• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে হরিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় (পর্ব – ৬৮)

সোনা ধানের সিঁড়ি

১০৪

আমি আজীবন রোদ্দুরের মানুষ। রোদ্দুরই আমার সবসময়ের ধ্যান জ্ঞান। রোদ্দুরের মধ্যে ডুবে থাকতে পারলে আমি আর কিছু চাই না। কিন্তু তবুও জানলায় তো চোখ রাখতেই হয়। আমার প্রতিবেশীর যে আমগাছের ডালটা পাঁচিল পেরিয়ে আমার চৌহদ্দির মধ্যে ঢুকে পড়েছে সেই ডালের হাত ধরে প্রতিবেশীর দুয়ারে না গিয়ে কি আমি পারি। ঠিক এইভাবেই বর্ষা একদিন আমার মনের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল।
স্কুল থেকে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতাম। যাতায়াতের পথে একটা বটগাছ পড়ত। বটগাছের গায়েই একটা শিবমন্দির। স্কুল থেকে ফেরার পথে বটগাছের কাছে এসে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়াতাম। আসলে ওটা ছিল আমার একটা আশ্রয়। মনে হতো আমার কতো দিনের চেনা। বৃষ্টি পড়লে আমার বটগাছের কাছে খুব যেতে ইচ্ছা করত। বাড়ির লোকের চোখ এড়িয়ে কোনো কোনো সময় পালিয়েও যেতাম। বৃষ্টির একেবারে শুরু থেকে সেই যখন মেঘে মেঘে আকাশ কালো হয়ে আসতো তখন থেকে বটগাছের নীচে থেকে এক মুহূর্তের জন্যেও নড়তে ইচ্ছা করত না। বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে কিন্তু বটগাছের নীচে তখনও পর্যন্ত শুকনো। ঠিক মনে হতো আমার দাদু। বৃষ্টির হাত থেকে নাতিকে আগলে রেখে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর থেকেই গায়ে এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে বৃষ্টির জল এসে গায়ে লাগতো। তখন মনে হতো দাদু তার নাতিকে হাজার হাত দিয়ে বৃষ্টির ছোঁয়া দিচ্ছে। আরো সময় গেলে ভিজে একেবারে চান করে যেতাম। দেখতাম বটগাছের সারা শরীর দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। নাতিকে সঙ্গে পেয়ে বর্ষার বৃষ্টিতে দাদু চান না করে পারে।
হাঁটতে হাঁটতে যেদিন মাঠের গভীরে চলে যেতাম সেদিন চলার আনন্দেই ভুলে যেতাম বর্ষাকালের কথা। আসলে দুপুরের রোদ আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকত। সেই ডাক যে আমাকে অনেক কিছু ভুলিয়ে দিত। মাথার ওপর রোদ্দুর মুছে গিয়ে কখন যে এক আকাশ মেঘ এসে হাজির হয়েছে চোখেই পড়ে নি। যখন খেয়াল পড়ল তখন গায়ে বড় বড় বৃষ্টির ফোঁটা। ফিরে আসার পথে দু এক পা এগোতেই শুরু মুষলধারে বৃষ্টি। যাওয়ার পথে রোদ মাখার আনন্দ আর ফিরে আসার পথে বৃষ্টি মাখার আনন্দ। মনে হতো রাতারাতি আমি কত বড় হয়ে গেছি। দেখতাম কাছে দূরে অনেক মানুষ মাঠে কাজ করছে। ওরা ভিজলে ওদের যেমন কেউ বকার নেই। আমিও এখন ঠিক ওদের মতো। ওই বয়সে হঠাৎ করে বড় হয়ে যাওয়ার আনন্দের যে স্বাদ বর্ষার বৃষ্টি আমাকে তা প্রথম এনে দিয়েছিল।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।