গল্পতে ইন্দ্রানী ঘোষ

এবার বসন্ত

কুয়াশা থাকছে রোজ সকালে,তারপরই রেশমি সোনালি সুতোর ফোড় তুলে বেরিয়ে পড়ছেন নরম রোদ্দুর কুমার। মেজাজ এখন তাঁর নিচু তারে বাঁধা। সুযোগ বুঝে একদল টিয়া রোজ আসছে সেলি্মপুরের গলিতে, বাসস্টপের কাছে একটা ফ্ল্যাটবাড়ির জানলায় বোধহয় গম বা চালেরগুড়ো খেতে। রিক্সাটা সকালবেলা মোড় ঘুরলেই সবুজ সিম্ফনি শুনি।লাল ঠোঁট বাঁকিয়ে ল্যাজ দুলিয়ে কি অহংকারী ভঙ্গীতে বসে থাকছে নিস্পত্র ধুলোয় ধূসর গাছটাতে। ভাবটা এমন যেন ‘ব্যাস্ততা কাকে দেখাচ্ছ? আমায় দেখ’। ফেরার পথে বাজারের পাশে নিম গাছটাতে হলদে বেনেবউ প্রাণপণ ডাকছে ,ভাবখানা এমন যে আমার হলুদ কালো কাঞ্জিভারামখানাা কেমন মানিয়েছে বল।তা দেখলাম। কিছু বলা হয় নি তেমন। কিছুক্ষণ পর আমার বারান্দার পাশে নিম গাছটায় বসে সে আবার হাঁকডাক জুড়েছে,বাইরে এসে এক ঝলক তাঁকে দেখে শাড়িটা এপ্রিসিএট করতেই হল,না হলে ইশকুলে দেরি হয়ে যায় আর কি। রাস্তায় বেরিয়ে শুনি বৈদ্যুতিক তারের উপর বেজায় চেঁচামেচি, উপরে তাকিয়ে দেখি এই একরত্তি দুর্গা টুনটুনি তাঁর উজ্জ্বল মখমলি নীল কোটের দুপাশ দিয়ে উজ্জ্বল হলুদ রেশমি পালক রুমাল ফুলিয়ে রেখেছে আর ঠোঁট দিয়ে জলপাইরঙা সঙ্গিনীর ল্যাজ কামড়ে রেখেছে,সঙ্গিনী প্রাণপণ ছাড়াতে চেষ্টা করছে। উফফ এর শেষ না দেখে যাই কি করে, এদিকে গলিতে গাড়ী আর রিক্সার বিরাম নেই। যাই হোক সে জল্পাইরঙ্গা মেয়ে কিছু কম না, ছাড়িয়েছে ঠিক নিজের ল্যাজ আর তারপরই ফুড়ুৎ করে নারকোল গাছের মাথা ছাড়িয়ে পালিয়েছে। নীলরঙা কোট হেরেছে দেখে বেশ খুশি হয়েই হাঁটা দিলাম।সামনে শিমুল গাছে তখন গ্রে হেডেড ময়না, শালিখ, ঘু ঘু তে মিলে রাজনৈতিক আলোচনায় বসেছে। ইস্কুল যাই আর পিছু ডাকে পুটকে সবুজ মাথায় লাল টিপ পড়া বসন্তবৌরি। বলে যাই দুপুরে কথা হবে। দুপুরে রাস্তা ফাঁকা,কান পাতলেই গম্ভীর কুক,কুক শুনতে পাই। বসন্তের অরকেস্টরা এমনি চলছিল, আর আজ দেখলাম আমার অযত্নের টবে কম রোদ পাওয়া একটা পাতাবাহারে সাদা থোপা থোপা লতানে ফুল ধরেছে আর তাঁর সঙ্গে হালকা সুগন্ধি ফ্রি পাওয়া যাচ্ছে। শেষ সন্ধ্যেতে বৃষ্টিরানি এসেছিলেন,টের পেলাম পাতাবাহারের হালকা অডিকোলন মাখা স্নানসারা রূপ দেখে। বসন্তের ক্যানভাসে সবে রঙ ধরছে। দেখা যাক খেলা ভাঙ্গার খেলা অবধি সে কেমন রঙ আর সুরের রঙমিলন্তি দেখায়।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।