সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে দেবদাস কুন্ডু (পর্ব – ১৭)

লড়াইয়ের মিছিল

পর্ব –  ১৭

‘শুনছো’হরিদাস পাল ডাকলেন স্ত্রীকে।
‘কি হয়েছে বলো?’
‘এখানে বসো।’
‘আমার স্নান পূজো আছে। কি বলবে বলে ফেল।’
‘এগুলো তোমার চিরকাল থাকবে। আমি থাকবো না।’
‘এই সাত সকালে ডেকেছো কি এসব শোনার জন্য?’
‘আরে কথাটা তো সত্যি।’
‘সব সত্যি মানুষ মনে রাখলে বাঁচতে পারবে না।’
‘তা ভুল বলো নি।’
‘সময় নষ্ট না করে কি বলতে চাও বলে ফেল। ‘
‘ অতো দূরে বসলে এসব কথা বলা যায় না। কাছে এসো। ‘
‘মানে? তুমি কি সাত সকালে যৌবন ফিরে পেলে নাকি? ‘
‘ সে কে না ফিরে পেতে চায়? সত্যি কথা হলো যৌবন কখনো ফুরোয় না। কেন জানো? যৌবন শরীরে থাকে না। থাকে মনে। ‘
‘ তুমি সকালবেলা এসব লেকচার শোনার জন্য আমাকে কাছে ডাকছো? ‘
‘ তুমি যখন কাছে আসবে না তখন আমাকেই কাছে যেতে হয়। ‘
‘ তুমি কি আরম্ভ করলে বলোতো। একটু পরে বৌমা উঠে দেখলে কি ভাববে? ‘
‘ ভাববে শ্বশুর শাশুড়ি প্রেম করছে। ‘
‘ তোমার লজ্জা করবে না? ‘
‘ কেন লজ্জা করবে? । প্রেম কি লজ্জার বিষয় নাকি? বরং প্রেমে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। তুমি যদি একটু প্রেম করতে তোমার হাঁটু ব্যাথা কোমরে ব্যাথা কমে যেত। ‘
‘ পাগলেল মতো প্রলাপ না বকে আসল কথাটা বলো। ‘
হরিদাস পাল চেয়ারটা কাছে টেনে নিয়ে বললেন,’ আমি তোমায় স্বপ্নে দেখেছি কাল। ‘
বেলারানি চমকে উঠলেন। এই বুড়োটা বলে কি? মাথাটাথা খারাপ হয়ে গেল!
`কি কথাটা বিশ্বাস হলো না তাই তো?’
‘সে তো বিয়ের পর খুব বলতে। তখনও খোকা হয়নি। আজ হঠাৎ এতো দিন পর পুরানো প্রেম জেগে উঠলো কেন? ‘
‘ এখানে আর ভালো লাগছে না বুঝলে।’
‘ও এই ব্যাপার।’
‘কেন ভালো লাগছে না? বৌমা খোকা তোমার তো দেখভাল করছে। ‘
‘ তা করছে। মিথ্যে কেন বলবো।খুব নিজের বাড়ির জন্য মন কেমন করছে। ‘
‘ এটা কি নিজের বাড়ি নয়? । এসব কথা শুনলে খোকা কষ্ট পাবে না? বৌমা কি ভাববে? নাতিটার মন খারাপ হয়ে যাবে। এসব ভেবেছো? ‘
‘ কৌনিশকে সংগে নিয়ে যাবো। ‘
‘ ওর মা ছাড়বে কেন? ‘কে কৌনিশ এর দেখভাল করবে?’
‘কেন তুমি তো রয়েছে। ঠাকুমারা তো করে।’
‘আমার দেখভাল কে করে তার নেই ঠিক।’
‘এই যে তুমি দাদু ভাইয়ের কাছে শুচ্ছো। আমি আলাদা শুচছি আমার ভালো লাগছে না।’
‘তা হলে নতুন বর বউয়ের মতো এক সংগে শোবে?’
‘তাতে দোষটা কোথায়? কেউ কি শোয়া না? ‘
‘ কে কি করলো আমি জানি না। এ বয়সে এক সংগে শোয়া টা ভালো দেখায় না। ‘
‘ নিজের বউ নিয়ে শোবো সেটা মন্দ হবে কেন? ‘
‘ সে তুমি বুঝবে না। তোমার আসল সমস্যা টা কি সেটা খুলে বলে ফেল।’
‘ একটা শূন্যতা আমায় গোরস করছে। ‘
‘ কিসের শূন্যতা? এখানে ছেলে বৌমা নাতি রয়েছে তার মাঝে তোমার কিসের শূন্যতা? ‘
এই সব বিলাসিতা ছাড়ো।
‘ একা শুই কখন কি হয় কে বলতে পারে? ‘
‘ আমি তো পাশের ঘরে আছি। তেমন হলে আমাকে ডাকবে? ‘
‘ ডাকার মতো খমতা যদি না থাকে? ‘
‘ এই সব উল্টাপাল্টা চিন্তা মাথা থেকে দূর করো’
‘ বললেই তো দূর হয়ে যাবে না। ‘
‘ তাহলে ডাক্তারের কাছে যাও। ‘
‘ আমাকে আমার বাড়ি যেতে হবে। আমার ঘর আমার আসবাবপএ দরজা জানালা গাছ সব আমায় ডাকছে। ‘
‘ ডাকলে চলে যাও। ‘
‘ তুমি যাবে না? ‘
‘ আমায় কেউ ডাকছে না। তাছাড়া আমায় সুখে থাকতে ভূতের কিলোচ্ছে না। আমি এখান থেকে যাবো না। ‘
‘ তাহলে তুমি তোমার ছেলের কাছে থাকো আমি চললাম। ‘
‘ ছেলেকে বলেছে? ‘
‘ তাকে আবার কি বলবো? আমি স্বাধীন। আমার যা ভালো লাগে তাই করবো। ‘
‘ এ যাতায় বেঁচে গেলে ছেলে ছিল বলে। ‘
‘ তা ঠিক। তুমি খবর দিয়েও এনেছো। সে তার কর্তব্য পালন করেছে। এর বেশি তো কিছু করে নি।’
‘ এটাই বা কটা ছেলে করে? মনে করে দেখ এই ছেলেকে তুমি ঘর থেকে বের করে দিয়ে ছিলে তারপরও ছেলে ছুটে এসেছে। আজকাল এমন ছেলে পাবে না। ‘
‘ আমি বের করে দেই নি। তাকে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবার জন্য বের করেছিলাম পথে। আজ সে দাঁড়িয়েছে। আমার কাছে থাকলে এই জায়গায় পৌঁছাতে পারতো না। এই দিকটা তুমি দেখলে না। শুধু ভাবছো আমি নিষ্ঠুরের মতো কাজ করেছি।
‘তোমার এই যুক্তি কেউ মানবে না। আমার দেরি করে দিলে। যা তুমি ভালো বোঝা তা করো। আমার কিছু বলার নেই। খোকার সংগে একবার কথা বলে নিও। চিরকাল শুধু নিজের কথা ভাবলে।’
‘এতো বড় মিথ্যে কথাটা বলতে পারলে? শুন্য থেকে লড়াই করেছি। কার জন্য? নিজের জন্য? নাকি সংসারের জন্য? কখনো নিজের জন্য বিলাসিতা করেছি? এরপর এতো বড় অপবাদ দিলে? সত্যি মহিলারা যে নিষ্ঠুর তা মিথ্যে না।
ঠিক আছে। তুমি যাও। আমার ব্যাপার আমি ভাববো। এবার কিছু হলে কাউকে ডাকবো না।
‘ভুল বোঝা তোমার একটা স্বাভাব।’
‘যাও যাও। তোমার প্রেমের ঠাকুর তোমার পথ চেয়ে আছে। সে আবার অভিমান করবে। রাগ করবে। আমার জন্য তোমাকে কিছু ত্যাগ করতে হবে না। আমার জীবন আমি বুঝে নেব। যাও তুমি যাও। দাঁড়িয়ে রয়েছে কেন?’
হরিদাস পাল দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।