Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

কর্ণফুলির গল্প বলায় স্বপঞ্জয় চৌধুরী - ৫

maro news
কর্ণফুলির গল্প বলায় স্বপঞ্জয় চৌধুরী - ৫

চন্দ্রক্ষুধা

পাঁচ

এক সপ্তাহ পর। ছাদে পানি দিচ্ছে পুষ্প। তার সমস্ত শরীর বোরখায় ঢাকা। হাতের কব্জি দুটোয় শেষ বিকেলের সূর্যের আলো পড়ে রাঙা হয়ে উঠেছে। পাশের বাড়ির ছাদে পায়চারি করছে আসলাম। পুষ্প আসলামকে দেখেও না দেখার ভান করে আছে। আসলাম মোটা গগজের ফাঁক দিয়ে পুষ্পের হাতের কব্জিদুটো দেখছে। তার শিরা উপশিরা দিয়ে যেন আমাজান নদীর প্রবাহমানতা খেলা করছে। আসলাম পুষ্পকে সালাম দেয়। জ্বে আসসালামুআলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। পুষ্প কোন কথা বলে না। আসলাম খানিকটা হাহুতাস করে বলে এ কেমন মোমেন বান্দারে খোদা সালামের জওয়াব দেয়না। এক্সকিউজ মি সাহেবান আপনে কি আমার সালাম শোনতে পারছেন। পুষ্প কোন কথা বলে না। সাহেবান আমার নাম আসলাম। ঐ যে কয়েকদিন আগে ভোরবেলায় দেখা। পুষ্পের পানি দেয়া শেষ। পুষ্প খানিকক্ষণ বোরখার ভেতর হেসে নেন। তারপর সালামের জওয়াব দেন ওয়ালাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আমি সাহেবান নই আমার নাম পুষ্প। আসলাম সালামের জবাব পেয়ে পুলকিত চিত্তে বলে সোবাহন আল্লা। কণ্ঠটা মাশআল্লা অনেক সোন্দর। এক্কালে মোগো গেরামের চন্দ্রবানুর লাহান। পুষ্প হাত থেকে পানির বালতিটা রেখে বলে এই যে মিস্টার মেইড ইন বরিশাল ডোন্ট ক্রস লিমিট আর চোরের মতো ছাদে ঘুর ঘুর করবেননা। আসলাম জিহবায় কামড় দিয়ে বলে নাউযুবিল্লাহ মোর বাপ-দাদার কেউ চোর আছেলেনা। দেলে বড় চোট পাইলাম। পুষ্প ছাদ থেকে চলে যায়। মসজিদে আজান দিচ্ছে। আসলামও নিজের ঘরে গিয়ে ওযু করে নামায পড়া আরম্ভ করে। এরপর আসলাম প্রতিদিন পুষ্প ছাদে পানি দেয়ার সময় ছাদে ওঠে। কলেজে যাওয়ার সময় ওর পেছনে ঘুর ঘুর করে। আগ বাড়িয়ে কুশলাদি জিজ্ঞেস করে জ্বে সাহেবানের শরীলডা ভালো। আবার কোন কোন সময় গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু পুষ্প খুবই অনড় সে আসলামকে পাত্তাই দেয়না। পুষ্পের বাবা বাজারে গেলে তাকে ফলো করে। সে বাজার থেকে আসার সময় তাকে সালাম দিয়ে গল্প জমায়। তার বাজারের ব্যাগ বাসায় পৌছে দেয়ার নাম করে পুষ্পের অনুপস্থিতিতে ঘরে ঢোকে। সে এ দেয়াল ও দেয়াল তাকায় কিন্তু কোথাও পুষ্পের কোন নিশানা খুঁজে পায় না। দেয়ালে একটা ফটো টটো থাকলে হয়তো পুষ্প সম্পর্কে সে একটা আন্দাজ করতে পারতো। সে দেখতে কেমন পরীর মতো নাকি এরাবিয়ান নাইটস এর রাক্ষুসী সোফান ইজবার মতো। কিন্তু সে মনে মনে পুষ্পের একটা ছবি এঁকে ফেলে। যার দিকে শুধু অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা যায়। সে হয়তো চন্দ্র কিংবা তার কাছাকাছি কিংবা তার চেয়ে বেশি সুন্দর কোন মুখ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এই সে পুষ্পের হলদে রাঙা হাতের কব্জি ছাড়া আর কিছুই দেখেনি। তার চোখ বড় তৃষ্ণার্ত। তার মনের মধ্যে এক ক্ষুধা কাজ করে। এ ক্ষুধার একটা নাম দিয়েছে সে চন্দ্রক্ষুধা। মনে করুন পরীক্ষায় এভাবে আসলো। এক কথায় প্রকাশ কর, প্রশ্ন চাঁদকে দেখবার জন্য যে ক্ষুধা, উত্তর-চন্দ্রক্ষুধা।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register