• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ৬০)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৯৫
এক একদিন এমন হয় পড়ানো না থাকলে সারাদিনে একটা কথাও বলি না। কখনও আমার এমন মনে হয় না আজ আমি একজনের সঙ্গেও কথা বললাম না। এমন ভাবনা আমাকে যেন অনেকের থেকে দূরে ঠেলে দেয়। মনে হয় আমিই যেন কারও সঙ্গে কথা না বলে দূরে সরে আছি। আসলে তা তো নয়। খুব ছোটবেলা থেকেই এটা আমার হয়। আমি কথা বলি না, আমায় যেন কেউ কথা বলায়।
কথা বলি কেন ? আসলে আমার অনেক বক্তব্য আছে। নিজেকে নিয়ে, চারপাশের আরও পাঁচজনকে নিয়ে। একসময় কত কথা না বলেছি। আর আজ সারাদিন প্রায় চুপচাপ। পারলে পুরো চুপচাপ। তাহলে কি আজ আর আমার কিছুই বলার নেই ! চারপাশের কোনো কিছু নিয়েই কি আজ আর আমি ভাবিত নই ?
খুব শৈশব থেকেই আমরা শিখে আসছি এবং সেই সঙ্গে সমানতালে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছি —– সবাই খারাপ আমি ভালো। আত্মসমালোচনা করতে আমরা কোনো সময়েই প্রস্তুত থাকি না। তাই দিনের পর দিন নিজেকে না খুঁচিয়ে আমরা নিজেদের এমন একটা আকৃতি বানিয়ে ফেলেছি যে, সেটা নিয়ে নাড়াচাড়া করা আমাদের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যখন নিজেকে কোনোভাবে আয়নার সামনে এনে ফেলতে পারি তখন লজ্জায় মাথা নিচু হয়ে আসে। তখন মনে হয় কথা বলার নামমাত্র যোগ্যতাও আমাদের নেই। নিজের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্যে এটুকু কারণই যথেষ্ট।
আজ মনে হয় আমি কে ? আমরা প্রত্যেকেই আমাদের মতো করে নিজেকে বড় করে তুলেছি। একটা সময় পর্যন্ত আমাদের প্রত্যেককেই কিছু না কিছু বলতে হয় ঠিকই। কিন্তু পাশাপাশি এটাও ঠিক, এখানে কাউকে কিছুই বলার নেই। সবাই নিজের নিজের মতো করে পথ হেঁটে চলেছে। আজ যখন পিছন ফিরে তাকাই তখন লজ্জা লাগে। কত কিছুই না চারপাশের মানুষকে বলেছি। শিক্ষক হওয়ার জন্যে এই কাজ অনিচ্ছা সত্ত্বেও করতে হয়েছে। তাই আজ নির্জনে চুপচাপ বসে থেকে সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করি।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।