কবিতায় দেবযানী রায় ঘটক

মন্ত্রমুগ্ধা

জানো প্রেম করলে মনের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।
প্রেম একটা স্বাস্থ্যকর টনিকের মতো।

তবে ওই ছুটকো ছাটকা ফেসবুক প্রেম নয়।

গভীর কোনো মানবিক প্রেম।
যেখানে পরম আদরে হৃদয় ছুঁয়ে থাকবে আরেকটা নিঃসঙ্গ হৃদয়ের বিষন্ন হাত।

বুকের খাঁজে লুকিয়ে থাকা পড়ন্ত যৌবনের আলোয় উদ্ভাসিত হবে মুখ…তাকে সারা শরীরে মাখার দরকার নেই।

যৌনতার আবেদন নাই বা থাকলো।
থাকবে হাল্কা লাল চায়ের সুবাসিত নির্যাসে ভেজা দীর্ঘ প্রলম্বিত এক গভীর প্রেমময় বার্তালাপ।

নিতান্তই অগোছালো বোহেমিয়ান জীবনে গুটি গুটি পায়ে আসবে পরকীয়া।

কিন্তু অসংবৃত অসংযমী চাঁদের আলোয় বাঁধভাঙা অভিসারের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে সে থাকবে প্রাণের কোটরে ঘুমিয়ে।

কোনো এক দূর দিগন্ত বিস্তৃত সাঁওতালী মাঠে
অদেখা বসন্তের আলোয় বুকে লাল পলাশের আগুন ছড়িয়ে হাতে হাত রেখে কল্পনায় উড়বে
সে প্রেমাস্পদের নিবিড় আলিঙ্গনে মুখ ডুবিয়ে।

নীললোতের ‘নীরা’ হতে সেখানে আমার ক্ষতি নেই।
কবির মতো সে যদি বলে আমায় ক্ষতি কি?…
“বাসস্টপে দেখা হলো তিনমিনিট অথচ কাল স্বপ্নে তোমাকে বহুক্ষণ…”

আবার কখনো যদি বলে…
“এই কবিতার জন্য আর কেউ নেই শুধু তুমি নীরা।
এই কবিতা মধ্যরাতের তোমার নিভৃত মুখ লক্ষ্য করে।”

আমি কি পারি না কারোর মনের সেই কাব্যদোসর প্রেমিকা হয়ে উঠতে!

আর তুমি কি পারো না প্রেমিক নীললোহিতের মতো কবিতার হাত ধরে প্রেমের সাম্পানে চড়ে
ডুবসাঁতার দিয়ে আমার সঙ্গীবিহীন একলা আকাশের চাঁদ জ্যোৎস্না হতে।

কারণে অকারণে প্রেমে পড়া বারণ জেনেও আমি মনে মনে গুনগুন করে উঠি…

“প্রেমে পড়া বারণ কারণে অকারণ।
আঙুলে আঙুল রাখলেও হাত ধরা বারণ !!”

আমার হৃদয়জুড়ে যে অকালবসন্তের ফাগুনরঙা আগুন ঘুমিয়ে ছিলো…

সে হৃদয় তো কারণে অকারণে গেয়ে উঠতেই পারে
“যে ভাবেই তুমি আকাশ দেখো সূর্য কিন্তু একটাই
যতো ভাগে ভাগ করো না প্রেম হৃদয় কিন্তু একটাই…”

উন্মনা এক আকন্ঠ মুগ্ধ অনুরাগের ছোঁয়ায়
অপার বিস্ময়ে জেগে উঠবে সেই প্রেম জীবন্ত কোনো সোহাগী আটপৌঢ়ে ভালোবাসার কাব্যকাহিনী হয়ে।

সে তপ্তকাঞ্চনবর্ণ অদেখা বসন্তের আচমনে আমার জীবনের নির্জলা মুহূর্তগুলো উল্টোস্রোতে গা ভাসিয়ে সঙ্কোচহীন এক নিষ্পাপ পৃথিবীর আলো যেনো গায়ে মাখতে থাকবে।

ক্ষতি কি! পাপ পূণ্যের হিসেব না হয় তোলা থাকবে পরজন্মের নিখোঁজ এক অনিশ্চিত উপন্যাসের দৈবাৎ কোনো স্মৃতিচারণ হয়ে।

আমি জলশূন্য মেঘের কান্না হয়ে আমার অবোধ মনের কুশাসনে বসে নিষ্কাম এক অপাপবিদ্ধ প্রেমের নৈবেদ্য হাতে সাজিয়ে অপেক্ষায় থাকবো আমরণ…

দেখি আমার অপাপবিদ্ধ কবোষ্ণ চুম্বনের আতরে মুখ ডুবিয়ে বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে কেউ একশো আটটা নীলপদ্ম খুঁজে আনে কি না!

কেউ আমায় নিভৃতে ডেকে বলে কি না যে,
“বুকের মধ্যে সুগন্ধি রুমাল রেখে বরুণা বলেছিল,
যেদিন আমায় সত্যিকারের ভালবাসবে
সেদিন আমার বুকেও এরকম আতরের গন্ধ হবে!”

আমি কি হতে পারি না কোনো অদেখা অজানা অচেনা প্রেমিক কবির সেসব মন্ত্রমুগ্ধা কাব্যের কোনো অনামিকা বরুণা বা নীরা হতে !!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *