Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ৩)

বাউল রাজা

তৃতীয় খন্ড(তৃতীয় পর্ব) আমার দুঠোঁটে কৃষ্ণভামার আঙুলের স্পর্শ লেগে আছে। ফুটিফাটা মাটির বুকে প্রথম বর্ষণের শীতল স্পর্শের মতো যেন সে স্পর্শ। বহুদিন পর আবার ফের আমার ঘ্রাণেন্দ্রিয় ভরে যাচ্ছে বোঁটা ছেঁড়া কাচা আমের কষের তীব্র গন্ধে। কোথায়, কোন অতলে যেন তলিয়ে যাচ্ছি আমি, আমার চোখে ভেসে উঠছে কানাই বাউলের আখড়ার সামনেকার রাস্তা। সে রাস্তায় কপালে রসকলি আর মাথায় চূড়া করে বাঁধা কুন্তলে হলদেরঙা চাঁপাফুল। একহাতে একতারা বাজিয়ে চলেছে বাউলনি। গাছগাছালির পাতার ফাঁকে ভোরের সূর্যের আলো লুটোপুটি খাচ্ছে। বাউলনি গান গাইছে --- " শ্যাম অঙ্গে অঙ্গ দিয়া - আছো রাধে ঘুমাইয়া গো, কুল কলঙ্কের ভয় কী তোমার নাই গো জয় রাধে... " --" ঠাকুর... " যেন কোন পুষ্করিণীর গভীর তলদেশ থেকে ওঠা একটা বুদবুদের মতো শব্দ এসে আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করলো। --" উঁ...? " --" কতোবার বলেচি, আমার চোকে তোমার কোনো দোষ ধরা পড়ে না। তবুও তুমি বারবার অন্যায় করার কতা বলে আমারে পাপের ভাগী করো কেন বলো দেকি? " এতোক্ষণে আমি যেন ফের মাটিতে পা রাখলাম। দেখি তখনও বাউলদিদির আঙুল আমার ঠোঁট স্পর্শ করে আছে। ধাবার উঠোনের খাটিয়াগুলোতে যতো ড্রাইভার, খালাসি, বাসন মাজার মহিলা, এমনকি ছোট্টু, যে ছেলেটা আমার পেছনে বেড়ালের মতো ঘুরঘুর করে সবাই আমাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আমি দুহাত দিয়ে বাউলনির দু কাঁধ ধরে খাটিয়া থেকে তুলে দাঁড় করালাম। -- " তোমার কি খিদে পেয়েছে গো বাউলদিদি? খাবে কিছু? " --" কতোদিনের খিদে যে আজ মরলো গো ঠাকুর, সে তুমি বুজবে না। আমার মনের পেট পরিপুন্য হয়ে গেচে আজ। " গলার স্বর নীচুগ্রামে নামিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম --" সত্যি করে বলো দেখি, তুমি কি চাও? আমি আজ তোমার সাথে আখড়ায় যাই? না কি অন্যকোনো.. " কথা পুরো শেষ করতে পারলাম না। দেখি কৃষ্ণভামার দু'চোখের কোলো দুটো মুক্তোর বিন্দু টলমল করে উঠলো। ওই মুক্তোবিন্দু দুটোই যেন কাতরভাবে আমায় বলে উঠলো -- তুমি কি সত্যিই মনের কতা বুজতে পারলে না কো! এ কতা কি শুদোতে হয় গো ঠাকুর! আমি বুঝলাম আমি ফের আটকে গেলাম। যে ভয় পেয়ে এই দীর্ঘ পাঁচ ছ বছর আমি ওদিকপানে তাকাইনি পর্যন্ত, আমার সেই পালিয়ে বেড়ানোর দিন শেষ। আজ আমি ধরা পড়ে গেছি। ভাগ্যিস আজ আমি কেবলমাত্র একটাই ট্রাকে মাল বোঝাই করেছি। শাজানভাইকে ডেকে, কোথায় মাল খালি করতে হবে বুঝিয়ে দিলাম। গোলার মালিককে একটা হাতচিঠি লিখে দিয়ে গাড়িভাড়াটা দিয়ে দিতে বলে শাজানভাইয়ের হাতে দিয়ে ব্যাগ কাঁধে এসে দাঁড়ালাম কৃষ্ণভামার সামনে। --" চলো গো বাউলদিদি, আজ মা তারা তোমার সাথে যাওয়ার জন্যই আদেশ করেছেন। " -- " কি গো পদীপদাদা, খাবেনি আজ? আগে একসাতে বইসে খাওয়ারটা খেইয়ে নিই চলো কেনে। " খালাসি অরুণ এসে সামনে দাঁড়ালো। ওর হাতে কিছু টাকা দিয়ে খেয়ে নিতে বলে পা বাড়ালাম ফের সেই কুহক রাজ্যে। যেখানে নদী, ছাতিমগাছ, হাওয়া সবাই কথা বলে, যেখানে মোহ এসে মায়ার আঁচল পেতে দাঁড়ায়, যেখানে ভালোবাসা একতারার সুরে বলে ওঠে -- " মনরে তুই মুখ্যু বড়ো, তুয়ার বিচার কেমনতর! " চলো হে বাউলনি, এ প্রেমের শেষ দেখবো এবার। হয় ধরা দেবো, নয়তো মায়ার বাঁধন কাটবো। ক্রমশ 
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register