গল্পবাজে দেবব্রত মাইতি

ক্ষত

দেবব্রত মাইতি
“কীরে লক্ষ্মী কি করছিস?”
“এই একটু কাজ করছি রে হারান”
“তুই একটু বাইরে আয় কথা আছে তোর সাথে” হারানের ডাকে লক্ষ্মী বাইরে বেরিয়ে এল, “ কি বলবি আমাক বল হারান, আমার অনেক কাজ পড়ে আছে”।
“আসলে …… মানে……” হারান কথা গুলো বলতে পারলোনা, সব কথা মুখের কাছে এসে আটকে গেল।
“কি এত মানে মানে করছিস হারান, যা বলার তাড়াতাড়ি বল নাহলে আমি চললাম” লক্ষ্মী ঘরের দিকে হাঁটা দিল।
“ আমাকে বিয়ে করবি লক্ষ্মী?” হারানের কথা শুনে দাঁড়িয়ে পড়লো লক্ষ্মী, ঘরের দিকে যেতে পারলোনা, মুখে তার কোনো কথা নেই।
“আমি তোকে বিয়ে করতে চাই রে লক্ষ্মী, তোকে বড় ভালোবাসিরে আমি”।
“দেখ হারান তুই আমার সম্বন্ধে কতটুকু জানিস? আমাকে কতটুকুই বা চিনিস? কতদিনের পরিচয় আমাদের?” লক্ষ্মী হারানের দিকে না তাকিয়েই কথা গুলো বলে গেল।
“ ওসব আমি জানিনা, আজ আমার একটাই ইচ্ছে যে তোর সাথে আমি ঘর বাঁধব, কে কি বলল আমার কিচ্ছু এসে যায়না”।
“তোর বাড়ির লক যখন আমার সম্পর্কে জানতে চাইবে তখন কি উত্তর দিবি তাদের হারান? তারা যখন জানতে চাইবে আমার সম্বন্ধে কি উত্তর দিবি?” লক্ষ্মী হারান কে জিজ্ঞাসা করল, কিন্তু হারান কোন উত্তর দিতে পারলোনা।
“দেখলিতো হারান তুই নিজেই উত্তর দিতে পারলিনা, তাহলে কি করে ভাবছিস আমাকে বিয়ে করার কথা? চলে যা তুই এখন এখান থেকে, আমার এখন আর কথা বলতে ভালো লাগছেনা”।
“কিন্তু……” হারান কিছু বলতে চাইছিল লক্ষ্মী তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,“ দেখ হারান আমি চাইনা যে আমাদের মধ্যে যেটুকু সম্পর্ক আছে সেটা নষ্ট হোক, তুই এখন চলে যা এখান থেকে, আমার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা”।
“আচ্ছা আমি তাহলে আসি এখন, আমার বাপারে ভেবে দেখিস,” হারান কথা না বাড়িয়ে চুপ করে সাইকেল নিয়ে চলে গেল ওখান থেকে আর লক্ষ্মী নিজের ঘরের ভিতর এসে দরজা দিল আর আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো, শাড়ির ফাক দিয়ে উঁকি দিতে থাকল ক্ষতগুলো। ক্ষতগুলোর দিকে তাকিয়ে ভীষণ ভয় পেল লক্ষ্মী, যে ঘটনা সে ভুলে যেতে চাইছিল সেই সব ঘটনা আবার তার চোখের সামনে ভেসে এল। লক্ষ্মীর পরিস্কার মনে আছে, তারও সংসার ছিল স্বামী ছিল পরিবার ছিল কিন্তু অপরাধ ছিল একটাই, দারিদ্রতা, বাবা পনের টাকা দিতে পারেনি, দিতে পারেনি সাইকেল তাই সশুরবাড়ি থেকে শুনতে হত নানান কথা, রাতে মদ্যপ স্বামীর হাতে জুটত মার। সব কিছু মুখবুজে সহ্য করে নিয়েছিল লক্ষ্মী কিন্তু সহ্যের বাঁধ সেদিন ভেঙে গিয়েছিল যেদিন দুটো পয়সার লোভে তাকে বাধ্য করা হয়েছিল অন্য পুরুষের সাথে একই বিছানায় যেতে, নিজের যৌবন অন্যজনের হাতে সঁপে দিতে, পুরুষ জাতির ওপর থেকে। সেদিন সাহস করে ঘর ছেড়ে পালিয়ে আসতে পেরেছিল লক্ষ্মী, নানান জায়গায় ঘোরার পর একদিন হারানের সাথে দেখা হয় তার আর হারানের সহযোগীতায় এই তালতলা বস্তিতে মাথা গোঁজার জায়গা পায় সে। হারান লক্ষীকে নানা ভাবে সাহায্য করেছিল আর এখনও করে চলেছে যেদিন বস্তিতে আগুন লেগেছিল সেদিন হারান নিজের জীবনের পরোয়া না করে লক্ষ্মীর সব জিনিসপত্র বাচিয়েছিল বিনিময়ে লক্ষ্মীর ভালোবাসা ছাড়া কিচ্ছু চায়নি কিন্তু সেই ভালোবাসা থেকে আজও বঞ্চিত কারণ লক্ষ্মী আজও তার অতীত ভুলতে পারেনি, পুরুষজাতি আজও তার কাছে ঘৃণিত, হারানের ভালবাসাও আজ কম পড়ে গেছে তার মনের গভীর ক্ষত টা মিটিয়ে দিতে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।