ছোটদের জন্যে বড়দের লেখায় গৌতম বাড়ই (ধারাবাহিক গল্প: পর্ব – ২)

ছুপুখরীর কোঠীবাড়ি

আমি যখন পুরনদের বাড়ির ভেতর প্রথম ঢুকতে যাচ্ছি দেখি ওদের বাড়ির বাইরে একটা বিচ্ছিন্ন ছোট ঘর আর সেই ঘরের দরজায় কাঠের ছোট্ট সোফায় বসে পা দোলাচ্ছে একটা অল্পবয়সী লোক।আমাদের দিকে চাইলেন আর পুরনের দিকে তাকিয়ে জোর করে একটু ঠোঁট ফাঁক করে হাসলেন।পুরন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললে-আমার ছোটচাচু।
পুরনদের বাগিচা চাষ।আদা আর এলাচের।সব এখান থেকে খচ্চরের পিঠে করে বাস রাস্তায় যায় আর ওখান থেকে ছোট লরীতে করে শিলিগুড়ির পাইকারি বাজারে।সেখান থেকে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেয় আবার বড় বড় লরীতে করে।বড় এলাচ বস্তাবন্দী হয়ে সব ওষুধের কারখানায় যায়।ওদের পৈতৃক ব্যবসা এবং এ অঞ্চলে আশপাশের বাড়ি যেগুলো দেখতে পেলাম তাতে ওদের এদের মধ্যে অবস্থাপন্ন বলা যেতে পারে।
নেপালিদের দেবতা শয়তান বদমাশরা সব পাহাড়ের মাথায় থাকে।ইয়েতিরাও নাকি নেমে আসে কখনো সখনো।শয়তানেরা সবসময় থাকে না।কিছু বছর বাদে বাদে আসে।এরকম এক শয়তান নাকি আজ বছর খানেক হলো ঐ কোঠীবাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।ছুপুখরীর কোঠীবাড়িতে তাই রাতের অন্ধকারে শয়তানের চোখের আলো জ্বলে।
আমাদের যখন ভোরের আলোয় জ্ঞান ফিরে এলো দেখলাম আমরা পুরনদের বাড়িতে শুয়ে আছি।ঘরে বাইরে লোকজন।পুলিশের লোক উর্দিপরা দাঁড়িয়ে আছে।অনেক পুলিশ তখন।
আরে!সেই দু’জন তো পুলিশের লোক যাদের ছুপুখরীর জঙ্গলে দেখেছিলাম।ধীরে ধীরে বেলা হতেই জানতে পারলাম সব–
ছুপুখরীর চড়াই থেকে ঢালে নেমে গেলে পশ্চিম দিকে যে কোন রাস্তা ধরে নেপাল দেশে ঢোকা যায়।আর ঐ নেপালের রাস্তা ধরে প্রায় বিগড়ে যাওয়া পুরনের ছোটচাচু ড্রাগসের ব্যবসায় মেতে উঠেছিলেন।অল্প আয়েসে অনেক পয়সার লোভে।পরিত্যক্ত কোঠীবাড়ির ভেতরে লেনদেন চলতো।আর ঐ সব আলো জ্বালিয়ে ভয় দেখানো হতো।পাহাড়ি সরল সিধে মানুষ অন্ধকার নামলেই ওদিকে মাড়াতো না।নারকটিকস্ ডিপার্টমেন্ট এবং চোরাচালান প্রতিরোধ বিভাগে খবরটা পৌঁছে যায় কিছুদিন আগে, তখন থেকেই ঐ দুজন পুলিশের লোক এ জঙ্গলে আস্তানা গেড়ে সব খোঁজ খবর নিতে থাকে।কুকুর বেড়াল ঐ সব দিয়ে আর ওদের লোকেদের দিয়ে আস্ত একটা ড্রামা করে ভক্তবীর রাই অর্থাৎ পুরনের ছোটচাচুকে ধরা হয়।
তাহলে জানালায় ভয় দেখালো কে?ও ছিলো পুরনের ছোটচাচু বা কাকা।আমরা যাতে দরজা খুলে বাড়ির বাইরে না আসি।বাচ্চা কুকুরটি ছিলো ওয়েল ট্রেইনড মাদক পাচারকারীদের।কুকুরটি এসে পুরনের কাকাকে খবর দিতো বিভিন্ন ভঙ্গীমায়।তাই পুরনের কাকা ভক্তবীর রাই ঐভাবে ছুটেছিলো সেদিন ওর পেছনে।পরে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ছয় বছরের কারাদণ্ড হয়।
কার্শিয়াং ফেরবার সময় আন্টি এসে আমার হাত ধরে বলেছিলো–ব্যাটা এক্ষুণি বাড়িতে এসব কিছু বলো না।পরে সময় করে বলো।
আমি আন্টিকে কথা দিয়েছিলাম আর তা সত্যি রেখেওছিলাম।
ছুপুখরীর কোঠীবাড়ির সেই রহস্যরাতের গল্প আপাতত শেষ।কোঠীবাড়ির ভেতরে কত রহস্য যে কথা বলে!

শেষ

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।