Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে মনিরুল ইসলাম (পর্ব - ৩)

maro news
কর্ণফুলির গল্প বলা সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে মনিরুল ইসলাম (পর্ব - ৩)

রাজলক্ষী

রাজ স্পষ্ট লক্ষ্য করলো তার কথা বলার মধ্যে অন্যদিনের মত কোন ভনিতা নেই, নেই কোন আবেগ, আছে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস ও অন্তরের অতৃপ্ত বাসনা। ভালোবাসার মানুষকে চিরকাল কাছে পাওয়ার। রাজের কথা বলার আগে লক্ষী টেনে নিয়ে গেল পাশের একটা নির্জন ঘরে। লক্ষ্মী রাজের ফাঁকটা দুই হাত দিয়ে নিজের বুকে চেপে ধরে বলল,- রাজ আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচবো না, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। লক্ষ্মী নিজের মুখটা রাজের কানের পাশে নিয়ে ফিসফিস করে বলল, রাজ, তুমি কি পারোনা আমার সন্তানের বাবা হতে? রাজ ভীরু দুর্বলের মত তাকিয়ে দেখেছিল লক্ষ্মীর বিধ্বস্ত দুটি চোখ। রাজ অনুভব করেছিল কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাওয়া লক্ষ্মীর উষ্ণ শরীরটাকে। নিজের চোখের জল সামলে শান্তভাবে বলল, লক্ষী,- আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি আমার জীবনের প্রথম প্রেম। তুমি শান্ত হও, কি হয়েছে আমাকে বল। লক্ষ্মী রাজের হাত আরো শক্ত করে ধরে বললো, আমার বাবা আমার বিয়ে ঠিক করেছে এক স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে। আগামী বুধবার আমার বিয়ে। কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। রাজ,- চলো আমরা এখান থেকে পালিয়ে যাই অনেক দূরে। যেখানে নেই কোন বিষন্নতা, আছে কেবল ভালোবাসার সুখ। রাজ একমুহূর্ত থেমে গেল। তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। এতদিন সে একটা কল্পনার রাজ্যের অধিবাসী ছিল। হঠাৎ সে বাস্তবের মুখোমুখি দাঁড়ালো। নিজের ভূমিকা নিজেই হারিয়ে ফেলল। সমস্ত শরীর থরথর করে কেঁপে উঠলো। ইচ্ছে হচ্ছিল জীবনের একটি বার অন্তত লক্ষীর সুডোল ষোড়শী শরীরটাকে বুকে জড়িয়ে ধরে তার ভালোবাসাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানাতে। বিবেকের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে রাজ শুধু ঈশ্বরকে দোষারোপ করল। মৃদুস্বরে রাজলক্ষ্মী কে বলল, লক্ষ্মী হাতটা ছেড়ে দাও। অন্যরা দেখলে খারাপ বলবে। লক্ষ্মী কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে ধীরে রাজের হাতটা ছেড়ে দিয়ে বলল, রাজ তোমার কাছে আমার ভালোবাসার কোন মূল্য নেই? আমি কি তোমার কাছে কিছুই পেতে পারি না? লক্ষীর কথাগুলো রাজ্যের প্রতিটি পাঁজর ক্ষত বিক্ষত করে ফেলল। চোখ ফেটে জল গড়িয়ে পড়ছে মাটিতে। নিজেকে আরো শক্ত করে লক্ষ্মীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, লক্ষী, তুমি ফিরে যাও। তোমার বাবা তোমাকে সুখী করার জন্য স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে তোমার বিয়ে ঠিক করেছেন। এ বিয়ে তুমি মেনে নাও। তুমি সুখী হতে পারবে। লক্ষী বজ্রপাতের মত আত্মক্রন্দন করে বলল আর তুমি? রাজ আরও শান্ত ভাবে বলল, আমার কথা ছাড়ো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমার ভালোবাসার জন্য আমি পৃথিবীর সব থেকে বড় আঘাতটা হাসিমুখে মেনে নিতে পারবো। তুমি বাড়ি ফিরে যাও লক্ষী। লক্ষ্মী একদৃষ্টিতে রাজের প্রতি চেয়ে রইল। প্লিজ লক্ষ্মী, তুমি যাও। আবেগের বশে নিজের জীবনটা শেষ করে দিও না। লক্ষ্মী নিঃশব্দের রাজকে একটা প্রণাম করলো। তারপর চলে যাওয়ার উপক্রম করতেই রাজ বলল, আশীর্বাদ করার অধিকার নেই। শুধু বলব তুমি সুখী হও। ভালো থেকো, পারলে আমাকে ক্ষমা কোরো। লক্ষ্মী কোন কথা না বলে দু তলার সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে চলে যায়, ডি. এন.১২ বাস শেডে। রাজ চার দেওয়ালের চৌকাট পেরিয়ে দোতলার রকে পাথরের মত দাঁড়িয়ে চেয়ে আছে লক্ষ্যের দিকে। বাস এল। লক্ষ্মী একবার পিছন ফিরে দেখল, রাজের রক্তাক্ত চোখ দুটি চাতকের মত চেয়ে আছে তার দিকে। লক্ষ্মী বাসে উঠতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো, মনে মনে ভাবল এক দৌড়ে চলে যায় রাজের কাছে। আবার ভাবল পৃথিবীতে কে কার? এমন কত বিচ্ছেদ তো মানুষের জীবনে আছে। লক্ষ্মী উঠে পড়ল বাসে। তারপর বাঁশি দিয়ে ছুটে চলল রাজের বুক চিরে তার নিজের গন্তব্যে...
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register