার জন্যই করি।আচ্ছা যারা ঘৃণা,বিদ্বেষ,জখম ছড়ায়–তারা কি আনন্দ পায়!নিশ্চই পায় না।ঘৃণা থেকে আরও ঘৃণা ,হিংসা থেকে আরও হিংসা ছড়িয়ে যায়।ঘৃণা হিংসা নিয়েই বহুদিন আগে একটি লেখা লিখেছিলাম–
“একজন বন্দুক হাতে তুলে দিয়ে বল্ল
খুন করো —স্বপ্ন নাকি!!
না-না শুধু স্বপ্ন নয়,আনন্দ খুঁজে নেওয়া
যাদের প্রতি আমার তীব্র ঘৃণা!
খুন করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি।
ঘৃণা, বিদ্বেষ থেকে আরো ঘৃণা—
ঘর্মাক্ত শরীরে নিজের মুখোমুখি
গভীর রাতে প্রশ্ন চিহ্নের সামনে দাঁড়াই
তবে কি আত্মপ্রতারণা!তার বিকল্পই বা কি!
কে যেন আড়াল থেকে বলে ওঠে —
ভালবাসা,শুধু ভালবাসা…”
ভালবাসা শুধু ভালবাসা।ভালবাসাই বাঁচিয়ে রাখে।ভালবাসায় কত আনন্দ! ভালবাসি আনন্দ পাই বলে।কিন্তু কেউ কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে কাউকে ব্যথা দিয়ে,ঘৃণা করে সে খুব আনন্দ পেয়েছে!!
তাই ভালোবাসি।সমস্ত চরাচর কে অন্তর দিয়ে ভালোবাসি।অথচ একথা বোঝাতে পারি না।ভাষা দিয়ে কি সব বোঝানো যায়!একবুক ভালবাসা নিয়ে ঘুরে বেড়াই।ভালবাসার তরঙ্গ ছড়িয়ে দিই দিকবিদিকে।আশেপাশে প্রতিবেশী,পরিচিত-অপরিচিত মানুষজন,গাছপালা ,
উড়ে আসা পায়রা -চড়ুই-শালিক কিংবা উঠোনের আম-কাঁঠাল -পেয়ারা-লতাপাতা-তুলসী মঞ্চ,সবখানেতেই
ছোঁয়া দিয়ে যাই।মনে মনে কতবার বলেছি ভালোবাসি।কখনো উদায়মান সূর্যের দিকে তাকিয়ে।কখনো অস্তগামী সূর্যের ব্যাকগ্রাউন্ড এ পাখিদের নীড়ে ফেরার দৃশ্য দেখে।সারাদিন ধরে এ দেখা যেন ফুরোয় না।দিনের বেলা মনের মেমোরিতে লোড করে রাখি।রাতে বাড়ি ফিরে এডিট করি আর আলগোছে স্মৃতির মণিকোঠায় জমিয়ে রাখি….