সাপ্তাহিক রম্য সাহিত্যে ইন্দ্রাণী ঘোষ (পর্ব – ১৩)

দাশুর ঠাকুর দেখা – ২

নবমীর দিন সকালে আমার সাথে দাশুর বৌয়ের দেখা| পাড়ার পুজোতে কাজ করছে| মাথার খোপাটি এলিয়ে আছে কাধের কাছে| কপালে সিদুরের টিপ , যেন মা দুগগার ৩য় নয়নটি| হাতে দুগাছি করে সোনার চুড়ি| কানে দুটো মাকড়ি| পরনে শাড়ীটি লাল পেড়ে, তাতে মাছের নকসা আঁকা| আরতি চলছিল| ধুপ ধুনোর আড়ালে, মায়ের ঘামতেল মাখা আটপৌরে মুখ, মায়ামাখানো| তাঁর মায়ার সবটুকু যেন পিছলে পড়ছিল দাশুর বৌয়ের মুখে| দাশুর বৌয়ের নামটিও বেশ, ‘দামিনী’| আমি দেখেশুনে ভাবলাম , এ মেয়ে তো হারানোর মেয়ে নয়| এমন পরিপাটি মেয়ে হারিয়ে যেতে পারেই না| দাশু হতভাগা কিছু পাকিয়েছে| দাশুর বনধুগুলো খবর দিয়েছিল , দাশু নাকি হঠাৎ অষটমীর ভোরের দিকে বৌকে আর দেখতে পায় নি নিজের পাশে| তা এ মেয়ে তো দেখছি পুজোর কাজ করছে| আগের দিন ভোরে যে মেয়ে হারিয়ে যায় সে মেয়েকে,পরদিন এমন অপরূপা দেখায় কি করে| রাগে, দুঃখে তো তাঁর বাড়ী থেকে বেড়োনোর কথাই না|

পরে ভেবে দেখলাম মা দুগগার যেমন ভোলানাথের সংসার সামলান, এ মেয়েও দাশুর সংসার সামলায় অনায়েসে| কাজেই দাশু যতই পাগলামো করুক, দাশুর বৌয়ের বয়ে গেছে| এসব ভাবছি, এমন সময় দামিনী এসে পুজোর নারকোল নাড়ু দিয়ে গেল একগাল হেসে| আমি হাত পেতে নাড়ু নিয়ে বললাম ‘পুজো কেমন কাটছে?’, সে একগাল হেসে বললে ‘ভালো’ । আমি বললাম ‘ঠাকুর দেখলে?’ দামিনী বললে ‘হ্যা, তোমার বন্ধু তো, হাওয়া হয়ে গেল আমাকে নিয়ে বেড়িয়ে ।’

‘ আর তুমি কি করলে?’ আমি শুধোই ।
‘কি আর করব, অন্য বৌদের সাথে গপ্পগাছা করে, ফুচকা, রোল খেয়ে বাড়ী চলে এলাম’ । আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম ‘ তোমার রাগ হয় নি দামিনী?’ সে লাজুক হেসে বললে ‘ না, না রাগ হবে কেন, পুজোর মধ্যে ওসব হয়’ ।

দাশুর সাথে দেখা হল তারপরের দিন……….

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।