ফুটফুটে ছোট্ট মেয়ে। প্রজাপতির মতো দেখতে। নামটাও তা-ই — তিতলি ! একরাশ কোঁকড়ানো চুলে ভরা মাথা আর আশ্চর্য মায়াময় দু’টি চোখ ! ওকে দেখলেই ভালোবাসতে ইচ্ছা করে — একটু গাল টিপে দিয়ে কিংবা মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে আদর করতে ইচ্ছা জাগে ! তো সেই তিতলি তার বাবার কাছে আবদার করেছে দুই-হাতে মেহেন্দি করবে ! সামনে পুজো, অতএব ….!
তিতলির বাবা প্রদীপ অগত্যা মেয়েকে স্কুটারের পেছনে বসিয়ে পরাগ মার্কেটে চললো। ওখানেই ফুটপাতের ওপর সারি দিয়ে মেহেন্দি করবার কারবারিরা বসে। তেমন একটা ভিড় ছিল না। তাই তাড়াতাড়িই হয়ে গেল মেহেন্দি লাগানো। দোকানি একটু অপেক্ষা করতে বলল, কেন না ওগুলো শুকাতে সময় লাগবে। কিন্তু প্রদীপের তাড়া ছিল। অগত্যা প্রদীপ স্কুটারে স্টার্ট দিল, তিতলি খুব সাবধানে দুই হাত উঁচু করে বাবার পেছনে বসলো যাতে করে ওর মেহেন্দি মুছে না যায়। প্রদীপ খুব ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে লাগলো। কারণ রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ — রাস্তা ভেঙে গেছে ভীষণ রকম ভাবে। এখানে-ওখানে খানাখন্দ, অসাবধানে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে !
— আরে ! আরে ! যাঃ ! যাঃ ! যাঃ ! গেল ! হুড়মুড় একটা শব্দ। রাস্তার খন্দে পড়ে টাল খেয়ে প্রদীপ উল্টে পড়েছে গাড়িসহ ! কিন্তু তিতলি ?
মুহূর্তে পেছন থেকে ধেয়ে আসা ট্রাক হুস্ করে চলে যায় ! সমবেত “হায় হায়” শব্দের মধ্যে দেখা যায় একরাশ রক্তমাখা তিতলির তালগোল পাকানো দেহটা পড়ে আছে ! ওকে আর চেনা যাচ্ছে না ! কিন্তু তখনও ওর হাত দু’টো উচু করে ধরে রাখা আছে এমন ভাবে — যাতে ওর মেহেন্দি মুছে না যায় !