সম্পাদকীয়

 

যদিও এটা চৈত্র মাস নয়, ভরা শ্রাবণ, বামদেব, নীলকণ্ঠ, গঙ্গা শিরোমণি, ভূত সঙ্গ করা মহাদেব শিবের পুজোর মাস। আর শিবের কথা দুর্গা তথা মা অন্নপূর্ণা ছাড়া কে বা এমন করে বলতে পারে। আর এই ভয়ঙ্কর ভোগবাদের দিনে দাঁড়িয়ে সেই মাঝির কথা ভাবি যে দেবী অন্নপূর্ণার বর পেয়ে নিজের সন্তানের দুধ ভাতের সংস্থানটুকু ছাড়া কিচ্ছু চাইতে পারে না।

আমরা যারা নব্বইয়ের দশকে পাশ করেছি এ কবিতা সবার চেনা।
বড় চেনা, বড় ভালোবাসার পঙক্তিগুলি।

অন্নপূর্ণা ঈশ্বরী পাটনী।

অন্নপূর্ণা উত্তরিলা গাঙ্গিনীর তীরে।
পার কর বলিয়া ডাকিল পাটনীরে।।
সেই ঘাটে খেয়া বায় ঈশ্বরী পাটনী।
ত্বরায় আনিল নৌকা বামাস্বর শুনি।।
ঈশ্বরীরে জিজ্ঞাসিল ঈশ্বরী পাটনী।
একা দেখি কুলবধু কে বটে আপনি।
পরিচয় না দিলে করিতে নারি পার
ভয় করি কে জানি কে দেবে ফেরফার।।
ঈশ্বরীরে পরিচয় করেন ঈশ্বরী।
শুনহ ঈশ্বরী আমি পরিচয় করি।
বিশেষণে সবিশেষে কহিবারে পারি।।
জানহ স্বামীর নাম নাহি ধরে নারী।।
গোত্রের প্রধান পিতা মুখবংশজাত।
পরম কুলীন স্বামী বন্দ্যবংশখ্যাত।।
পিতামাতা দিলা মোরে অন্নপূর্ণা নাম।
অনেকের পতি তেই পতি মোর বাম।।
অতি বড় বৃদ্ধ পতি সিদ্ধিতে নিপুণ।
কোনগুণ নাই তাঁর কপালে আগুন।।
গঙ্গা নামে সতা তাঁর তরঙ্গ এমনি।
জীবন স্বরুপা সে স্বামীর শিরোমণি।
কু কথায় পঞ্চমুখ কণ্ঠ ভরা বিষ।
কেবল আমার সঙ্গে দ্বন্দ অহর্নিশ।।
ভূত নাচাইয়া পতি ফেরে ঘরে ঘরে।
না মরে পাষাণ বাপ দিলা হেন বরে।।
অভিমানে সমুদ্রেতে ঝাঁপ দিলা ভাই
যে মোরে আপনি ভাবে তাঁর ঘরে যাই।
মাঝি কহিল আমি বুঝিনু সকল ।
যেখানেতে কুলীন জাতি সেখানে কোন্দল।।
দেবী কহে ‘মাঝি তোর নায়ে ভরা জল’।
‘আলতা ধুইবে পদ কথা রাখি বল”।।
মাঝি কহে “মা গো তুমি শুন নিবেদন।
সেউতি উপরে রাখো ও রাঙা চরণ”।
সেউতি উপরে পদ রাখিতে রাখিতে
সেউতি হইল সোনা দেখিতে দেখিতে।।
সোনা দেখি পাটনীর মনে বড় ভয়।
এ তো মেয়ে মেয়ে নয় দেবতা নিশ্চয়।।
তীরে উত্তরিলা তরী তারা উত্তরিলা
পূর্বমুখে সুখে গজগমনে চলিলা।
সেউতি লইয়া বক্ষে চলিলা পাটনি।
পিছে তারে হেরি দেবী ফিরিলা আপনি।।
সভয়ে পাটনী কহে চক্ষে বহে জল।
দিয়াছ যে পরিচয় সে বুঝিনু ছল।।
হের দেখ সেউতিতে থুইয়াছিলে পদ।
কাঠের সেউতি মোর হইল অষ্টাপদ।।
ইহাতে বুঝিনু তুমি দেবতা নিশ্চয়।
দয়া করে মোরে তুমি দেহ পরিচয়।।
জপ স্তব নাহি জানি ধ্যান জ্ঞ্ান আর।
তবে যে দিয়াছ দেখা সে দয়া তোমার।।
যে দয়া করিল মোর এ ভাগ্য উদয়।
সেই দয়া হতে মোরে দেহ পরিচয়।।
শুনি দেবী অন্নপূর্ণা কহিলা হাসিয়া।
কহিয়াছি সত্য কথা বুঝহ ভাবিয়া।।
আমি দেবী অন্নপূর্ণা প্রকাশ কাশীতে।
চৈত্র মাসে মোর পুজা শুক্লা অষ্টমীতে।।
কতদিন ছিনু হরিহরের নিবাসে ।
ছারিলাম তাঁর গৃহ কোন্দলের ত্রাসে।।
ভবানন্দ মজুমদার নিবাসে রহিব।
বর মাগ মনোনীত যাহা চাহ দিব।।
শুনিয়া পাটনী তখন কহে জোড়হাতে।
আমার সন্তান যেন থাকে দুধে ভাতে।।
শুনে দেবী অন্নপূর্ণা দিলা বরদান।
দুধে ভাতে থাকিবেক তোমার সন্তান।।

কবি ভারত চন্দ্র রায়গুনাকার।।

ইন্দ্রাণী ঘোষ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।