ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে এ এফ এম সেবগাতুল্লা (পর্ব – ১৬)

সাবির সুবীর আর মাতলা নদী 

বাবা অনেকক্ষন আসছেনা দেখে তার মা ওই পাহাড়ের কাছে বাবাকে খুঁজতে যায়। তার মা ও আর ফিরে আসেনি ! জানা যায় ওইদিন পাহাড় থেকে বিরাট বরফের চাঙ্গর খসে পড়েছিল! বহু বছর পর সেই শিশু কন্যাটি যখন বৃদ্ধা হয়েগেছেন, জানা গেল তাদের সেই গ্রামে পাহাড়ের কাছে হিমবাহের মত বিরাট বরফের চাঙ্গরটা বহু বছর ধরে সরে যেতে যেতে এখন তার মধ্যে থেকে দুটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। গ্রামের বয়স্ক মানুষদের মধ্যে তৎকালীন শিশু কন্যা আজ যিনি বৃদ্ধা তিনিই অন্যতম আগ্রগন্য। তিনি শুধু এইটুকুই জানতেন যে ওই পাহাড়ের দিকে তার বাবা মা এক বিকেল বেলায় গেছিলেন যে দিন ওই পাহাড়ের বুকে বিরাট পাথরের চাঙ্গর ভেঙে পড়েছিল। পরে ডি,এন,এ পরীক্ষায় জানা যায় উদ্ধার হওয়া ওই দুই মৃতদেহ হল বৃদ্ধার বাবা মায়ের! বৃদ্ধা বলেন আবার কখনও বাবা মা কে দেখতে পাব ভাবিনি! তার বাবা মায়ের কবরস্থ করার সময় দূরদুরান্ত থেকে বহু লোক সমাগম হয় ফ্রান্সের সেই অখ্যাত গ্রামে। মিডিয়াকেও ঘটনাটা প্রভাবিত করেছিল।

আমঝাড়া গ্রামের এই ঘটনা যেন ফ্রান্সের সেই ঘটনাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। দূর থেকে যেন ম্যাটাডোরে করে বহু মানুষের সাথে মিছিল আসছে বলে মনে হল। হ্যাঁ সেই ম্যাটাডোরের মধ্যে দাদুর বাড়ির লোকজনের সাথেই আছে সাবির – সুবীর , । টিঙ্কু মামা, দিব্যেন্দু কাকা ও এসেছে। সাবির – সুবীর আর দাদুর বাড়ির লোকজন ধরাধরি করে কংকাল দুটি নামাল। উপস্থিত অনেকের চোখেই জল। দাদুর বাড়ির লোকজনের অনেকেই দৃশ্যত শোকাহত। অবশেষে দাদু এলেন। বহু আগে সেই কবেকার ছেলেবেরায় তার মাকে সে হারিয়েছিল। মায়ের বকুনি আদর সবই যেন তার স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে। মায়ের কংকালের মাথায় হাত রেখে দাদু যেন প্রার্থনা করল! মা, ভাইএর হাতে হাত রাখল প্রায় সত্তর বছর পর যে হাত ছেড়ে গেছিল সত্তর বছর আগে মাতলার ঢেউ এর দাপটে। হোক সে হাত কংকাল তবু তো সে তার মা আর স্নেহের ভাই এর হাত! আবার শেষ বারের মত সত্তর বছর পর সজল নয়নে দাদু কংকাল দুটিকে বিদায় জানাল।

অবশেষে গ্রামের মসজিদের মাওলানা সাহেবের পৌরহিত্যে ইসলামি রীতি মেনেই কংকাল দুটি কবরস্থ করা হয় । সাবির সুবীর দুই জনই জানাজায় অংশগ্রহণ করেছে। হাজার হাজার হিন্দু মুসলিম জনতার সাথে সাবির আহমেদ আর সুবীর চ্যাটার্জী কবরে মাটি দিল।

চলবে

Spread the love

You may also like...

error: Content is protected !!