এবাদুলদাকে আমি কোনোদিন রাগতে দেখি নি। অনেকেই তাঁর রাগের কথা বলেছেন। খুব ঘনিষ্ঠ জনদের তিনি নাকি বকাবকি করতেন। অবশ্য আমি যদি তাঁর সঙ্গে প্রতিদিনের জীবনে ওঠাবসা করতাম তাহলে অবশ্যই আমিও এই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতাম। কিন্তু আমার খুব দেখার ইচ্ছা ছিল এবাদুলদার মতো মানুষ রেগে গেলে কেমন মূর্তি ধারণ করেন।
এবাদুলদার “আবার এসেছি ফিরে” ও “এবং পুনশ্চ” পত্রিকায় লিখেছি এবং তিনি পত্রিকা পাঠিয়েছেন অথচ আমি সেই পত্রিকা পাই নি। কেন জানি না, অন্য সব পত্রিকা আসত অথচ এবাদুলদার পত্রিকা ডাকে আসত না। যখন ফোন করে বলতাম দাদা, আপনার পত্রিকা কবে যে দেখতে পাবো জানি না। উনি সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়েছেন, একদম চিন্তা করবেন না হরিৎদা, আমি পত্রিকা আবার পাঠিয়ে দেব এবং তিনি তা করতেনও। একবার নয় একাধিকবার। গতবছরের লকডাউনে যখন চারপাশে সবকিছু বন্ধ তখনও তিনি গাড়ি ভাড়া করে অসুস্থ শরীর নিয়ে শহরের বড় পোস্ট অফিসে আসছেন। কেন? না তার লেখক বন্ধুরা পত্রিকা পাচ্ছেন না। আমি জানি না আর কোনো মানুষ তার পত্রিকার জন্য এইভাবে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন কিনা।
এবাদুলদার পত্রিকা সম্পর্কে যাদের সামান্য ধারণাও আছে তারাও জানেন, তাঁর পত্রিকার খুব কম পাতা মানে অন্তত চারশ পাতা। সবচেয়ে বেশির তো কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। এক একজনকে পত্রিকা পাঠাতে খরচ হতো দু থেকে তিনশ টাকা। তিনি হাসিমুখে সে সব ব্যয় করতেন। আমি পত্রিকা পাই নি, উনি একই পত্রিকা আবার পাঠিয়েছেন। কখনও কোনো নেতিবাচক কথা তাঁর মুখ থেকে শুনি নি। একবার তো আমাকে গল্প করতে করতে বলেই ফেললেন, তার পত্রিকার সাম্প্রতিক সংখ্যার খরচ প্রায় দেড় লক্ষ টাকা। শুনেছি মেয়ের বিয়ের জমানো টাকা খরচ করেও তিনি পত্রিকা করেছেন।
লিটল ম্যাগাজিনের ইতিহাসে যে ক’জন মানুষ পত্রিকার জন্যে নিজের জীবনের সবকিছু তুলে দিয়েছেন এবাদুল হক অবশ্যই তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তাঁর পত্রিকায় লিখে এবং তাঁর ভালোবাসা পেয়ে আমি ধন্য।