ধারাবাহিক গদ্যানুশীলনে গোপা ব্যানার্জী – ১

যৌনতা – ১
বেশ কয়েকটা মেয়ের ছবি হাতে করে নিয়ে এসে গৌরী দেবী দাঁড়ালেন ছেলে শুদ্ধর রুমের সামনে। গলায় একটু ইতস্তত ভাব তবু জোর করে গলায় খুশি এনে ডাকলেন,
শুদ্ধ তুই কি খুব ব্যাস্ত আছিস?
শুদ্ধর রুমের দরজাটা অর্ধেক ভাবে ভেজানো ছিল, তাই গৌরী দেবী বাইরে থেকেই ছেলেকে ডাকলেন।
শুদ্ধ ভেতর থেকে জোর গলায় বলে উঠল ,না মা। ল্যাপটপে সামান্য অফিসের কাজ করছি তুমি ভেতরে এসো।
গৌরী গিয়ে দাঁড়ালেন ছেলের টেবিলের পাশে ছেলের পিঠে হাত রেখে।
শুদ্ধ তখন অফিসের কাজ করে চলেছে এক মনে। পিঠে মায়ের স্পর্শ পেয়ে ঘুরে তাকিয়ে বললো, কিছু বলবে মা?
গৌরী দেবী ছেলেকে বললেন।
বলছিলাম, একবার দেখ না বাবা কয়েকটি মেয়ের ছবি এসেছে। দেখ না একটু পছন্দ কর, তারপর তোর সম্পর্কে আমি সব কথা নিজের মুখে খুলে বলব মেয়ের বাড়িতে । সব মেয়ে সমান হয় না রে।
মুহূর্তে ঘরের পরিবেশটা পাল্টে গেল শুদ্ধ ছবিগুলো হাতে নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিলো মাটিতে। চেঁচিয়ে উঠে বলল,
মা, তুমি বারবার কেন আমার অতীতকে সামনে এনে রক্তাক্ত করছো আমাকে। আমি এই জীবনে আর বিয়ে করব না। কেন বোঝনা আমার কষ্টটা।
এবার আমাকে রেহাই দাও মা হাতজোড় করে তার মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকল শুদ্ধ ।
গৌরী দেবী ছেলেকে নিজের বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বললেন,
আমি তোর মা, তোর কষ্টটা নিতে পারছি না বাবু, তাই আমি বারবার ছুটে আসি তোকে বিয়ের কথা বলতে ।তারপর ছেলেকে ছেড়ে দিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যেতে লাগলেন ধীর পদক্ষেপে ছেলের রুমের থেকে।
শুদ্ধ পেছন থেকে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে নিজের বুকে টেনে নিয়ে বলতে লাগল,
মা তুমি নিজেকে বোঝাও আমি কোন মেয়ের যোগ্য নই। এটা মেনে নাও মা এটাই তোমার আমার ভবিষ্যৎ। বছর দেড়েক আগে আমার বিয়ে দিয়ে যে শিক্ষা তুমি আমি দুজনেই পেয়েছি তারপরও তোমার কেন চেতনা জাগছে না মা ? কেন সব জেনেও তুমি এতো অবুঝ হয়ে আছো?
এইতো বেশ ভালো আছি তুমি আর আমি ,তাহলে কেন কষ্ট পাও। তুমি কষ্ট পেলে আমিও যে খুব কষ্ট পাই মা।
আমাদের এভাবেই জীবন কাটাতে হবে। আমাদের হাতে কিছু নেই মা, তাই তুমি নিজেকে যতটা বুঝিয়ে উঠবে ঠিক ততটাই আমরা খুব আনন্দে জীবন কাটাতে পারব ।শান্ত হও, বসো আমার কাছে।
গৌরী দেবী ছেলের বুকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন ,আর ছেলে শুদ্ধ, মনের কষ্ট চেপে রেখে তার মাকে আদর করে চোখ মুছিয়ে দিতে লাগলো।