Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

কাব্য কথায় সুপর্ণা বোস

maro news
কাব্য কথায় সুপর্ণা বোস

আমলকীবন

এক

একই সঙ্গে আকর্ষণ এবং বিকর্ষণ আছে।নচেৎ কবেই আমি ফুঁড়ে বেরিয়ে যেতাম ভরকেন্দ্রের দিকে।অথবা তুমি বিঁধিয়ে দিতে তির।
জীবন মানে দুনৌকায় পা।জন্মদিন থেকে জন্মদিনে লাফ দিতে দিতে জন্মটাই সরে যায় দূরে।একসময় বাবা মাকেও আর দেখতে পাওয়া যায় না সশরীরে।ভালবাসা থেকে ভালবাসায় লাফাতে গিয়ে প্রেমের পরচুল খসে যায়।
বেঁচে থাকা মানে হেঁটে হেঁটে হেঁটেচলে যাওয়া।মাটির সাথে ধাক্কাধাক্কি করতে করতে চলাটা জিইয়ে রাখা।খেলাটাও।
আর এই যে তুমি দূরে ঠেলে দাও।এটাই আমায় স্থির দাঁড়করিয়ে রাখে তোমার মুখোমুখি।চোখে চোখ রেখে।মেরুদন্ড সোজা।পাহাড়ের চুড়োর মত।শীতকাল এলে মাথা ঢেকে যায় বরফে।
আবার এটাও তো সত‍্যি,অভিঘাত না থাকলে এই স্থির আমি অস্থির হইনা!আর তুমি এভাবেই চলতে চলতে চলতে একদিন পৌঁছে যাও নিবৃত্তির গ্রামে। আমি গুনগুন করে গান ধরি উল্টো সুরে,আমার ভূবনে আলোরমেলা তুমি থাকো সাহারায়...
অখিলবন্ধু, ক্ষমা করবেন,আপনার গানটি ভালবেসে সতেরোবার গাওয়ার পর কখন যেন আমার হয়ে গেছে।আমি আমার মত করে আপনাকে পেয়েছি যদিও আপনি আমাকে ট‍্যাগ এবং ত‍্যাগ কিছুই করেননি।তবু, মিথ‍্যে বলব না, আপনার ফেলে যাওয়া গানগুলি আমায় প্রতিনিয়ত ট‍্যাগ্ করেই চলেছে...

দুই

আমি হেঁটে চলেছি শীতকালভর।ক্রমশ গহীন হচ্ছে আমলকিবন।এখন হাওয়া আছে মৃদু।শিরশিরানি নেই।হেমন্তে পাতা ঝরে ঝরে ঝরেপড়ে গেছে।খালি ডালগুলি জড়িয়ে ছোটছোট সাপ দোল খাচ্ছে।অকুতোভয় পার হয়ে যাচ্ছি।আমার কানের পাশে কেউ গুনগুন করেই চলেছে ।অথবা করছে না।আমি মিছিমিছি শুনতে পাচ্ছি।
না দেখার ওপারে তিলতিল করে নির্মাণ করেছি তাকে।শিশুরমত নগ্ন শরীর ঢেকে দিচ্ছি গরম পোশাকে।আমাদের এই ঋতুবিভ্রাটের দেশে কতটুকুইবা শীতকাল থাকে। কাথার পিঠে পিঠ দিয়ে বসে আদর পোহানো।সে একধরণের নির্বাণ। দিগম্বর করে কখনো!কখনো জীবনের বাঁকা সিঁথি ভরে দেয় বসন্তের আবীরে। শেষমেশ।
ক্রমশ ডুবে যাচ্ছি সুরের ভিতর। ঘন হচ্ছে সুরের অ‍্যারিনা।শুধু শ্বাসটুকু ভেসে আছে। চাবি খুঁজে পাচ্ছি না।
তারপর,ধাপে ধাপে পা ফেলে পৌছে যাচ্ছি যেখানে ক্রমশ ফিকে হয়ে আসছে পাতারা।রোদের তেজ বাড়ছে।কপালে বিন্দু বিন্দুঘাম।ঠোঁটের ওপর।
মন নিজেই একটা আস্ত মাটিরবাড়ি।সহজ শীতাতপ।সেখানে গান বাজে।সেই সুরে প্রাণ বাজে মাদলের মত।হেমন্তের আমলকীবনে পাতা ঝরে গেলে, সেই বাড়ি দূর থেকে দেখেছে পথিক। যার তৃষ্ণা প্রবল সে জল চেয়েছিল মাটির গেলাসে।

তিন

সুর থেকে সরবোনা বলে জেদ ধরে বসে আছি । অথচ সুর নিজেই সরে যাচ্ছে ক্রমশ পশ্চিমে।ভোরের আহীর থেকে দুপুরের বেহাগ ছুঁয়ে সাঁঝের ইমণ।একার জলসা আমলকীবনে।
গেরস্থেরা ঘুলঘুলি রাখেনা ঘরের দেয়ালে। যদি জোছনা ঢুকে পড়ে।যদি রাত ঠাহর না হয়!এখানে পাতারা সেজেছে রুপোজলে।
বিরহ ঝরলে ভোরে,নেশা ধরে হাল্কা মতন।তারপর ফুটতে থাকে চৌপরদিন মিঠে ও সুগন্ধী।নরম শীতের কাঁথা আর পিঠেপুলি।
বুকের ভিতর অক্ষর বাজছে ডম্বরুর মত।দ্রিমি দ্রিমি।পেরিয়ে যাচ্ছে কবিতাকাল।কুয়াশা নাবছে।শীতকাঁথায় রামায়ণের নকশা এঁকেছে কেউ।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register