• Uncategorized
  • 0

গল্পেরা জোনাকি – তে ইলা চক্রবর্তী

মুহূর্তের বিভীষিকা”

প্রতিদিনের মত আজ সকালে চা খেতে খেতে নীলা মা কে ফোন করলো। ____” মা কেমন আছ?” ওপার থেকে ক্ষীণ গলায় আওয়াজ ভেসে এলো,_____” ভালো নেইরে মা শরীর টা একদম ভালো নেই”!
কথাটা শুনেই নীলা ব্যাকুল হয়ে উঠলো।
ওরা তিন ভাই বোন, দাদা বিদেশে থাকে। তাই দিদির কাছেই মা থাকেন।
চার বছর হয়েছে বাবা মারা গেছেন। তাই মাকে দেখা শোনা করার কেউ নেই তাই দিদির কাছেই থাকেন।
নীলা এতদিন কলকাতার বাইরে থাকতো, কিছুদিন হয়েছে ছেলের পোস্টিং কলকাতায় হওয়াতে কলকাতায় এক মস্ত ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে রয়েছে ।
নীলা ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো,___” মা দিদি নেই?” ______ নীলার মা বললেন, ” নারে ওর শাশুড়ি মারা গেছেন আজই, তাই ওকে যেতে হয়েছে ওই বাড়ি”!
কি আর করা যাবে অগত্যা এ মত অবস্থায় দিদি কে তো যেতেই হতো।
নীলা ফোনের এপার থেকে বললো,___ ” কি হয়েছে মা ! আমি একটু পরেই যাচ্ছি, তুমি চিন্তা করোনা !”
এই বলে ফোন টা রেখে তরি ঘড়ি কাজ সেরে মায়ের কাছে যাবার জন্য তৈরি হতে লাগলো।
বাড়ির কাজ কিছু কম নয়। নীলা আবার কাজের লোক পছন্দ করে না। নিজের কাজ নিজেই করতে ভীষণ ভালোবাসে। তাই একটু চাপ সবসময়ই বেশি।
তার ওপর পশু প্রেমী বাড়িতে দুটো কুকুর ছানা একটি বিড়াল। তাদের কে নিজের সন্তানের চেয়েও বেশি স্নেহ করে সে ।
ছেলে মেয়ে দুজনেই চাকরি করে।
স্বামী নেই তাই সংসারের সমস্ত দায় টা নিজেই নিয়েছে। যদিও ছেলে মেয়ে সংসার টা পুরোটাই চালায়। কিন্তু নীলার অনুমতি ছাড়া কিছুই হয় না।
নীলা কাজ করতে করতে শুধু মায়ের কথা ভাবছে। মাঝে মাঝে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ছে।
আসলে মায়ের শরীর ভালো যায় না, এদিকে দাদাও থাকে না তার ওপর কেউ মারা গেছে শুনলে আরো বুকের ভেতর উথাল পাথাল করে।
যাই হোক তাড়াতাড়ি কাজ সেরে নীলা মায়ের বাড়ি রওনা দিলো।
এই সময় টা বাস এ বেশ ভির থাকে।অন্য সময় হলে বাস এ যায়, কিন্তু আজ একটু তাড়াতাড়ি ছিল তাই হন্ত দন্ত হয়েই রাস্তা পার হচ্ছিল সে।
হঠাৎ একটি মাঝ বয়সী মহিলা বাস এ ওঠার জন্য নীলা কে এক প্রকার ধাক্কা দিতেই! নীলা একটু কাত হয়ে গেলো। ভদ্র মহিলা প্রায় রেগে মেগে নীলার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,____” নিজেও উটবে না আর কাউকেই বাসে উটতে দেবেনা!”
নীলা বুঝেই পেলনা যে কি হচ্ছে ওর সাথে , আসলে ও তো বাসেই উঠবে না, তাহলে!
কিছু বোঝার আগেই চলন্ত বাসে ঝপ করে মহিলা উঠতে গেল।
নীলা একে তাড়াহুড়ো করছিল মায়ের কাছে যাবে বলে, তার ওপর এই ঝামেলা , নীলা একটু সামলে নিয়ে পিছন ফিরে দেখল যে মহিলা বাসে লাফ দিয়ে উঠছে আর বাসের লোকেরা হৈ হৈ করে চিৎকার করে মহিলাকে সাবধান করছে,
হঠাৎ মহিলার হাতটা ছুটে গেলো আর বাস থেকে একদম নীচে,
এর পর যা হলো সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না বাসের সামনের চাকা টা মহিলার একটা হাত আর মাথার এক অংশের ওপর দিয়ে পিষে হুর মুড়িয়ে চলে গেলো।
সারা রাস্তা রক্তে ভেসে গেছে।
কয়েক মুহূর্তে ঘটনাটা ঘটে গেলো যে কিছু বোঝাই গেলো না!
যে কি হলো।
সেদিন নীলার আর যাওয়া হলো না।
কোনো রকম স্তম্ভিত ফিরে পেয়ে
বাড়িতে ফোন করে ছেলেকে ডেকে নেয়।
ছেলে এসে নীলাকে বাড়ি নিয়ে গেলো।
অনেক রাত নীলার চোখে ঘুম আসেনি।
যখনই চোখ বুঝেছে তখনই ওই দৃশ্য তার চোখে ভেসে এসছে।
বার বার মনে মনে ভেবেছে কেনো মানুষের এত তাড়া। একটু ধীর গতিতে চললে কি এমন অসুবিধা হয়ে যেত।
নীলাও তো তাড়াহুড়ো করছিল।
এই ঘটনার পর নীলা বেশ অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সে আর মায়ের কাছে যেতে পারেনি। বেশ কিছুদিন হসপিটালে নীলা কে থাকতে হয়। নীলার ছেলে মেয়ে তাদের দিদিমাকে তাদের কাছে এনে রাখে। সাথে তার মায়ের চিকিৎসা করে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে আসে।
বাড়িতে এসে নীলা মাকে দেখে তার খুশির অন্ত ছিল না। মা ও মেয়ের স্নেহের পরশের ওই মুহূর্ত টা নীলার ছেলে মেয়ে চিরকালের মত মোবাইল বন্দী করে রাখলো।
নীলা অবাক হয়ে ভাবতে লাগলো,
তার মায়ের ও দিদিমার প্রতি নীলার ছেলে মেয়ের কর্তব্য ও নিষ্ঠার কথা।
নীলার চোখে আনন্দের অশ্রু বইতে লাগলো।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।