• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক বড় গল্পে গৌতম বাড়ই (পর্ব – ১৭)

স্মৃতিকথার ঝিকিমিকিরা

“খেলাধূলা গড়ে জাতি। সঞ্চয় গড়ে দেশ।”

ফটো সৌজন্যে: গৌতম বাড়ই

তখন কলকাতার লবণহ্রদে একটি বড়সড় স্টেডিয়াম গড়বার কাজ চলছে। আমরা খুব ছোট তবে একদম ছোটো না। ইস্টবেঙ্গল বা মোহনবাগান, মানস বিদেশ সুব্রত শ্যামথাপা মনোরঞ্জন শিবাজি ভাস্কর গাঙ্গুলী হাবিব, আকবর নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকি। লবণহ্রদ বুঝতে পারলে না তো! আরে এখনকার সল্টলেক সেক্টর- ৩ এর যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণ। সেইসময়কার এক বিখ্যাত বেসরকারী ফাইনান্স কোম্পানির বিজ্ঞাপনের ক্যাচ লাইন ছিল– ” খেলাধূলা গড়ে জাতি, সঞ্চয় গড়ে দেশ।” আর সঙ্গে নির্মীয়মাণ ঐ সল্টলেক স্টেডিয়ামের ছবি। রেডিওতে খেলা শুনি আর আমাদেরও একটি ফুটবল বা যে কোন খেলার মক্কা- মদিনা বা কাশী- গয়া ছিল সবেধন নীলমণি তিলক ময়দান। বর্তমানে এখন  দেশের মধ্যেও অতি পরিচিত কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম তার নাম। তিলক ময়দান নামটি মুছে গিয়েছে। কিছু আন্তর্জাতিক আর বড়-বড় ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে এ নামটি দেশের ক্রীড়া- প্রেমী মানুষেরা জানে।  ঝড় জল রোদ বৃষ্টিতে বন্ধুরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কত না খেলা দেখেছি। টিভিতে ইউরোকাপ আর কোপা- আমেরিকা দেখতে গিয়ে স্মৃতির মণিকোঠায় ভেসে উঠল খেলার দুনিয়ার পুরানো সেই সব কাহিনী। পিডব্লুডি-র পিচের ড্রাম কাঠ বাঁশে ঘেরা সেই মাঠ। একদিকে কাঠের গ্যালারী। তখনও আইএফএ শিল্ড এবং বিভিন্ন বড় প্রতিযোগিতার আসর বসত আমাদের ঐ তিলক ময়দানে।

ফটো সৌজন্যে: গৌতম বাড়ই

আর এটাও সত্যি আমাদের এই শহরটি খেলার শহরও বটে। টিটি বা টেবল টেনিসের ব্যাট হাতে তুলে নেয়নি এ শহরে তেমন লোক খুঁজে মেলা ভার। স্কুলে- কলেজে, প্রায় প্রতিটি ক্লাবে সব জায়গায় ছিল এ খেলার আয়োজন। খেলা পাগল মানুষের ভিড়ে এ শহরে খেলার জগতে অন্যরকম এক উন্মাদনা ছিল। স্মৃতির ঝাঁপিতে তাই আজকে ঝিকিমিকি করছে সেই ফেলে আসা খেলার কথা, খেলার দুনিয়ার কথা।

ফটো সৌজন্যে: গৌতম বাড়ই

আমরা তখন সেভেন আর সে তখন ক্লাস নাইন সম্ভবতঃ। আমার ক্লাসের বন্ধু শোভন টাউন স্টেশনের গলিতে কনুই দিয়ে গুঁতো মেরে বলল— “দেখ।দেখ। ঐ মেয়েটাকে।” আমাদের উল্টো দিকে প্রায় মুখোমুখি এসে পড়েছে মেয়েটি। হ্যাঁ দেখলাম।তবে এক ঝলক দেখে বললাম– “কিন্তু কী?” শোভন অবাক হয়ে বলল— ” কেন চিনতে পারলি না ?  আরে ঐ তো ন্যাশনালে ব্যাডমিন্টনের জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন মধুমিতা গোস্বামী। তারপরে দৌড়ে গিয়ে পেছনে ঘুরে মুখটি দেখেই এসে শোভনকে বললাম- “তাই তো! একদম ঠিক!” কারণ খেলার আসর বা খেলার কথায় আর কলকাতার এক দৈনিক খবরের কাগজে দেখেছিলাম মধুমিতা গোস্বামীর ফটো। জ্যোৎস্নাময়ী গার্লস স্কুলে পড়ত। তারপরেও প্রায় দেখতাম এই ক্রমে ভারতে বিখ্যাত হয়ে ওঠা এই ব্যাডমিন্টনের মহিলা খেলোয়াড়টিকে। আর একঝাঁক টেবিল টেনিস খেলোয়াড় উঠে আসছে শিলিগুড়ির সায়গল ইনস্টিটিউট বা বিভিন্ন ক্লাব থেকে। তখনও ফুটবল খেলার কাছে ক্রিকেট খেলা ফিকে। তিলক ময়দান বা শিলিগুড়ির কলেজ ময়দানে ক্রিকেটের লীগ  খেলা হয় ঠিকই, ক্লাবগুলো সম্বরণ ব্যানার্জী বা বরুণ বর্মনদের কলকাতা থেকে নিয়ে আসে খেলাতে,  তবে তরুন মুখিয়া বা গামা কিংবা চন্দন ঘোষ, মতিশ বিভু বাবলা বা প্রশান্ত সাহাদের ( ক্রিকেটার ঋদ্ধিমানের বাবা) ফুটবল লীগের খেলায় তিলক ময়দান উপচে পড়ত। শনি আর রবিবার তো রেমপ্যাটে দাঁড়ানোর জায়গা থাকত না। কিশোর সংঘ, বাঘাযতীন, ভিএনসি, দেশবন্ধু, শিবমন্দিরের সরোজিনী সংঘ কিংবা এনজেপির এনআরআই এদের খেলা থাকলে মাঠ দর্শকে ভরে যেত। আর ছিল এক খেলা পাগল সংগঠক পানু-দা। ছেলে থেকে বুড়ো সবাই ডাকত ঐ পানুদা বলে। সব খেলার মাঠেই হাজির তিনি। সেরকম আর একটি না ভোলা চরিত্র ছিল খেলার মাঠের– বালতিতে দশ পয়সা আর কুড়ি পয়সার চানাচুর চামচে তুলে কাগজ মুড়িয়ে ঠোঙা করে বিক্রি করতেন হেঁকে-হেঁকে ‘চানাচুর কাকু’। এখনও তার স্বাদ এই জিভের ডগায় লেগে আছে যেন, টিভিতে খেলা দেখতে বসলেও মাঠের সেই মজা মনে পড়ে। আশা করছি তোমরা নিশ্চয় সবাই খেলাধূলা ভালোবাসো? আগামী পর্বেও থাকবে খেলা নিয়ে পুরানো কথা। আর এখন তো জমজমাট খেলার মরসুম কী বল!

ফটো সৌজন্যে: গৌতম বাড়ই

এর পর আবার
সামনের শনিবার

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *