অনেক বছর আগে বিমল মিত্র বলে গেছেন, তিনিই প্রকৃত লেখক যিনি সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় থামতে জানেন। সমগ্র পৃথিবীতে রমাপদ চৌধুরী দু’একজনই জন্মগ্রহণ করেন। লেখকদের লেখক তাঁকে এইকারণেই বলা হতো। লেখায় পুনরাবৃত্তি আসতে পারে শুধু এই আশঙ্কায় তিনি লেখা থামিয়ে দিলেন। তার কোনো লেখাই এই দোষে দুষ্ট নয়। কিন্তু হতে পারে এই ভাবনা ভেবে তিনি কলম থামিয়ে দিলেন। সত্যিই তিনি বাংলা সাহিত্যের বিরল মানুষ ছিলেন। এমনকি আত্মজীবনীটার জন্যেও কলম ধরলেন না।
বাংলা সাহিত্যের সব লেখকই রমাপদ চৌধুরীর বিপরীত বিন্দুতে অবস্থান করেন। আর এটাই আমরা দেখতে অভ্যস্ত। যখন কোনো লেখককে ফিরে তাকাতে হয় না, যখন কোনো লেখকের লেখার বিচার হয় না, শুধুমাত্র অমুকের লেখা বলেই তাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয় আর সেটাই হয় লেখকের প্রকৃত সফলতা। বছরের পর বছর ধরে এই নিয়ম চলে আসার কারণে বাংলা সাহিত্যে যা আবর্জনা জমা হয়েছে তা আর কোনো সাহিত্যে হয়েছে কিনা এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। যে আবর্জনার নমুনা পাওয়া যায় প্রতি বছর বাণিজ্যিক পত্রিকাগুলোর শারদ সংখ্যা উল্টেপাল্টে দেখলে।
এর জন্যে শুধু লেখক নয় অনেকাংশে পাঠকও দায়ী। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, বর্তমানের একজন প্রথম সারির আবর্জনা সৃষ্টিকারী জনপ্রিয় কবির ব্যক্তিগত ব্লগে একদিন উঁকি মেরে দেখেছিলাম শুধু এইকারণে যে তিনি এখন পরিবেশে কেমন গন্ধ ছড়াচ্ছেন। দেখি একটি চতুর্থ শ্রেণীর কবিতাতেও প্রায় ষাটের ওপর মন্তব্য। একটাও বিরূপ মন্তব্য নেই ( অবশ্য বিরূপ মন্তব্য করলে সেই কবি ক্ষমতার দম্ভে উন্মত্ত হয়ে স্বমূর্তি ধারণ করে কলম ফেলে তরবারি তুলে নেবেন এবং সেই মন্তব্যকারীকে এমন অন্ধকারে ছুঁড়ে দেবেন যে তিনি যেন আর কোনোদিন সেখান থেকে উঠে আসতে না পারেন )। এমন মন্তব্যকারীদের বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো। অবশ্য এটাও ঠিক চতুর্থ শ্রেণীর কবিতা মাথায় নিয়ে যারা নাচে তারা কি সত্যিই জীবিত? প্রভাব প্রতিপত্তিশালী কবির বাজারী ক্ষমতার আলোকে যারা আলোকিত হতে চায় তারা কি সত্যিই জীবিত? আর তাই এইসমস্ত মৃত পাঠকদের হাতে পড়েই বাংলা সাহিত্য দিন দিন রসাতলে যাচ্ছে ।