দূর দূর দূর, যতদূরে যায় চোখ পাহাড়।একগাছি দড়ির মত তার মাঝে পাকিয়ে পাকিয়ে উঠেছে পথ।পাইন আর ফার্ণ। মাঝে মাঝে জলপরী নেমে এসেছে কোথা থেকে যেন।এখন সোনার আলো ছড়িয়ে পড়ছে সারা উপত্যকায়। এটা ভূটান পাহাড়ের কাছে ছোট্ট একটি জনপদ। রাজবংশী আর লেপচা,নেপালি ও টোটো উপজাতির কিছু মানুষ ঘর বেঁধেছে।ছোট্ট জনপদ।সদর থাকা অবশ্য দার্জিলিং। দেবলীনা একমাস হলো এসেছে।হার না জিত। রাজার চাকরিতে সেনাপতি পুত্তলিকা।তবুও দেবলীনা তিরিশ পাতার কারন দর্শানোর পর এখানে নির্বাসিত।মন ভরে প্রকৃতির কোলে শুয়ে আলস্য ভাঙে দেবলীনা।
সমতলের সেই রাত স্মরণীয় হয়ে থাকবেই তার কেরিয়ারে।রজত… রজত না থাকলে আজ এই পাহাড়ের শোভা দেখতে পেত না সুরভিত চায়ের কাপে।
কালিগঞ্জ এ তিনজনকে নেকবরকে দিয়ে মোহিনীমোহন ই হত্যা করিয়েছিল একথা শিবু খবর দেবার পর আজিজ বিশদে গোপন তদন্ত শুরু করে।বেলাগাম চোরাকারবার শশুরবাড়ির সঙ্গে মিলে অনেককাল চলার মধ্যেই ছোটো শালার সঙ্গে বখরা নিয়ে বিবাদ।পুরোনো পার্টির টাকার চাহিদা বাড়ছিল।ফলস্বরূপ চলে গেল ব্লক সভাপতির পদ। দল পাল্টে মোহিনীমোহন চলে আসে ছোটো নবাবগঞ্জ। সবিতা অনেক কিছু দেখে ফেলে,জেনে ফেলে অভিজিতের থেকে সেইসব কথা ডায়রির পাতায়। সবিতা র খুন নেকবরের হাতে নয়।স্বয়ং মোহিনীমোহন। শিশুটি জারজ। তাকেও ভাড়া করা খুনী আসাদুল ছাড়েনি বলা ভাল এও এক প্রতিহিংসা কালিয়াগঞ্জের রথীন সামন্তর। লোকাল পার্টির চানক্য তথা সবিতার বাবা।
আসাদুল ভালোবাসত রেবতীকে। শিশুটি রেবতির কাছে থাকলে হয়ত বেঁচে যেত।কিন্তু আসাদুলের দীর্ঘ কারাবাস ও গার্হস্থ্য নির্যাতন হয়ত বাধ্য করেছিল তাকে আত্মহত্যা করতে।
নেকবরের জেল থেকে বেরোনোর পর মেয়ে পাচারের ঘটনা বাড়ছিল।সে এমনকি পার্টির নির্দেশও অমান্য করতে শুরু করে।
টানা তিন মাস তদন্তের পর সেই রাত বি এস এফের জওয়ান রা সেদিন অদৃশ্য। পুরো অঞ্চল ঘিরে ফেলে নিঃশব্দে পুলিশ।একেবারে সামনে থেকে গুলিতে ঝাঁঝরা করে দিয়েছিল দেবলীনা পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে।সমাজের নোংরা কীটগুলো মৃত্যু র পরেও হতবাক হয়ে চেয়েছিল তার দিকে আর দেবলীনা মুর্মু র কানে ভাসছিল একটি শিশুর কান্না হাসির আওয়াজ।
রজতের ট্রান্সফার হয়েছে মথুরাপুর থানায় প্রোমোশন সহ।
রজতের কথা মনে হতে হতে একঝাঁক মেঘ মুখ ঢেকে দেয় তার।মোবাইলের রিংটোনসহ ,রজত কলিং …
একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মিটিমিটি হাসছেন। বছরখানেক বাদে দেবলীনাকে কলকাতায় নিয়ে আসবেন। সামনের আমলা ও একজন মন্ত্রী।__” ওরা আর কেউ মাথা তুলবে না অলকেশ”
___” সত্যি আপনি …”
কী?– আয়েস করে বসে স্মিত হাসেন তিনি।
–” আপনার সত্যি তুলনা নেই।আমরা আঁচ করতেই পারিনি আপনার নির্দেশেই ….”
কুয়াশা ভেদ করে উঠে আসছে এক বৃদ্ধা রমণী। মুখে অনন্ত বলিরেখা।এক খণ্ড রুটি আর চা।সারাদিন কাজ করে ওরা।ওরা শুধু ওদের পাড়ার নাম জানে।ওদের কোনোদিন কোনো দেশ নেই,অর্থহীন যাপনে নেই কাগজের হেডলাইন আছে শুধু কাজ আর ক্লান্তি র ঘুম।