কবিতায় বলরুমে জি কে নাথ

 

প্রবাদ

শব্দ ভেঙে ভেঙে নেমে যায় পিচ্ছিল জলের গুহায়, মগজের বাইরে ও ভেতরে দোলনার মতো নিরন্তর আসা যাওয়া অনুভূতির ভিতর ভেসে ওঠে অনন্ত আশ্রয়
মৃদু অন্ধকারে গড়া সংসারের শরীর ছিঁড়ে বান্ধবশূন্য প্রান্তরে একাকী ভিতর ঝাঁপ
থেমে যায় আলো চিরে অন্ধকারে সমস্ত কথার পরাভবে অক্ষরেখামালা, ভেসে আসে ভিজে লাজুক স্বর
পুরানো নোনা দেওয়ালের সাথে মেশা পেটের ফাটল চিহ্নে জড়িয়ে যায় বিমর্ষ গোধূলির পড়ন্ত আলুথালু ছায়া
ঋজু মেরুদন্ড জুড়ে ফুটে ওঠে শ্যামবাজারের ঘৃতের বিজ্ঞাপনের মতো শোণিত স্বেদের নীলিমা
প্রসারিত ভূমিখণ্ডে বিস্ফোরিত দিগন্তের কাঁটাতারে বোধের বৃত্ত টানে আমাদের ক্রমশ শূন্যের ভেতর দিকে
নিজের ভিতর থেকে টান দেওয়া কুশ পুতুলের মুখ খসে ভেসে যায় জন্মের শিকড়….ভেসে যায় স্মৃতি
জীবনের উষ্ণ আলো মরে আসে ধীরে গ্রহণ শূন্যে , সংখ্যাহীন আকৃতি ওড়ে মৃত্যুখচিত রাতনক্ষত্রের অতল নীল অন্ধকার আকাশে
বুকের বিষ উগরে অবয়বছিন্ন পদে পদে দুঃখের যে মধ্যবিত্ত ছাপ ছুঁয়ে যায় নির্ভুল স্পর্শময় ধ্বনিআলো
গানের শরীরে অবেলায় ঢলে পড়া পাল তোলা হৃদিহীন গৃহস্থের নৌকা ভাসে আগল খুলে কুয়াশাকঠিন সারাবেলা
নিরেট পাথরের মতো পিচকালো দীর্ঘ আঁধারযাত্রা বরাবর নেমে আসে ছায়াময় মূর্ত পৃথিবীর নিজস্ব উঠোন
শরীরের দূরত্বে ফুটে ওঠা ছায়ার মানুষ হেঁটে যায় মাটির শ্বাসে অলৌকিক পরিক্রমায়
বীজের ধ্যানে মগ্ন চৈতন্য এর ঢালে গড়ায় ছায়া ব্যাকুল স্মৃতির কন্ঠহার
আলোর অন্ধকারে বিস্মিত জোছনার কুঁড়ি খসে, সুরে ভেসে যাওয়া নিজের ছায়ার উপর উড়ে এসে কথা বলে হৃদব্যাকুল পাখি
পাঁজর খুলে নিয়ে চোরা আলো ছড়িয়ে যায় লতাঘেরা বহমান লালাভ তৃষ্ণার দূরে নদীর অন্তঃস্থলে
কাছে যাই, নেমে যাই কুসুম রোদের উজানে ডানা মেলে ভাষাহীন চোখের মরুবিস্তার
সমুদ্রলবনাক্ত বিষাদে পোড়ে শ্যামলকিনারে উত্তাল পুলক
ডেকে ওঠে নিঃসঙ্গতা , সুনির্জন চিরে নিবিড় মধ্যিখানে শস্যধূপের গন্ধে রক্তিম তোমার স্বভাব
ঘড়িভাঙা তরঙ্গের তল থেকে উঠে আসে অহরহ জলরাশি , সব কোলাহলের দূরে ভেসেছি বহু মাটি জল পথ স্রোতে মুদ্রাহীন বহুদূর নিঃশব্দ প্রবাসে
প্রখর সবুজ আলোর নীচে স্বতোৎসারী হ্রদের শীতল ছায়া পড়ে আত্মমগ্ন স্মৃতিঘোর আধারে
নিরবিচ্ছিন্ন অতীত হাওয়ায় ভাসে ভেজা অরণ্যের বন্যউদ্ভিদ গন্ধ , জটিল জলের জট খুলতে খুলতে ক্রান্তিরেখা পেরিয়ে যায় লোলচর্ম নিহত ভাবনার খুনি অস্তিত্বের বন্ধনীতে
আকাশজোড়া খই ছড়ানো গমরঙা জোছনায় উড়ে যাচ্ছে শূন্যতায় জমানো অন্ধ মধ্যরাতের প্রতিহত পলি
জীবন ছড়ানো হলুদ হওয়া বনেদি ঘাসে
মাটি থেকে বুক তুলে
কঠিন স্তব্ধতায় জল ভেঙে
পড়ে আছে আজ
শিশিরপোড়া পাষান মূর্তি পাশাপাশি
গতিময় স্তরের গভীরে স্বপ্নশিকড় মেলেছে শেফালীর ঘ্রাণ জড়ানো ঝুরো হাড়ের শুদ্ধতায় মরচে বাতাস ভরা বাংলার নদীরা
স্যাঁতসেঁতে থিতু অবকাশের ভিতর ভীষণ রকম ঘন হয়ে ওঠে ধস নামা কঠিন পাহাড় দিয়ে ঘেরা তোমার সবুজরাঙা দেহ, আরক্ত বরফ হিম দীর্ঘশ্বাসে নেমে যায় সরসরিয়ে বুক পাতা বাদামি চুলের ছায়ায় মাটির বাস্তুসাপ একে একে
সংক্ষিপ্ত হয়ে আসে হাওয়াপথের ভিতর পলাশভরা লাল শিরাময় দূরত্ব , ভিতরে ভিতরে জড়িয়ে ধরে সহজ কথার মুখ ঘোরানো পেঁচালো ছায়ারা
সাঁকো পার হয়ে আসক্তির ভিতরে মাইল মাইল দীর্ঘ অন্ধকারপুঞ্জে হাত মেলে ঝুঁকে যায় বিষণ্ন শীতের রাত পথিক
ভারী রাত চোখের পাতায় ভেজে ওঠে ভুস করে শ্রাবণমেঘের ঘন শাখাপ্রশাখায় হিংস্র বনজ উড়ন্ত চুলরাশি
উষ্ণতাবহ বুকের ছিলার ভিতরে দাঁড় টানি আনত মিথ্যে জীবনকুহক , কুঁড়ে খায় তলে তলে অনুভবের প্রদাহ
ধূমল রাত বেড়ে যায় ক্রমে, টুকরো টুকরো শব্দের ভিতর ঘুরে দাঁড়ায় বিদায়ী মুদ্রা
ক্ষয়ভুক ছিন্ন চেতনার মুখোমুখি দেখি শ্রমের অধর মুখ
ধরে আছে দেশকালের দ্বিধা
ধুলোয় ভাসমান কবেকার মুখে রাঙানো বিবর্ণতায় ভাসে ,ভেসে যায় সন্ধ্যার প্রবাহে সংলগ্ন সংসার
চাঁদের হলুদ শয্যা ভেঙে পথে নামি ,নাগমালা জড়ায় নষ্ট দেহকুসুম
থৈ থৈ কালচে জলরেখায় গড়ানো ঢালু জলে ভাসন্ত মুখ ,
হারানো স্মৃতির পাথুরে পথে পথে আবর্ত শস্যের চোখে ঢেউ তোলে,
প্রবল চাপে খুলে যায় বিষের রজ্জু , আহত দোষের গিঁট
জলের ফাটলে রেখেছি সুগঠিত গভীর মজা তৃষ্ণা , রংছুট মাটির কোলে চাঁদ ঢলে , দীর্ণ হয় সরস বুকে দূরটান
ঢেউ ভাঙা তীব্র যন্ত্রনায় মাঠের সবুজে শায়িত ব্যর্থ স্বপ্নের শুষ্ক খোলস ওড়ে দৃষ্টির হাওয়ায়
সাতপুরুষের তুফান ভেঙে তালুয়ে ছাপিয়ে নেমে আসে ক্ষিপ্র আবেগে গঙ্গা , জ্বলে ওঠে হাজার ভিড়ের চতুর্দিকে পথ পারাপারে এপার ওপার
চলে এসো সত্বর পা চালিয়ে কথার মুখোশ কিংবা মুখোশের কথা এমত প্রবাদ ছিঁড়ে …..
দেখো কী আশ্চর্য , সাঁকোর দূরে লেগে থাকে কার স্বেচ্ছাচার ?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।