ছোটদের জন্যে বড়দের লেখায় কিশোর গল্পে দেবদাস কুণ্ডু

বিট্টুর দু:খ

কিরে তুই কোথায় গিয়ে ছিলি?
–কেন বাগানে।
–কই আমি তো বাগানে গিয়ে ছিলাম তোকে দেখলাম না।
–তুমি আমায় দেখবে কি করে মা?
–কেন?
–আমি যে তখন প্রজাপতি হয়ে গিয়েছিলাম।
–প্রজাপতি!
–হ্যাঁ ।আমার সারা শরীরে ছিল প্রজাপতি।
–যা! কি বলিস তুই।
–কেন ও তো ঠিকই বলেছে। গতবার এসে কি করেছিলো তোর মনে নেই রীনা?
মেজো মামার কথায় মা বলে-কি করেছিল?
–সারা বাগান খুঁজে ওকে পেলাম না। তখন বিট্টু
চিৎকার করে বলেছিল–আমি এখানে। একঝঁক সবুজ টিয়ায় ওর শরীর ঢাকা ছিল। আমরা কাছে যেতে পাখি গুলি উড়ে গেল। তুই সব ভুলে যাস দিদি। আমি শুধু অবাক হয়েছিলাম বাগানে এতো টিয়া এলো কোথা থেকে?
2
সকাল থেকে বিট্টু নেই। টিফিনও খায় নি। বিট্টু এখন বাগদিদের এক ঝাঁক হাঁস সংগে সাঁতার কাটছে। দূর থেকে বিট্টুকে একটা হাঁস মনে হচ্ছে। পুকুরে দু তিন চক্কর মেরে হাঁসরা পাড়ে উঠেছে। বাগদি মেয়ে টা ওদের জন্য গেরি এনেছে। হাঁসরা কৎ কৎ করে খাচ্ছে দেখে তার
খিদে পেল। সে বাড়ির পথে ছুটলো। কিছু টা যাবার পর তার মনে হলো এখানে কলা গাছে কত কলা। তাই খেয়ে নিলেই হয়। ছুটতে ছুটতে অহেতুক বাড়ি যাওয়া কেন? ওরা এখন দাদুর বাড়ি বেচার কথা আলোচনা করছে। আসার সময় তার কানে কথাটা এসেছে। সেই থেকে তার মন খারাপ।
সে কলা খেয়ে জংগলের মধ্যে ঘুরতে গাললো। কত বড় বড় গাছ এক সংগে পাশাপাশি আছে। মামারা তিন ভাই এক সংগে থাকতে পারছে না। তাই বাড়ি বেঁচে প্রান্তিকের কাছে ফ্ল্যাট কিনবে। জংগলের ভিতর রোদের কত আলপনা। কত পাখি কত সুরে ডাকছে। সেও মুখ দিয়ে ওদের সুরে সুর মিলিয়ে ডাকছে। অবিকল পাখির ডাকের মতো। কিন্তু কষ্ট হচ্ছে মনে এই শেষ দেখা। আর এখানে আসা হবে না। সে যদি বড় হতো এই বাড়িটা কিনে নিতো।
তাদের কলকাতার গড়িয়ার বাড়ির পিছনে একটা জলাশয় ছিল। ছিল কিছু গাছ। দূর দেশ থেকে কত সুন্দর সুন্দর পাখি আসতো। সাঁতার কাটতো। গাছে বাচ্চা দিতো। একটু বড় হলে ওদের নিয়ে চলে যেত। এখন আসে না। সেই জলাশয় সেই গাছ কিছুই আর নেই। সেখানে এখন একটা বিশাল আকাশছোঁয়া ফ্ল্যাট বাড়ি উঠেছে। একদিন এই গ্রামটাও ফ্ল্যাট বাড়ির জংগলে ঢেকে যাবে। বিট্টুর কান্না আসছিল। তাহলে কি এই পৃথিবীতে তাদের কোন জায়গায় নেই?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।