“স্ক্রোলের গল্পে উল্লেখিত তথাগতর খোঁজ প্রথম পান ডঃ মঞ্জরী বসু , তারপর থেকেই পাগলের মত স্ক্রোলের তথাগতর খোঁজ উনি করে যাচ্ছেন। ঝোরা ম্যাডাম কাকতালীয় ভাবে আপনি ওনাকে আপনাদের ডকুমেন্ট্রি শ্যুটিং এর জন্য ইন্টারভিউ নেবার সিদ্ধান্ত নেন।” একটু দম নেয় অপূর্ব । ” ওই তথাগত দর্শন করতেই আপনাদের সঙ্গে ওনার রিং,চেং পং মনাষ্ট্রীতে আসা । “
“তা সে তো উনি এমনিও আসতে পারতেন । এতবড় একজন ইতিহাসবিদ ওনার কিসের যোগাযোগের অভাব?” ঝোরা বলে ।
“এইখানেই ভুল করলেন ম্যাডাম, ইতিহাসবিদ ছাড়াও ওনার আরেকটি পরিচয় আছে । উনি একটি কুখ্যাত স্মাগ্লিং গ্যাং পরিচালনা করেন। মক্ষীরানী ধরা পড়ে গেছেন। বাকীদের ধরতে অসুবিধা হবে না এবার । অসম্ভব সাহসী, অসামান্য পাণ্ডিত্য, প্রখর ক্রূর বুদ্ধিসম্পন্না মহিলা কিন্তু সম্পূর্ণ বিপথগামী ” । একটা বিশাল র্যাকেট ওনার নির্দেশে চলত এতদিন “। এই তথ্য জানান ডি. আই. জি অমিতাভ ভট্টাচার্য্য । ঝোরা আর মেই লিং স্তব্ধ হয়ে যায়। যাকে নিয়ে দুজনেই মুগ্ধ ছিল তাঁর এ কি আসল পরিচয়। অত সুন্দর মুখের আড়ালে একি বিভৎস মুখ । তার মানে সুন্দর মুখটাই মুখোস ওনার । এও সম্ভব ।
“মেই লিং ম্যাডাম আপনার বাড়ীতে স্ক্রোলের কালেকশন দেখার সময় আমি এক মায়ারাজ্যের কথা বলেছিলাম। মায়ারাজ্য যে রিং চেং পং এ আছে সেটা মঞ্জরী বসু টের পেয়েছিলেন । আমি জানতাম না। ওই যে নীল সরোবরের পাশে ফুটে থাকা গুচ্ছ গুচ্ছে লাল অর্কিড দেখলেন, ওইগুলো আসলে স্ক্রোলে উল্লেখিত মণি,মাণিক্য । এই প্রচীন স্ক্রোলের কবি ওগুলোকেই মণি মানিক্য বলেছেন । ডঃ; বসু বুঝেছিলেন তথাগত ওনার হাতে আসবে না। অফিসার অমিতাভ ভট্টাচার্য্য ব্ল্যাক প্রিন্সকে নিয়ে ঘটনাস্থলে তখনই উপ্সথিত । চাইনীজ স্ক্রোল নিয়ে অপার পাণ্ডিত্য থাকলেও লোভকে উনি জয় করতে পারেন নি । তাই যখন দেখলেন স্ক্রোলের মণি মাণিক্য আসলে লাল অর্কিড আর রঙিন নূড়ী ,উনি তখন হতাশায় সরোবরে ঝাঁপ দেন । উনি চাইনীস কবির ভাষার অলঙ্কারকে ভুল বুঝেছিলেন । ফুল যে প্রকৃতির মণি মাণিক্য আদি চাইনীজ কবি বলেছিলেন। কবির ভাষার চাতুরী মঞ্জরীকে হারিয়ে দেয় । ” এতটা বলে চুপ করে যায় অপূর্ব ।
“তুমি কি আমাদের ফলো করছিলে অপূর্ব? ” ঝোরা জিজ্ঞেস করে ।
অপূর্বর আগেই অফিসার বলে ওঠেন ” শুধু অপূর্ব নয় ,আমরা সবাই আপনাদের ফলো করেছি ফোর্স নিয়ে । আপনাদের টের পেতে দিই নি । আপনাদের সিকিউরিটি আমাকে দেখতেই হত । আমার পুত্রের কাছে সব খবর পেয়ে আমরা প্রস্তুত ছিলাম ছদ্মবেশে ।”
‘ড: বসু যে তথাগতর মূর্তি হস্তগত করতে না পেরে অস্থির হয়ে আছেন জানতাম. বেশ কয়েকবার গুপ্ত কক্ষ থেকে মূর্তিটি হাতানোর চেষ্টা করেছেন. শেষরক্ষা হয় নি. ব্ল্যাক প্রিন্সের খাবারেও বিষ মেশানো হয়েছিল. অপূর্বর তৎপরতায় পারেন নি.’ অফিসার বলেন.
‘ বুদ্ধের মূর্তি রক্ষা করতে ব্ল্যাক প্রিন্স, মনাষ্ট্রীর বাগানে ঘুরে বেড়িয়েছে, ব্ল্যাক প্রিন্সের চোখ এড়িয়ে মূর্তি হাতানো সম্ভব নয়. কোন রকম সংঘর্ষ হলে, যদি রক্তপাত হয় ব্ল্যাক প্রিন্সের সহজাত প্রবৃত্তি ড: মঞ্জরী বসুকে প্রাণে হত্যা করবে. মঞ্জরীর সেটা জানতেন তাই ব্ল্যাক প্রিন্সকে এড়িয়ে চলতেন, ওর খাবারে বিষ মিশিয়েছিলেন উনি ‘.
‘ সে কি কথা ‘ মেই লিং আর ঝোরা সমস্বরে বলে ওঠে.
অপূর্ব ঢক ঢক করে খানিক জল খেয়ে নিয়ে আবার বলতে শুরু করে.
‘ মুরগির মাংসে বিষ মিশিয়ে ঝোরা ম্যাডামের জানলার নীচে রাখা হয়েছিল. সেদিন রাতে ডিনার ফেরত আপনি যে ঠং করে আওয়াজ পেয়েছিলেন সেটা মাংসের থালা ছূড়ে ফেলার আওয়াজ. আমি হাতেনাতে ড: বসুকে থালা সমেত ধরে ফেলি তারপর থালাটা ছূড়ে ফেলে দি. ব্ল্যাক প্রিন্সের চোখ দুটো আপনি আপনার জানলায় জ্বলতে দেখেন. ‘