Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুজিত চট্টোপাধ্যায় (পর্ব - ১)

maro news
কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুজিত চট্টোপাধ্যায় (পর্ব - ১)

নীলচে সুখ 

এখন মধ্যরাত। গ্যাংটকের `নীলচে সুখ `রিসর্টের বাগান ঘেরা সবুজ ঘাসে ঢাকা লনের চেয়ারে বসে শরতের মেঘমুক্ত নীলাকাশ দেখছিল নীল । তারা গুলো যেন একটু বড়ো লাগছে , এখান থেকে। হালকা হালকা ঠান্ডা। দূরের পাহাড় গুলোর গাঢ় অন্ধকার কালো গায়ে দীপাবলির মতো ঝিকমিক করছে মন উদাস করা সুন্দরী আলোক সজ্জা। অনেকটাই হুইস্কি খেয়েছে নীল। অনেকদিন পরে , মদ খেলো নীল। কেন কে জানে হঠাৎই ইচ্ছে করলো। সঙ্গে স্ত্রী রুমা, ছ'বছরের পাপুকে নিয়ে এখন ঘরে ঘুমে অচেতন। গাংটকে আসার পরিকল্পনা বা ইচ্ছে রুমারই। নীল বাধা দেয়নি। তবে এখানে আসতে নীলের মন চায় না। ভয় করে । স্মৃতি উসকে ওঠে। মানালি ।
মানালি কে ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। নীলের মনে , মগজে, শরীরের প্রতিটি রোমকূপে সে আছে একাকার হয়ে। ওই দূরে মায়াবী অকাল দীপাবলির মতো। ধরা ছোঁয়ার বাইরে , আশ্চর্য আকর্ষণে মোহিত করে। মানালি। এখানেই প্রথম দেখা। গ্যাংটক। নীল তখন বি এস সি ফাইনাল ইয়ার। সদ্য পরীক্ষা শেষ হয়েছে। ওরা চার বন্ধু প্ল্যান করলো কাছাকাছি কোথাও কয়েকদিনের জন্যে ঘুরে এলে মন্দ হয়না। অনেক ঘেঁটেঘুঁটে পরীক্ষানিরীক্ষা তর্কাতর্কি শেষে সাব্যস্ত হলো গ্যাংটক। পাহাড় নদী ঝর্ণা , মানে এককথায়, কম বাজেটে স্বর্গের শোভা দর্শন। ট্রেনে নিউ জলপাইগুড়ি। সেখান থেকে বাসে গ্যাংটক। এই রকমই ঠিক ছিল , কিন্তু জলপাইগুড়ি এসেই আচমকা প্ল্যানটা বদলে গেল। বাসস্ট্যান্ডে , একজন প্রায় মধ্য বয়সী ভদ্রলোক সামনে এসে বললেন,,,, ভাই, আপনারা কী গ্যাংটক যাবেন ? পোশাক পরিচ্ছদ বা উচ্চারণ শুনে বোঝাই যাচ্ছিল , ইনি গাড়ির বা কোনও হোটেলের দালাল নন। দালালদের স্বার্থপর হিসেবি চোখ আর চোয়াল , দেখলেই বোঝা যায়। দালাল। দালালি, এক অদ্ভুত জীবন জীবিকার পোশাকি নাম। দীপেন সবসময়ই খুব সাবধানি। সে ভদ্রলোকের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,,,, কেন বলুন তো ? ভদ্রলোক বিনয়ের ভঙ্গিতে বললেন ,,,,,,, মানে , আমরা ঐখানেই যাচ্ছি কিনা,,, দীপেন তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,,, আপনারা যাচ্ছেন যান , আমাদের যাওয়া,,, ভদ্রলোক হাত তুলে দীপেন কে থামিয়ে দিয়ে বললেন ,,,, আহা, কী মুশকিল , আমার কথাটা আগে একটু দয়াকরে শুনুন,,, ব্রজেশ , চোখের ইশারায় দীপেন কে চুপ করিয়ে দিয়ে বললো ,,, না না,, ঠিক আছে , বলুন কী বলবেন ? ভদ্রলোক তার কথা শুরু করার মাঝেই তার পিছনে আরও দুজন এসে দাঁড়াল। একজন ভদ্রমহিলা , প্রায় ঐ ভদ্রলোকের মতই হবেন বয়সে। আর একটি কিশোরী বলা যায়! নাকি যুবতী ? যে কিনা এদেরই বয়সী। তিনজন কে একত্রে এক্কেবারে অন্যরকম লাগছে। বেশ একটা সুখী পরিবার যেমন হয়ে থাকে আরকি, তেমনই। এবার ভদ্রমহিলা বললেন,,, আমি বলছি। ব্যাপারটা হলো। আপনারা যদি গ্যাংটক যান তাহলে আমরা শেয়ারিং করে একটা গাড়ি ভাড়া করতে পারি। আপনারা চারজন , আমরা তিনজন। টাকাও কম লাগবে আর যাওয়াও নির্বিঘ্নে হবে। নইলে বাসের জার্নি , জানেনই তো। তাছাড়া সময়ও একটা ফ্যাক্টর। বাসে অনেক সময় নেবে। এবার আপনারা ভেবে দেখুন। অবিশ্যি , আপনাদের আপত্তি থাকলে আমাদের কিছু করার নেই। সত্যি কথা বলতে কী,, আপনারা ইয়াং ম্যান।বাঙালি। সঙ্গে থাকলে , যতই হোক বিদেশ বিভুইয়ে,, একটু বাড়তি সাহস যোগায়। দেখুন ভেবে। তবে , আমাদের কিন্তু গাড়ি নিতেই হবে , কেননা , আমার এই মেয়ে , বেশিক্ষণ বাসে চাপতে পারেনা। বমি করে । কিশোরী লজ্জা পেলো শুধু নয়, একটু অপ্রসন্ন অপ্রস্তুত হয়ে মায়ের কনুইতে সকলের নজর এড়িয়ে একটা মৃদু চিমটি কেটে দিলো। মুখে বললো,,,, মা,,যা করবার তাড়াতাড়ি করো। এই রোদ্দুরে আর ভালো লাগছেনা। কেউ লক্ষ্যই করেনি , নীল এতক্ষণ ওই মেয়েটির দিকেই তাকিয়ে ছিল। হালকা চাপা গায়ের রঙের সাথে মানানসই চাঁপাফুল রঙের শালওয়ার আর সাদা কামিজ। হালকা ঢেউ খেলানো এলোমেলো অবিন্যস্ত চুল। সারারাতের ট্রেন জার্নির ধকলে কৃত্রিম সাজ মুছে যাওয়া মুখ , যেন ওকে আরও সুন্দরী করে তুলেছে। কম বয়স, সবসময়ই সুন্দরতার আধার। স্ত্রীলোকের ক্ষেত্রে তা আরও বিশেষ করে দাবী রাখে নিশ্চয়ই। এ প্রকৃতির খেলা। নীলের মনের মধ্যে কে যেন বলে উঠলো , না না, ওর কোনও কষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। সেটা হবে চরম অমানবিকতা। এমন মনে হবার কারণ জিজ্ঞেস করা নিতান্তই নিরর্থক। কেননা , ভাললাগা কখন কীভাবে কোথা দিয়ে লখিন্দরের লৌহ কক্ষের ফাঁক খুঁজে ঢুকে পড়ে তা বোধকরি ঈশ্বরেরও অজানা। ঠিক আছে , চলুন । একসঙ্গেই যাওয়া যাক। বলেই সকলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো ,,, চল, যাওয়া নিয়ে কথা। অসুবিধের কী আছে। এ বরং ভালোই হলো , কী বলিস? বাকিদের মুখে কোনও কথা নেই। কেবল চোখে কিঞ্চিৎ অবাক চিহ্ন প্রকাশ পেলো।

ক্রমশ...

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register