সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ৪০)

সোনা ধানের সিঁড়ি

৭৪
আমার চোখে পৃথিবীতে সবচেয়ে অশ্লীল শব্দ হলো কোনো মানুষের পদবি। এই শব্দটির এমনই এক ক্ষমতা যে, একটা মানুষকে মুহূর্তের মধ্যে নোংরা আবর্জনায় ভরিয়ে দিতে পারে। আমি যা নয় আমাকে তাই রূপে লোকসমাজে পরিচয় করিয়ে দেয়।
খুব ছোটবেলায় বন্ধুর বাড়ি গিয়ে যখন তার মা ঠাকুমাকে প্রণাম করতে যেতাম সঙ্গে সঙ্গে তারা পা সরিয়ে নিতো। আমি ঠিক এর মানে বুঝতে পারতাম না। শুধু তাদের মুখে একটা কথাই শুনতে পেতাম, “বামুনের প্রণাম নিলে মহাপাপে নরকবাস হবে।” পাশাপাশি অনেক বাড়িতেই নিজের পরিচয় না দিয়ে বয়স্ক দাদু বা ঠাকুমার পায়ের ধুলো নিয়েছি।
এই তো এক সপ্তাহ আগে বাংলাদেশের এক সম্পাদক বন্ধু আমাকে বলছিলেন, “আমরা তো মুসলমান তাই আপনি যদি আপনাদের হিন্দুধর্মের দুর্গাপুজো নিয়ে কিছু লেখেন তাহলে আমরা অনেক কিছু জানতে পারি।” আমি তাঁকে বললাম, “আমি হিন্দু আপনাকে কে বলল ? ঈশ্বর এবং ধর্ম নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র কোনো আবেগ নেই”। তাহলে এই যে আমি যা নই আমাকে তা সকলের সামনে উলঙ্গ করে জানিয়ে দিল আমার পদবি।
আমি গোঁড়া হিন্দু পরিবারের একজন ছেলে। যদিও আমার বাবা মা এই চূড়ান্ত গোঁড়ামি থেকে অনেকটাই বেরিয়ে আসতে পেরেছিল। খুব ছোটবেলা থেকেই আমি আমার বংশের ধর্ম আর ঈশ্বর নিয়ে যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সেখান থেকে সবসময় নিজেকে বার করে রাখতাম। এমনকি স্কুল ও কলেজ জীবনে আমার বন্ধুরাও জানত, আমার থাকাকালীন সময়ে আড্ডার মধ্যে কোনোভাবেই যেন ধর্ম আর ঈশ্বরের প্রসঙ্গ আনা যাবে না। অবশ্যই তোমার ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দ থাকবে কিন্তু কখনই তুমি তাকে সামাজিক ক্ষেত্রে টেনে আনতে পারো না।
একমাত্র মানুষ ছাড়া কোনো কিছুর পরিচয়ে আমি পরিচিত হতে চাই না। আমি মনে করি মানুষ ছাড়া আর যেকোনো আলাদা বিভাগের পরিচয় একজন মানুষের কাছে চরম অপমানের।

ক্রমশ…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।