নিবন্ধে যজ্ঞেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়

ইদানিং ওয়েব সিরিজের দাপটে আমাদের তথাকথিত সিনেমা কেমন ব্যাকবেঞ্চার্স হয়ে পড়েছে। এর মূল কারনই হচ্ছে তাদের অভিনব কনটেন্ট ও পরিবেশনের স্মার্টনেস। ওয়েবের কনটেন্টই হিরো এখানে স্টার পাওয়ারের থেকেও চরিত্রাভিনেতাদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, যার সফলতা আমরা ওয়েভে দেখতেই পাচ্ছি। এই সিরিজগুলো গোটা সিনেমাজগৎকে একটা ঝাঁকুনি দিয়েছে, এই জার্কটা সব মাধ্যমে খুব জরুরি, তবেই কোয়ালিটি জিনিসটা বেরিয়ে আসবে। তবে সবগুলোকেই স্বাদু বলা যাবে এমনটা নয় আর সবগুলো দেখে ওঠাও অসম্ভব।
তারমধ্যে যেগুলো বহুচর্চিত বা ইন্টারনেট ঘেঁটে যাদের র‍্যাংক উপরের দিকে সেগুলোর দিকে কনসেনট্রেট করা।
তবে এগুলো দেখতে দেখতে একটা জিনিস আপনাকে জানান দেবে যে আপনি কতোটা বোকাবাক্সতে সাবালকত্ব অর্জন করেছেন। মুড়িমুড়কির মতো চলে আসা স্মার্টলি স্লাং আর আই ড্রপের মতো ১৫ মিনিট অন্তর বেড সিন যেটা এখন আর বেডরুমে সীমাবদ্ধ নেই তার ডায়মেনশন বেড়ে টেবিল, সোফা, হুইলচেয়ার সর্বত্র বিরাজমান। তবে এই উত্তোলনটা অনেকটা পোলভল্টের সামিল কারন আমাদের শৈশব অনেকটা খুড়িয়ে বড় হয়েছে বেডরুমের দরজাবন্ধে বা লাইট অফে। যেন বিধিসম্মত সতর্কীকরন, এতে কর্তৃপক্ষ কোনো ভাবেই দায়ী নহে। পুরোটাই দর্শকের উপর ছেড়ে দেওয়া, যে যতো কল্পনাপ্রবণ তার ফ্যানটাসির গমন ততো বেশী ও বহুমুখী।
তবে সবচেয়ে যেটা বেশী এলার্মিং সেটা হলো এইসব ওয়েব সিরিজে দেখানো সন্তানের সাথে তার পিতামাতার সম্পর্কের কথা। কয়েকটি জনপ্রিয় সিরিজ যেমন The family man, Patal lok, Criminal Justice, Delhi crime, Special ops, Breathe, Hostages যদিও তাদের মেন প্লট বেশ ইন্টারেস্টিং এবং দর্শককে বেঁধে রাখবে তার ক্লাইমেক্স অবধি। কিন্তু সাথে সাথেই চলতে থাকে এই সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং এগুলোর সবগুলোতেই মূল গল্পের সাথে এটা প্যারালালি চলতে থাকে। যদিও সবগুলোই আলাদা আলাদা প্রোডাকসন হাউস বা পরিচালক কিন্তু মোদ্দা কথা একই, সন্তানের কাছে তার পেরেন্টস্ জাস্ট ইগনোরেবল্। তাদেরকে সম্মান দেওয়ার কোনো প্রশ্নই নেই, পিতামাতা বিশেষত পিতাকে বড় অসহায় দেখাচ্ছে তার স্কুলে পড়া সন্তানের কাছে। যেন তাদের কাছে পেরেন্টস্ কোনো বিলুপ্ত প্রজাতি বা ব্যাকডেটেড ইক্যুয়েপমেন্ট একটি। কিছু ক্ষেত্রে মা এর পজিশন হয় মধ্যস্থতাকারীর, একদিকে স্বামী আর এক দিকে সন্তান।
আর এখন তো টিনএজরাই এই সব সিরিজের মুখ্য দর্শক। গল্পের প্লট মেট্রোসিটির হলেও দর্শক এই যান্ত্রিক যুগে, প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর সব জায়গার। ফলে খুদে দর্শকের অবচেতনে গড়ে উঠছে তাদের পেরেন্টস্ এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ধরন ধারণ। বাস্তবে যে কোনো জীবিকার সাথে জড়িত পিতামাতার এই অসহায় অবস্থা খুবই চিন্তার। সন্তানের কিছুই বুঝতে না চাওয়া, অসহিষ্ণু মনোভাব কোথাও না কোথাও এই লালনকরা হেলদি সম্পর্কের মাপকাঠি লঙ্ঘন করে যাচ্ছে না তো?
আমরা জানি সমাজের প্রতিফলনই উঠে আসে এই সব মাধ্যমে তাহলে কি সত্যিই সমাজ এই অসুস্থ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে আর তারই প্রতিফলন ঘটছে এই সিরিজে। এটা কিন্তু সত্যিই মারাত্মক, সমাজ যে দিকে এগিয়ে বা পিছিয়ে যাচ্ছে। একেই নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি তার মধ্যে যদি সন্তান ও পিতামাতা প্রোটন ইলেকট্রনে ভেঙে যায় তাহলে শেষের সেদিন সত্যিই ভয়ঙ্কর।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।