গোত্র – Film Review

পরিচালনা : নন্দিতা রায় , শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

আজ “গোত্র” সিনেমাটি দেখতে গেছিলাম। শিবপ্রসাদ নন্দিতা মানেই কমার্শিয়াল সিনেমার মোড়কে একটা সামাজিক ম্যাসেজ। যখন গোত্রের বিষয়টা আগে শুনেছিলাম তখন নিজের একটু খুঁতখুঁত করেছিল বটে ! আবার এই ধর্ম !!! ধর্ম আর নারীর দুর্দশা ওই থিয়েটার থেকে সিনেমা …দেখতে দেখতে আর ভালো লাগে না এখন। কিন্তু আজ সিনেমা দেখতে গিয়ে মনে হল ভাবনার বিস্তার কত সুন্দর হতে পারে। কত জটিলতাকে চাইলে আমরা কত সহজ করতে পারি। শুধুমাত্র ধর্ম ভাবনার ম্যাসেজ নয়, হাসাতে হাসাতে প্রতি মুহূর্তে ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে সামাজিক বা মানসিক ছোটো ছোটো অনুভূতি।।
সিনেমাটা দেখে এসে অনেক এলোমেলো কথা মনে পড়ছে। এমনিতে আমার পুজো, ধর্ম , ভক্তিভাব এসব একটুও নেই। কিন্তু মন্দির, মসজিদ, গুরুদুয়ারা কোনো জায়গা ঘুরতে বাদ রাখি না। আমার অন্যতম একটি প্রিয় জায়গা অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির। কিন্তু পুরীর মন্দিরে জীবনে ঢুকব না। বিয়ের আগে সেজে গুজে অষ্টমী আর সরস্বতী পুজোর অঞ্জলি অবশ্য দিতাম ( পেটপুরে কাউকে না জানিয়ে খেয়ে) ছেলেরা ইমপ্রেসড হতো বলে। বিয়ের পর ও পাঠ চুকেছে তাই পাড়ার পুরোহিত প্রতিটা শব্দের মানে আমায় বলতেও পারে না, তাই আমিও ও পাঠ চুকিয়ে দিয়েছি। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার(১৯৯৭) পর কলেজ ভর্তির সব ফর্মে  রিলিজিয়ান কলামে আমি ক্রশ করে দিতাম। দুটি কলেজ আমায় এই কারণে ভর্তি নেয় নি। রেগে গিয়ে আজকাল খবরের কাগজে লম্বা একটি চিঠি লিখেছিলাম, যেটি প্রকাশিত। তা নিয়ে চিঠির কলামে বেশ তর্ক বিতর্কও চলেছিল। প্রসাদ খেতে আমি দারুণ ভালোবাসি। বলবেন…. তবে সবাই যদি পুজো না করে তো প্রসাদ জুটবে কি করে ? কে বারণ করেছে ? করুন না। প্রসাদ, উৎসব সব হোক। কেউ অমন খিচুড়ি, নাড়ু, কেক, সিমুই, বিরিয়ানি ছাড়তে পারে ? আমি তো খুব দুঃখ পাব।আমার শাশুড়ি পুজো প্রাণ একজন মানুষ ছিলেন। ছট থেকে কার্তিক যীশু থেকে আল্লা সবই ওনার কাছে পুজো ছিল। উনি মানসিক শান্তি পেতেন। মনে হয় মাঝে মাঝে এখন…. উদার কে বেশি আমি না উনি ? হয়তো উনিই। বলতে যেটা চাই গোঁড়ামিটা বন্ধ হোক শুধুমাত্র। আর ধর্মকে অন্য মোড়কে স্বার্থের জন্য ব্যবহার করা।
গোত্র সিনেমাটি অসাধারণ আমার কাছে ঠিক এই কারণেই। ধর্মের বিরোধ দেখানো হয়নি, নাস্তিক বলে গর্বও নয়, দেখানো হয়েছে মানবিকতার জন্য ব্যবহার হোক ধর্ম যা ধারণ করি আমরা।
নাইজেল আকারার অসাধারণ অভিনয়। মানালির দে (ঝুমা)  চরিত্র অকারণ বেশি নাটকীয় মনে হয়েছে। অনসূয়া মজুমদারের অনবদ্য অভিনয়। যদিও কমার্শিয়াল ফিল্ম তবুও সমুদ্র তীরে নাচ /গান অপ্রাসঙ্গিক লেগেছে। সিনেমার ভাবনার সাথে অপরিণত অনেকটাই ও অকারণ। যে চরিত্র সাহিত্য নিয়ে এতটাই জানেন তাঁর হাতে একটি দৃশ্যে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় এর “পথের পাঁচালী” গ্রন্থটি না ধরিয়ে “আম আঁটির ভেঁপু” পরিচালকের ধরানো উচিৎ ছিল।

তবে সবার একবার দেখা উচিত। পুরো সিনেমা সময় জুড়ে হাসবেন। বাইরে এসে ভাবতে হবেই , ভাবাবেই কিছু অনুভূতি।

চন্দ্রাণী বসু
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।