Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

Cafe কলামে রাজদীপ ভট্টাচার্য - ১০

maro news
Cafe কলামে রাজদীপ ভট্টাচার্য - ১০

প্যাস্টেল কালার

▪️ এক রাত্রি দুই দিন

সে সময় বাড়ি বাড়ি চারচাকা গাড়ি ছিল না। গনপরিবহন মাধ্যমও ছিল যারপরনাই সীমিত। অনলাইন টিকিট বুকিং হতো না কোথাও। আর মানুষ তখনও বিশ্বাস করেনি যে "তুমি আর আমি আর আমাদের সন্তান এই আমাদের পৃথিবী"। ফলত তখনও পাড়ার ইয়াং ছেলেপিলেরা শীতকালে আয়োজন করত এক রাত্রি দুই দিন দীঘা ভ্রমণের। একদিন আয়ু বাড়ালে বাসের চাকা পুরীতে গিয়ে ঠেকত। কিংবা দেওঘর, রাজগীর বা চাঁদিপুরে। আর হ্যাঁ তখনও দীঘায় ঝাউ ওরফে ক্যাসুরিনার বাড়বাড়ন্ত ছিল এবং পুরী থেকে ঘরে আসত বুটিদার অ্যালুমিনিয়ামের থালা এবং রঙিন ছড়ি।
মাসখানেক আগে থেকেই ক্যাম্পেন শুরু হয়ে যেত পাড়ায়। মুখার্জি বাবু, বোস বাবু, সেন কাকা মিটিং ডেকে প্রস্তাব ফেলে দিত সবার সামনে। ন্যূনতম খরচ খরচার হিসেব। রান্নার ঠাকুর, বাজার ঘাট, পথের জলখাবার, হোটেল, বাস বুকিং - এসব পর্ব মিটত একে একে। সপরিবার সমীর দা'র শালা কিংবা আল্পনা বউদির ছোটো বোন এসে হাজির হত কয়েকদিন আগেই। অবশেষে এসে পড়ত শুভ দিন। লাক্সারি বাসে চাপার আনন্দ। কিভাবে নব ঘুরিয়ে সিট বাঁকানো হয় দেখে নিতাম সবার প্রথমে।
উলুধ্বনি দিয়ে একসময় চলতে শুরু করত বাস। ঘুম ঘুম রাত। মায়ের গায়ে হেলান দিয়ে শোয়া। বাসের পিছনের সিটে পাড়ার উঠতি যুবকদের সিট থেকে ভেসে আসা বিড়ির গন্ধ। হৈ হল্লা। চোখ খুললেই আধো অন্ধকারে মুখ বাড়িয়ে দেখা - কোথায় এলাম। এদিকে বাসময় অমিতাভ কিংবা মিঠুনের সিনেমার গান। বাসের দুলুনি। পেট্রোলের গন্ধে কারো ওয়াক্ তোলা। এসব পেরোতে পেরোতে ঘুমোতে ঘুমোতে জাগতে জাগতে অবশেষে ভোরবেলা হঠাৎ মা ডেকে তুলতেই কানে সমুদ্রের হিল্লোল।
হোটেলে গন বন্দোবস্ত। ছেলেরা এক হলঘরে আর মেয়েরা আরেকটায়। বড়রা ব্যস্ত রান্না-বান্নার ব্যবস্থাপনায়। ইতিমধ্যে সোনা পিসির সাথে বাদল দা'র চোখ চাওয়াচাওয়ি শুরু হয়েছে। বার্তা বিনিময়ে আমরা ছোটোরা। বেলা বাড়তেই দলবেঁধে সমুদ্রস্নানে যাওয়া। সোমা বউদির হা হা হি হি। রাখাল কাকুর গামছা খুলে যাওয়া। আরও কত ভীতু সাহসী খোলামেলা রক্ষণশীল গল্প পেরিয়ে সন্ধেবেলা গানের লড়াই শেষ করে পংক্তি ভোজনে বসা।
এমনই ছিল গত শতাব্দীর পাড়াতুতো ভ্রমণ। কত প্রেম শুরু হত ওয়ান নাইট টু ডেজে। আবার ছোটোখাটো আগুনও লাগতো কত সংসারে। অবশেষে জগন্নাথের পায়ে মাথা ঠেকিয়ে মহাপ্রসাদ বেঁধেসেধে, ঝিনুকের পুতুল, ঘিয়ে ভাজা খাজা, কটকি গামছা ইত্যাদি নিয়ে গোটা পাড়া ফিরে আসত আবার। বোস গিন্নীর বেহায়াপনা, বিশ্বাস বাবুর ঢপবাজির চর্চা চলত কিছুদিন। আমার চন্দন কাঠের কলমে ক্রমশ সুগন্ধ ম্লান হয়ে আসত, কিন্তু ওই এক রাত দু'দিনের আনন্দ ফুরোত না কিছুতেই!
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register