• Uncategorized
  • 0

গল্পেরা জোনাকি তে ইলা চক্রবর্তী

অসমাপ্ত নয়নিকা

অপূর্ব আজ রাতের ট্রেন ধরে এক আধা শহর আধা গ্রামের দিকে রওনা হলো। সময়টা না শীত না গরম, বেশ মনোরম আবহাওয়া।
অপূর্ব সেন, সরকারি চাকরি করে, কিন্তু মনে প্রাণে একজন ভালো লেখক । ছদ্ম নামে অনেক গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে তার।
চাকরি সূত্রে অনেক গ্রাম ও শহরে যেতে হয়েছে, থাকতেও হয়েছে।
এবার আবারও যেতে হচ্ছে চাকরি সূত্রে সার্ভে র কাজ নিয়ে।
রাতের খাবার নিয়ে রিজার্ভেশন সিট টা দখল করে আরাম করে বসলো অপূর্ব । খাবার টা খেয়ে বিছানা করে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো। একদম লাস্ট স্টেশন তাই আর কোনো চিন্তা নেই । লম্বা একটা ঘুম তার পর পৌঁছে যাবে ঠিক ভোর ছটায়।
যথারীতি অপূর্ব ঠিক সময়ে পৌছে গেল । একই ভোর বেলা ফাঁকা চারিদিক। খুব ভালো লাগছে হালকা ঠান্ডা হওয়ায় মনটা চনমনে হয়ে উঠলো।
যাইহোক অফিসের গাড়ি চলে এসছে। অপূর্ব গাড়িতে চড়ে সোজা অফিসের ঠিক করা একটা বাড়িতে পৌঁছে গেলো। এক রুমের ঘর , লাগোয়া বারান্দা রান্না ঘর সবই আছে। একজন লোক ও আছে । দেখাশোনা ও রান্না করার জন্য।
অপূর্ব মনে মনে খুব খুশি, জায়গাটা নিরিবিলি নির্জন সামনে যতদূর দেখা যায় লাল মেঠো পথ তার দুই ধারে লম্বা গাছের সারি।
আহ!____ মন ছুঁয়ে যায় যেনো! অপূর্ব খুব খুশি হয় এই ভেবে,
___” যা কাজ আছে অফিসের সেটা সারতে সারতে এক মাস তো লাগবেই। এই এক মাসের মধ্যে এই মনোরম নির্জন পরিবেশে কিছু তো লিখবেই।”
যাই হোক আজ আর কোনো কাজ করতে হয় নি কাল থেকে অফিসের কাজ শুরু হবে আর বাকি সময়টা পুরোটাই অপূর্বের নিজের।
দুপুরের খাওয়া দাওয়া করে সে একটু রেস্ট নেবে তার পর বিকেলে বেরিয়ে, আশে পাশে ঘুরে দেখবে এটাই মনে মনে ঠিক করে নিল।

অপূর্ব সেন। ছোটো বেলা থেকেই চুপ চাপ একজন ভালো ছেলে হিসেবেই সব সময় সে প্রমাণ করেছে।স্কুলে কলেজে । কোনোদিন কাউর সাথে ঝগড়া, কথা কাটাকাটি হয়নি। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান, বাবা সরকারি চাকরি করতেন সে সূত্রে চাকরি টা পাওয়া। এখনও বিয়ে করা হয়ে ওঠেনি। বয়স নিজের খেয়ালে বেড়েই চলেছে। বাবা আজ আর নেই। মা আর ছেলে এই দুজনার সংসার। কেটে যাচ্ছে রোজ নামচায় ভালো মন্দর পথ ধরে।

অপূর্ব বিকেল বেলায় বেরিয়ে পড়লো সাথে একটা ডাইরি আর কলম নিয়ে। এদিক ওদিক এলোমেলো পায়ে হাঁটতে লাগলো। কিছুটা যাওয়ার পর একটা পাঁচিল ঘেরা বেশ ভাঙ্গা বড়ো পুরনো মহল টাইপের বাড়ি দেখতে পেলো। তার পাশেই বড়ো একটা দীঘি।
____”ওফ্ ! কি সুন্দর যে লাগছে সেটা বলার না।__”অপূর্ব নিজের মনে মনে বললো,”
দীঘির চারি পাশে বড়ো বড় লম্বা লম্বা তাল সুপারি গাছের সারি । গভীর আয়নার মত স্বচ্ছ কালো দীঘির জলে কত হাঁস চড়ে বেড়াচ্ছে। পায়ে পায়ে অপূর্ব এগিয়ে গেলো।
কিছু ক্ষন দীঘির শানবাঁধানো ঘাটের সিড়ি তে বসলো।
দূরে ওই পুরনো বাড়িটা মনে হয় আগে কার জমিদার দের হবে। সম্মোহিত হয়ে অপূর্ব তাকিয়ে রইলো, দু চারটে বাচ্চা খেলা করছিল পাশে।
আজ প্রথম দিন তাই আর বসলো না কয়াটারে ফিরে গেলো। মনে মনে ভাবলো কাল আবার আসবে ।
অফিসের কাজ মিটিয়ে আসার পথে দীঘির কাছে বসবে। ____”সত্যি মনোরম জায়গা। মনে হয় যেনো কোনো শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবি।”
পরের দিন অপূর্ব অফিসের কাজ সেরে পূর্বের নির্ধারিত জায়গায় গিয়ে বসলো।
হটাৎ লক্ষ্য করলো দীঘির শানবাঁধানো ঘাটের একদম নিচের সিড়িতে কে একজন বসে আছে।অপূর্ব ওরফে অপু দুর থেকে বুঝতে পারলো না। একটু কাছে এসে দেখলো একটি চব্বিশ পঁচিশ বছরের মহিলা বসে। মাথায় ঘনো কালো চুল, পিছন ফিরে বসে থাকায় অপূর্ব ঠিক বুঝতে পারছিল না । হলুদ আর লাল ডুরে শাড়ী পড়া ছিল। অপূর্ব ভাবলো,___ “এই গ্রামের কেউ হবে জল নিতে এসেছে হয়তো।”
আজ অফিসের প্রথম দিন বলে দুপুরেই কাজ হয়ে গেছে । সময়টা তিনটে হবে ।
অপূর্ব ভাবলো,___” ডেকে কথা বলা যাক ।” তাই সে একটু কাছে এসে ,বললো,—-” এইযে শুনছেন ?” মেয়েটি পিছন ফিরে তাকালো। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে রইলো অপূর্বের দিকে।
তারপর বললো , ____”আমায় বলছেন?” অপূর্ব মনে মনে ভাবলো,__” এখানে ত আর কেউ নেই তো কাকে বলব।” সে বললো,___” হুঁ আপনাকেই বলছি, আপনি কি এখানেই থাকেন?” মেয়েটি একপা করে উপরের দিকে উঠে এলো।
ওপরে উঠে আসতেই এবার মেয়েটিকে অপূর্ব স্পষ্ট দেখতে পেলো। গায়ের রং উজ্জ্বল, মুখটা লম্বা ডিমের মত চোখ দুটো যেনো হরিণের মতো কাজল কালো। এক পিট কালো কোঁকড়ানো লম্বা চুল, অদ্ভুত মায়া যেনো সারা মুখে ছড়িয়ে আছে। কাছে এসে মেয়েটি বললো,___”আপনি কি এখানে নতুন এসছেন?”
অপূর্ব বললো, __”হু আমি ওই একটু দূরে সরকারি কোয়াটার এ রয়েছি।
আপনি! ___”আমি ওই দূরে বড়ো বাড়িটা দেখছেন ওখানেই থাকি।”
অপূর্ব বললো, __” ওই বাড়িটা তো বেশ পুরনো অপূর্ব বুঝতে পারছিল না অত পুরনো বাড়িতে কেমন করে থাকতে পারে কেউ। আবার ভাবলো হয়তো ভেতরে ভালো বাড়ি ঘর আছে।”
মেয়েটি পায়ে পায়ে অপূর্ব অনেক টা কাছাকাছি চলে এলো । অপূর্ব এবার ওর মুখ ও শরীরের সবটা পরিষ্কার দেখতে পেলো।
মেয়েটি খুব সুন্দরী না হলেও বেশ মোহময়ী ।
ওর চোখ দুটো এত সুন্দর যে সত্যি মুগ্ধ হওয়ার মতো। তাই সেও মুগ্ধ না হয়ে পারলো না।
তখন বেলা ঢোলে গেছে , সূর্যটা লাল থালার মতো বড়ো হয়ে দীঘির জলে ডুব দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
মেয়েটি জিজ্ঞাসা করলো, _____” আপনার হাতে খাতা পেন কেনো আপনি কি ছবি আঁকেন? স্বলজ্জিত হয়ে অপূর্ব উত্তরে বলল,__
” না আমি একটু আদ্দু গল্পো লিখি আর কি,”
মেয়েটি যেনো খুব খুশি হয়ে উত্তর দিল, __”তাই নাকি! আচ্ছা আমি একটা গল্প বলবো আপনি লিখবেন?”
হটাৎ মেয়েটির অযাচিত ভাবে খুশি দেখে অপূর্ব একটু অপ্রস্তুতে পড়লো আর বেশ অবাকও হলো।
খেয়াল করলো কোয়াটারে ফিরতে হবে নতুন জায়গা আর বেশি দেরি করা যাবে না। তাই তড়িঘড়ি ফেরার জন্য উঠে পড়ল অপূর্ব।
যাওয়ার সময় অপূর্ব মেয়েটিকে –
বলল, __”কাল দেখা হবে যদি আপনি আসেন।”
মেয়েটি বলল, __”আমি তো এখানে রোজ এসে বসে থাকি আপনি চিন্তা করবেন না আমি ঠিক সময় চলে আসবো। কিন্তু আপনি আমার গল্পটা লিখবেন তো!”
_”হ্যা অবশ্যই তালে ওই কথা রইলো কাল দেখা হবে।”
এই বলে অপূর্ব চলে গেলো নিজের গন্তব্যে।
অপূর্ব ঘরে গিয়ে কোনো রকম খাওয়া সেরে লিখতে বসলো। কিন্তু কিছুতেই লেখায় মন বসলো না।
বারবার মেয়েটির কথা মনে পড়তে লাগলো।
__”এই যা! মেয়েটার নাম জানা হলো নাতো!
কাল প্রথমে গিয়েই নাম জিজ্ঞাসা করবে ও।
ভাবতে লাগলো কখন ভোর হবে কখন সে ওই মেয়েটির কাছে যাবে।
অপূর্ব একটা জিনিষ লক্ষ্য করলো একটা ভীষণ আকর্ষণ অনুভব করছে সে মেয়েটির প্রতি।
অপূর্ব যে এর আগে কোনো সুন্দরী মেয়ে দেখেনি তা নয়। তবে এই মেয়েটির প্রতি অপূর্বের বিশেষ আকর্ষণ একটু বিচলিত করলো তাকে।
রাতে বেশ ভালো ঘুম হলো আজ। সকলের কাজ সেরে অফিস গেলো। কিন্তু বার বার মনটা ওই মেয়েটির দিকেই পরে আছে। আজও তাড়াতাড়ি কাজ সেরে হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে গেলো।
এ যেনো এক নেশা ওকে টানছে।
সে দীঘির ঘাটে গিয়ে দেখলো তার আগেই মেয়েটি এসে বসে আছে। ঠিক একভাবে সেদিন যেমন বসে ছিল।
পায়ে পায়ে অপূর্ব এগিয়ে গেলো।
মেয়েটির অনেক কাছে চলে এসেছে , আহা! কি সুন্দর লাগছে আজ! যেনো কোনো মোহময়ী। বাঘ ডুরে শাড়িতে যেনো আরো সুন্দর লাগছে। কোমর অব্দি কালো কোচকানো চুল । কিছু চুল ওর কপাল পেরিয়ে গাল ছুঁয়েছে। বার বার চুলটা সরিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু অবাধ্য চুলটা বার বার ওর গোলাপের পাঁপড়ি র মত ঠোঁট দুটো ছুঁয়ে যাচ্ছে ।
অপূর্ব বললো,__ “সেদিন আপনার নাম জানা হয়নি আপনার নামটা বলবেন।”
মেয়েটি মুচকি হেসে বললো, ___”আমার নাম নয়নিকা। আপনার নাম?”___” আমার নাম অপূর্ব সেন সবাই অপু বলে ডাকে।
অপূর্ব বললো,__” আপনার নামটি তো খুব সুন্দর ঠিক আপনার মত।” মেয়েটির মুখ লজ্জায় রাঙা হয়ে গেলো।
নয়নিকা বলল, __”যাবেন আমার বাড়ি?”
অপূর্ব সম্মতি জানিয়ে বললো,__” আচ্ছা চলুন।”
বেলা তখন যাই যাই করছে। সূর্য অস্ত যাওয়ার তারায় রয়েছে। পাখিরা নিজ নিজ বাসায় ফেরার তোড়জোড় করছে, জল থেকে হাঁসেরা নিজেদের ঘরের উদ্দেশ্যে ডাঙায় উঠছে।
অপূর্ব মন্ত্র মুগ্ধের মত মেয়েটির পিছনে পিছনে ওই ভাঙাচোরা বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।
বাড়িটা দেখে অবাক হয়ে গেলো। কতো পুরনো এক বাড়ি!
চারিদিকে বুনো ফুলের গন্ধ । দেয়াল বেয়ে বট গাছের শিকড় গুলো ঝুলছে। চারিদিক আগাছায় ভর্তি।
ভাঙ্গা এক মন্দির । মন্দির পেরিয়ে বাড়িটার আর একটা দিক!
একি! এত সাজানো সুন্দর যে এইদিক টা? একটু অবাক হয়ে গেলো অপূর্ব! দেখে বোঝাই যায়না যে এটা একটা ভাঙ্গা বাড়ি। অপূর্ব ভাবলো হয়তো এইদিক টা বাসযোগ্য করা হয়েছে। তাই এত সুন্দর।
মেয়েটি ঘরের ভিতরে নিয়ে গেলো ওকে জল দিল। বসতে দিল। অপূর্ব জিজ্ঞাসা করলো আপনি একাই থাকেন ? বাড়ির আর কেউ নেই।
নয়নিকা বলল,___ “না আমি একাই থাকি আমার দূর সম্পর্কের কাকা আছেন শহরে গেছেন সপ্তাহে আসেন কাল আসবেন।”
__”আপনি বলেছিলেন আপনার গল্প বলবেন , কই বলুন আমি লিখবো। অপূর্ব একটু ব্যস্ত হয়ে বললো।” নয়নিকা উদগ্রীব হয়ে বললো, __”লিখবেন আমার গল্প,?
সন্ধ্যে তখন হয়ে এসেছে , কোথায় যেনো জুঁই আর বেল ফুল ফুটেছে কি সুন্দর গন্ধ। আকাশে টিম টিম সন্ধ্যা তারা উঠছে এক এক করে, বাঁকা চাঁদ মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলছে!
আর বিশাল ভাঙ্গা বাড়িটা যেন পৃথিবী ছাড়া এক অন্য গ্রহের মত লাগছে। যেখানে শুধু অপূর্ব আর নয়নিকা এই দুই প্রাণী ছাড়া আর কেউ নেই,,,,!
নয়নিকা তার জীবনের গল্প বলতে লাগলো,
_____যেদিন নয়ণিকা জমিদার রুদ্র নারায়ণের নববধূ রূপে এই জমিদার বাড়িতে পা রাখলো। সেদিন এই বাড়ি কতো সাজে সজ্জিত ছিল কতো দাস কত দাসি। নহবত বসেছে কতো লোক। হৈচৈ চারিদিকে।
এক গা গয়না, পায়ে আলতা পড়ে যখন ফুলসজ্জার ঘরে এক আকাশ ভালোবাসা নিয়ে অপেক্ষা করছিল তার একান্ত আপন জন চির সাথী স্বামীর জন্য । তার সব অপেক্ষা সাঙ্গ করে এলো তার বাবার বয়সী এক বৃদ্ধ। যাকে দেখে নয়নিকা ঘুমরে কেঁদে উঠেছিল। তার সব স্বপ্ন চুরমার হয়ে গিয়েছিল সেদিন এক মুহুর্তে।
নিজের ওপর ঘৃণা আসে নয়নিকার।
এই ভাবে কেটে যায় কিছু বছর।
একদিন সহ্য না করতে পেরে নিজেকে শেষ করার জন্য এই কালো দীঘিতে ঝাঁপ দিল।
সেদিন এক সুপুরুষ তাকে বাঁচিয়ে ছিল।
সেই সুপুরুষ এই জমিদার বাড়ির নায়েবের ছেলে,
নাম অনিরুদ্ধ।
সেদিন নয়নিকা নিজের জীবন দিতে চেয়েছিল,
কিন্তু সেই মুহূর্তে নিজের নতুন জীবন পেয়ে জীবন দাতার প্রতি অমোঘ ভালোবাসায় বাঁচার ইচ্ছেটা আবার জেগে ওঠে নয়নিকার।
প্রথম দেখায় দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলে।
কতো ভালোবাসার দিন তারা কাটিয়েছে নিরালায়
নৃভিতে।
অপূর্ব অবাক হয়ে শুনছিল তার গল্প । যেনো কোনো নেশা ধরেছে তার ভীষণ নেশা! এই নেশা থেকে কেউ ওকে বাঁচাতে পারবেনা!!
নয়নিকার মুখের ভাব একটু একটু করে বদলাচ্ছে কখনও হাসছে কখনও কাঁদছে । আলো আঁধারিতে কখনও খুশিতে মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।
নয়নিকা তার গল্প বলেই যাচ্ছে,,,,,,
একদিন এই ভালোবাসার কথা সকলে জানতে পারলো।
রুদ্রণারায়ন ভীষন রাগি আর অত্যাচারী জমিদার ছিল।
নয়নিকা বাবা মা কেউ ছিল না মামার বাড়িতে মানুষ অভাবের সংসার, রুদ্র নারায়ণ প্রায় জোর করেই বিয়ে করেছে তাকে। বিয়ের সময় নয়নিকা মুখটাও দেখার প্রয়োজন মনে করেনি। বলা বাহুল্য নয়নিকা কে একরকম তুলে নিয়েই এসে বিয়ে করে।
এদিকে অনিরুদ্ধ আর নয়নিকর প্রেম তীব্র গতিতে এগিয়ে চলে। কোনো বাঁধা যেনো মানতে চায় না
প্রেমের জোয়ারে দুটি মনের তীব্র ভালোবাসার টানে যেনো কোথায় হারিয়ে যেতে চায়।
কিন্তু রুদ্র নারায়ণ সব একদিন জানতে পারলো।
হঠাৎ এইটুকু বলে থামলো নয়নিকা। বললো,__”আসুন আমার সাথে।”
অপূর্ব অবাক হয়ে বললো, কোথায় ?
নয়নিকার মুখটা কেমন ফ্যাকাসে আর যন্ত্রণায় কাতর লাগলো। নয়নিকা যেনো অস্থির হয়ে পড়ছে,
প্রায় ছুটতে ছুটতে এগিয়ে গেলো। অপূর্ব পিছন পিছন এগিয়ে গেলো।
__”ওই যে শেষ দালানের পাশে ঘরটা দেখছেন ওটা খুলে দিন! আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে! খুলে দিন!
আমি বহুকাল ওখানে আটকা পরে আছি!
আমার ভীষণ তৃষ্ণা আমি বছরের পর বছর কিছু খাইনি!”
অপূর্ব বুঝতে অসুবিধা হলো না যে পরের কাহিনী কি হয়েছিল। নয়নিকা আর বেঁচে নেই ওর অতৃপ্ত আত্মা ওকে এখানে ডেকে নিয়ে এসেছে মুক্তি পাবার আশায় কিন্তু এটাও বুজলো যে নয়নিকা ওর কোনো ক্ষতি করবে না সে মুক্তি পাওয়ার জন্যই এতদিন অপেক্ষা করেছে, হয়তো ওর জন্য!!
আজ নয়নিকা অপূর্বর হাতে মুক্তি পেতে চায়।
অপূর্ব ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো ।
__”যান! এগিয়ে যান দরজাটা খুলে দিন!”
নয়ণিকা অস্থির হয়ে চিৎকার করল।
অপূর্ব ঘরের দরজাটা পাথর দিয়ে ভাঙলো ।
দরজাটা খুলতেই পঁচা দূর গন্ধে গা গুলিয়ে উঠলো।
অপূর্ব নিজে সামলে নিয়ে মোবাইলে টর্চ টা জ্বালিয়ে যা দেখলো,সেটা দেখে যে কোনো মানুষ ভয়ে শিউরে উঠবেই! মানুষ যে এত বড় নৃশংস
হতে পারে সেটা এই দৃশ্য না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে পারবে না। একটা কঙ্কাল পরে আছে তার মুখটা একটা শেকল দিয়ে বাঁধা আর হাত পা মোটা শেকল দিয়ে বাঁধা। সামনে সোনার গয়না কিছু পরে আছে। আর নয়নিকার কঙ্কাল। হঠাৎ অপূর্ব দেখলো
বাড়িটার যেই দিকটা ওরা বসে কথা বলছিল সুন্দর ঘর গুলো বাস যোগ্য ছিল হঠাৎ সেই দিকটা ভাঙ্গা রঙ চটা পড়ো বাড়ি হয়ে গেলো!! অপূর্ব অবাক হয়ে গেলো,
ঘরের পরম দৃশ্য দেখে নয়নিকার জন্য
অপূর্বের চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে লাগলো। শুধু আন্দাজ করতে লাগলো মেয়েটি বুক ফাটা কান্না যন্ত্রণা আর কষ্ট। শুধু ভালোবেসে তাকে এত কষ্ট পেয়ে মরতে হলো!!
অপূর্ব কিছুটা দূরে অস্পষ্ট একট ছায়া মূর্তি দেখতে পেলো , ছায়া মূর্তি বলছে,__” আমার গল্পটা লিখবেন তো”??
তার পর আর কিছু মনে নেই।
অপূর্বর সকালে যখন চোখ খোলে দেখে সে হসপিটালের বেড এ শুয়ে আছে।
পরে শোনা যায় ওই জমিদার বাড়ির মন্দিরের পূজারী অপূর্বকে উদ্ধার করে হসপিটালে ভর্তি করে।তারপর পূজারী ওখানকার লোকাল police নিয়ে আসে, ওই কঙ্কাল উদ্ধার করে এবং সৎকার করা হয়।
বেশ কিছুদিন ওকে সুস্থ হতে লাগে।
অপূর্ব ওখানকার কাজ সেরে এবার ফেরার পালা। ট্রেনে ওঠার আগে আবার সেই দীঘির ঘাটে যায়, আরো একবার নয়নিকা কে দেখার প্রবল ইচ্ছা নিয়ে।
কোথাও তাকে দেখতে পায়না, কেনই বা দেখতে পাবে! অপূর্ব যে নিজের হাতে তাকে মুক্তি দিয়েছে!
শুধু দেখতে পেলো সেই হাঁস সারি সারি গাছ আর নয়ণিকার সুন্দর কাজল কালো চোখের মতো কালো দীঘির টল টল জল তির তির করে বয়ে যাচ্ছে। সে মনে মনে ভাবলো তাকে গল্পটা লিখতেই হবে, এক নিষ্পাপ মেয়ের ভালোবাসার কাহিনী তার যন্ত্রণার কাহিনী সে লিখবে, লিখতে তাকে হবেই!! সে যে কথা দিয়েছে!
অপূর্ব এর চোখে জল ভরে এলো!!!!
সেই বাড়িটা এখনও দাড়িয়ে কতো ইতিহাস বুকে নিয়ে অতন্দ্র প্রহরীর মত।এমন কতো ঘটনা আছে যা আমাদের জানা চেনার বাইরে, কেউ হয়তো জানেনা।
নয়নিকার মত কতো মেয়ে এমন বাড়ির কোন অতল গহ্বরে ডুকরে ডুকরে কেঁদে বেড়াচ্ছে!!!!! কেউ জানে না।
অপূর্ব আর দাড়ায় না তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে স্টেশনের দিকে রওনা দেয়।।।।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।