Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

গল্পবাজে অঞ্জলি দে নন্দী, মম

maro news
গল্পবাজে অঞ্জলি দে নন্দী, মম

আমাকে বুঝতে চাও?

শতাব্দী ট্রেনে করে আসছি। দার্জিলিং থেকে কলকাতায় ফিরছি। অনেক খাবার দিচ্ছে। ট্রেনের বেশ কয়েকজন যাত্রী প্রচুর খাবার নষ্ট করল। দেখছি আর ভাবছি যে যদি এই খাবারগুলো ভিখারিরা পেতো খেয়ে বাঁচত। তা আমার জন্য যে খাবার এলো তার পরিমাণ এতো বেশি যে আমি আর কিছুতেই অনেক চেষ্টা করেও উদরোস্ত করতে পারছি না। নষ্ট করতে মন চাইছে না। তো রুটিগুলি এলুমিনিয়াম ফয়েলে প্যাক করাই ছিল। ওগুলি আর না খুলে আমার ভ্যানিটি ব্যাগে ভরে নিলুম। অনেকেই আমার দিকে তখন এমনভাবে দেখছিল যেন আমি এগুলি বাড়ি নিয়ে গিয়ে খাবো বলে ব্যাগে পুরে নিচ্ছি। তাকানোর রকম দেখে বুঝলুম যে ওরা আমাকে খুব বিলো স্ট্যান্ডার্ড মেন্টালিটির লেডি ভাবছে। আমি ওদের দৃষ্টির সঙ্গে নিজের দৃষ্টি মেলালুম। ওরা অসম্মানজনক, নীরব, হাল্কা হাসি আমার দিকে ছুঁড়ে উপহার দিল। আমার পুত্র বলল, " মম! ওগুলো ব্যাগে রাখছ ক্যানো?" পতি বলল, " ওগুলো এঁটো প্লেটে ফেলে দাও!" আমি ওদের দুজনকে বললাম, " হাওড়ার স্টেশনে কাউকে দিয়ে দব।" ওরা আর কিছু বলল না। আর আশেপাশের যারা আগে ওরকমভাবে আমাকে দেখছিল তারাও এখন অবাক, অপলক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়েই রইল। আমরা হাওড়ায় নামলুম। বেশ ভীড়। হাঁটছি। এক বৃদ্ধা ভিখারিণী একধারে বসে ঝিমোচ্ছে। বিধবা। পরণে ছিন্ন কাপড়। হাতে ধরা আছে একটা তোবড়ানো বাটী। আমি ওর সামনে থামলুম। দাঁড়িয়ে রুটিগুলি বের করে বাটিতে দিলুম। সে বলল, " বেঁচে থাক মা!" ততক্ষণে আরেকজন বৃদ্ধা বিধবা কোমর নিচু করে, বাটী হাতে এসে উপস্থিত হল। সে বলল, "আমাকেও দাও মা!" আমি বললুম, "আর তো নেই গো মা।" তারপর সামনে তাকিয়ে পুত্র ও স্বামীকে দেখতে পেলুম নি। ততক্ষণে ছেলে ও তার পপ ভীড়ে কোথায় যে হারিয়ে গেছে, আমি আর কিছুতেই তাদের খুঁজে পাচ্ছি না। এদিক ওদিক দেখে দেখে দেখে এগোচ্ছি। হঠাৎ আমার সুপুত্র পাশ থেকে এসে ডাকলো, "মম! এদিকে এসো!" আমি আমার ছেলেকে অনুসরণ করে চললুম। এরপর ও আমাকে নিয়ে ওর পপের কাছে হাজির হল। সে তখন উবেরে ট্যাক্সী বুক করছে, কলকাতার হোটেলে যাবো বলে।
Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register