সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৫৫
বিষয় – মুখ ও মুখোশ
মুখোশ
মোবাইল ফোনটা বেজে উঠতেই ডাইনিং টেবিলে বসা
দেবকান্তবাবু ফোনটা ধরলেন। “হ্যালো, দেবকান্ত সেন ইজ স্পিকিং”
বলুন, কী বলতে চান ?”
অপর ফোন থেকে নারী কন্ঠে শোনা গেল,” স্যার, আমি উইমেন
ওয়েল ফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক বলছি। আগামী রবিবার আমাদের
সেমিনার আর আপনার সম্বর্ধনা। স্যার, আপনার মনে আছে তো?
আপনিই আমাদের প্রধান বক্তা। আপনি একবার মাঝে ফোন করতে
বলেছিলেন, তাই ফোন করলাম। আমরা ঠিকসময়ে গাড়ি পাঠিয়ে দেব,
আপনি কাইণ্ডলি চলে আসবেন।”
— আমাকে নিয়ে একদম চিন্তা করবেন না, আমি ঠিক পৌঁছে
যাব। ঠিক আছে, এখন রাখি, রবিবার দেখা হবে।
মোবাইলটা টেবিলে রেখে দেবকান্তবাবু গর্জে উঠলেন –
— অপর্ণা, আমার ব্রেকফাস্ট কই, সাড়ে আটটা বেজে গেল এখনও
আমার ব্রেকফাস্ট রেডি হয়নি।
— এক্ষুনি আনছি, অপর্ণার গলায় খানিকটা ভীতি।
ব্রেকফাস্ট এনে অপর্ণা টেবিলে নামিয়ে দেয়।
— চাকরি করতে বাইরে যেতে হয় না, সামলাও তো ক’টা ঘরের কাজ
তাও সময়মতো পারো না। কি পারো বলো তো ?
অপর্ণা কথাগুলো নীরবে শোনে। কোনো প্রতিবাদ করে না। জানে
তো প্রতিবাদ করতে গেলে ফল ভালো হবে না। গতকালকে পিঠের
ওপর বেল্টের দাগগুলো এখনো স্পষ্ট। বিয়ের পর এই বাড়িতে এসে
দিনের পর দিন স্বামীর হাতে তাকে লাঞ্ছিত হতে হয়েছে, অত্যাচারিত
হতে হয়েছে। স্বামীর অক্ষমতায় সন্তান না জন্ম দিতে পারার দায়ও
তার। যে লোকটা নারীকে কোন দিন সম্মান দিতে শেখেনি, সেই
লোকটাই ঘটা করে নারী স্বাধীনতা ও অধিকার নিয়ে বক্তৃতা দিতে
যাবে। অপর্ণার মনে মনে হাসি পায়, আবার প্রচণ্ড রাগও হতে থাকে।
মনে হয় জীবনটা শেষ করে দিই। আইনি পথে যে যাবে, কে পাশে
দাঁড়াবে ? নিজেকে খুব অসহায় লাগে অপর্ণার, বুকের মাঝে অভিমান
দলা পাকিয়ে ওঠে। জীবন যদি শেষ করতে হয় ওকে উচিত শিক্ষা
দিয়ে যাবো ! ওর ভালমানুষের মুখোশটা সবার সামনে খুলে দিয়ে যাব–
ভাবতে থাকে অপর্ণা।
রবিবার যথা সময়ে গাড়ি এসে পৌঁছতে অধ্যাপক দেবকান্তবাবু
গায়ে রঙিন পাঞ্জাবি আর কাঁধে খদ্দরের ব্যাগ চাপিয়ে পান চিবাতে
চিবাতে বেরিয়ে এলেন। অনুষ্ঠানে পৌঁছাতেই সকলে আপ্যায়ণ করে
তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়ে বসাল মঞ্চে। সঞ্চালিকা মাইকে তুলে ধরলেন
নারীদের অধিকার, সামাজিক সুরক্ষা, নারীদের প্রতি কর্তব্য – ইত্যাদি
বহুবিধ বিষয়ে তাঁর লেখার কথা, পাণ্ডিত্যের কথা। সকলের করতালিতে
সম্বর্ধিত হলেন অধ্যাপক দেবকান্ত সেন।
অন্য অতিথিদের বক্তব্য চলছে, মাঝে একটু বিরতি, তারপর
দেবকান্তবাবুর বক্তব্য। মঞ্চের টেবিলে রাখা ফোনটা হঠাৎ বেজে
উঠলো। দেবকান্তবাবু দেখলেন অপর্ণার ভিডিও কল। একটু অবাক
হলেন, কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ধরলেন। একি দেখছেন ! ফ্যানের সঙ্গে
কাপড় বাঁধছে অপর্ণা। গলায় জড়িয়ে নিল।
— কী করছো, থামো থামো বলতে লাগলো দেবকান্তবাবু।
পরক্ষণেই দেখতে পেল কাপড়ের ফাঁসে নিজেকে ঝুলিয়ে দিয়েছে
অপর্ণা। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিথর হয়ে গেল অপর্ণার দেহ।
নিজেকে শেষ করে প্রতিশোধ নিল অপর্ণা….