Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে প্রদীপ গুপ্ত (পর্ব - ১)

বাউলরাজা

তৃতীয় খন্ড (প্রথম পর্ব) অনেকক্ষণ পর যেনো মেঘের আড়াল থেকে সামান্য একটু চাঁদ উঁকি দিলো। মুখের ওপর থেকে অন্ধকার গুমোট কাটিয়ে সে জিজ্ঞাসা করলো, -- আচ্ছা ঠাকুর পকিত সত্য কাকে বলে? -- আলোকে। -- কেন? আঁধার বুজি সত্য নয়? -- না -- তালেপর সে কী? -- সে কুহক। এ জন্যই সে চিরস্থায়ী নয়। -- আলোই কি চিরস্তায়ী? সেও তো -- -- একমাত্র আলোই চিরস্থায়ী। পৃথিবী তাঁর নিজের শরীর দিয়ে আলোকে আটকে রাখে। নিজের অর্ধেক শরীরে আলোকে পৌঁছুতে দেয় না। তাই সে কুহক। নিজের সাথে নিজেই বিরোধ তৈরী করে। সত্যের প্রখরতা থেকে নিজেকে আড়াল করে। -- তালেপর সত্যকে মিথ্যের আড়ালে কে ঢেকে রাকে বলো দেকি? কোন পিথিবির শরীর? -- মন। মনের শরীর। -- তুমি যে কী কটিন করে কতা কও আমি তার বিন্দুবিসজ্ঞ বুজি নে। মনের আবার শরীর কোতায় গো ঠাকুর? কথাটা বলেই আমি বুঝেছিলাম যে এবারে বিপদ ঘনিয়ে আসছে। আমি কথাটা ঘোরানোর জন্য বললাম -- আচ্ছা বাউলদিদি, সারাগায়ে পাথরগুঁড়ো মেখে আমি যেরকম ভুতের মতো হয়েছিলাম, তুমি আমাকে চিনলে কীকরে? ফের যেন মূহুর্ত মধ্যে আঁধার নেমে এলো। বাউলনি কৃষ্ণভামা মুখ নীচু করে বসে রইলো। বোশেখ মাসের গনগনে রোদে লাল্টুর ধাবার উঠোনের মাটি ফেটে চৌচির। সেই মাটির বুকে দুফোঁটা জল পড়ামাত্রই শুকিয়ে গেলো। জলের চিহ্নমাত্র রইলো না। কিন্তু কৃষ্ণভামার নাকের পাটার ওপর একফোঁটা অশ্রুবিন্দু যেন হীরের নাকছাবির মতো জ্বলজ্বল করতে লাগলো। -- তোমার মন নেই গো ঠাকুর! -- এ কথা কেন? -- তুমি যে আমায় ভালোবাসার কতা শুইনেচিলে সে সব কি তালে -- -- এটাই মনের শরীর। হঠাৎ যেন চমকে উঠলো বাউলদিদির শরীর। কেঁপে উঠলো। -- মানে? -- মানে আবার কী? মানে হলো, মনের শরীরের নাম ভালোবাসা। যে মনে ভালোবাসা নেই, সে মন কোনো সত্যের শরীর আঁকড়ে থাকে না। সে মনে আলো নেই। অথবা আলোর প্রবেশাধিকার নেই। হয়তো পৃথিবীর শরীরের মতো মনের শরীরও আলোকে আটকে রাখে, ভালোবাসাকে মনের ভেতরে বাসা বাঁধতে দেয় না। শেষ যেবার দেখা হয়েছিলো কানাইদা আর কৃষ্ণভামার সাথে তারপর দীর্ঘ ছ'বছর কেটে গেছে। এই ছ বছর অন্ততপক্ষে ছশোবার আমি রামপুরহাট এসেছি। কলকাতা থেকে খালি ট্রাক ধরে এখানে এসে পাথরকুঁচি বোঝাই করে ফের ট্রাকে করেই ফিরে গেছি কলকাতা। তারাপীঠমুখো হইনি। আজও শাজানভাইয়ের ট্রাকে পাথরকুঁচি বোঝাই করে, ক্র‍্যাসিং মেসিন থেকে বাতাসের বুকে মিশে যাওয়া পাথরের ধুলো সারা গায়ে মেখে, অসহ্য গরম শরীরে বয়ে নিয়ে এসে যখন ঠান্ডা জলেভরা বিশালাকৃতি চৌবাচ্চা থেকে উদোম গায়ে জল ঢালতে যাবো, তখনই আওয়াজটা কানে এলো। -- পদীপদাদা -- মুখ ঘুরিয়ে দেখি জলভারবাহী কৃষ্ণকান্তু মেঘের মতো লাবণ্য মেখে বাউলনি বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার মাথার চুল বেয়ে তখন কর্দমাক্ত পাথরের গুঁড়ো কপাল বেয়ে দুগাল ধরে নামছে। আমি কোনোক্রমে দুহাতের চেটো দিয়ে চোখের ওপর বেয়ে পড়া কাদাজল সরিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে রইলাম সেই জলদ শরীরের দিকে। ক্রমশ
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register