- 3
- 0
এইবার ঈদুল ফিতরের সময়টুকু ভালোই কেটেছে, করোনার জন্য মন মতো ঈদ উদযাপন করা হয়নি।প্রায় দু'বছরেরও বেশি সময় পর সবার সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করলাম। আমি কর্মসূত্রে গাজীপুরের নাওজোড় একটা পোশাক শিল্প কারখানায় মানব সম্পদ বিভাগে কর্মরত আছি।গত ৩০ এপ্রিল আমার অফিস খোলা ছিলো,দুপুরের আগেই ঐদিন সমস্ত কাজ শেষে বাড়ির উদ্দেশ্য যাত্রা করলাম। ভেবেছিলাম টঙ্গী হয়ে বাড়ি যাবো কিন্তু মত বদলে ফেললাম মুহূর্তেই। প্রথমে অটোরিকশা করে গাজীপুরের চৌরাস্তায় গেলাম সেখান থেকে সিএনজি করে রাজবাড়ি মাঠ। ওখানে অনেকগুলো সিএনজি ছিলো বিভিন্ন জায়গার, সেখান থেকে সিএনজি করে চরসিন্ধু ব্রিজ গেলাম,পথে যেতে যেতে সবুজ বন, গাছগাছালি ও প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মন জুড়ে গেল। চরসিন্ধু ওভার ব্রিজের খাঁড়া ঢাল বেয়ে নিচে নেমে আবারও সিএনজি করে ইটাখোলায় পৌঁছে গেলাম। অনেক তৃষ্ণা পাচ্ছিলো কিন্তু রোজা রেখেছি বলে কিছু খাওয়া সম্পূর্ণ নিষেধ।ইটাখোলা থেকে বাসে করে নরসিংদীর ওপর দিয়ে ভৈরব পৌঁছে গেলাম দুপুরের মধ্যে। ওখানে বিআরটিসির দুতলা বাসে করে আশুগঞ্জ পৌঁছে গেলাম। বাস থেকে নেমেই রাস্তার পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছ দেখে অভিভূত হয়ে কয়েকটি ছবি তুললাম।আবারও সিএনজি করে বিশ্বরোড পৌঁছে গেলাম। অপেক্ষা করছিলাম কখন বাড়ি ফিরবো, ইফতারের দেড় ঘন্টা আগেই বাড়ি পৌঁছে গেলাম। ঐদিন ইফতারটা মায়ের সাথে পরিবারের সকলে মিলেমিশে করে নিলাম। সন্ধ্যায় আমাদের বাড়ির পাশে জল চত্বর(সুহিলপুর বাজার) পুরাতন বন্ধুদের সাথে কথা ও আলাপচারিতায় মন ভরে গেলো। পরদিন সুহিলপুর বাজার ছাত্রসংসদ আয়োজিত দোয়া ও ইফতার মাহফিলে গিয়ে এলাকার পরিচিত প্রিয়জনদের সাক্ষাৎ পেয়ে খুবই ভালো লাগছিলো। এইবার রোজা ত্রিশটি হওয়ার শেষ তারাবি নামাজ আমাদের মৌলভীবাড়ির জামে মসজিদেই আদায় করে নিলাম। যথারীতি ঈদের দিন পাড়ার সবার সাথে নতুন জামা পড়ে ঈদগাহে গেলাম, নামাজ পড়ে নিলাম, শেষে এলাকার সম্মানিত ও প্রিয় মানুষদের সাথে কোলাকুলি,ঈদ আনন্দ উপভোগ করলাম।যদিও তখন নামাজের সময় গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি ঝরছিলো,তারপরও অনেক ভালো লাগছিলো। খুতবা ও মোনাজাত শেষ করে আমাদের সুহিলপুরের সাবেক চেয়ারম্যান মোবারক মুন্সি ভাইয়ের আমন্ত্রণে আপ্যায়নে মুগ্ধ হলাম।ঈদের দিন সন্ধ্যায় আমার প্রিয় পাঠশালা জিল্লুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ে সুহিলপুর রানিং প্লেয়ার এসোসিয়েশন আয়োজিত ঈদ পূর্ণমিলনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে কবিতা ও কিছু কথা বলার সুযোগ পেলাম, যদিও একটা নাটকে অল্প সময়ের অভিনয়ের কথা ছিলো,কিন্তু কোন কারণে হয়নি।পরদিন সুহিলপুর বাজার খেলার মাঠে অতিথি হিসেবে নিমন্ত্রণ পেয়েছি, ক্রিকেট খেলা উপভোগ করেছি, সবকিছুই অসম্ভব সুন্দর লাগছিলো তবে মাঠে ব্যাটে-বলে খেলার সুযোগ পাইনি, যদিও একসময় অনেক ক্রিকেট খেলেছি।এই ঈদের সময় বাড়ি এসে সবার বাড়ি বাড়ি গিয়েছি, খোঁজ খবর নিয়েছি। তিতাস নদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর, গ্রাম ও গঞ্জের রূপে মুগ্ধ হয়েছি। জেলা শহরের আদালত ভবন চত্বরে সিকন্দাবাদের মতোই জীবন্ত ঈগল পাখি হাতে নিয়ে খেলায় মেতেছি। পাশেই গোকর্ণঘাট পেরিয়ে চমৎকার জায়গা রসুলপুর গিয়েছিলাম,আসার পথে দাদীর বাপের বাড়ি শালগঁও কালিসীমা আমার ছোটবেলার জায়গাটি ঘুরে দেখে এলাম। গত শুক্রবার শেষ সময়ে হবিগঞ্জে চুনারুঘাট বায়তুল নুর সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান জামে মসজিদে জুম্মা নামাজ আদায় করলাম। তারপর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য ও আঁকাবাঁকা পথে চা বাগান দেখলাম, অনুভব করলাম ওখানকার শ্রমিকদের জীবনযাপন ও কষ্টগুলো। দেখে আসলাম ওখানকার সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান। এইভাবে সন্ধ্যার আগেবাগেই ফিরে এলাম মাধবপুর,শাহবাজপুর ব্রিজ পার হয়ে বাড়ির দিকে। শনিবার ছিলো শেষদিন, শেষমেশ নিজের গ্রামটি আরও একনজরে দেখে নিলাম,পথে ছোট ছোট ছেলেরা মার্বেল খেলা করছিলো আমিও ছেলেবেলায় হারিয়ে গিয়ে একচোট মার্বেল খেলে নিলাম। সন্ধ্যায় ফেরার ঠিক আগমুহূর্তে কবি ও কথাসাহিত্যিক মোঃ আমির হোসেন ভাই নক করলেন, ছুটে গেলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ভাষাশহীদ ধীরেন্দ্রনাথ চত্বরে। সাহিত্য একাডেমি আয়োজিত বৈশাখী উৎসবে কবিতা ও অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ পেয়ে মন ভরে গেল। আর এইবার এমনই করে ঈদুল ফিতরের সুন্দর সময় কাটছিলো। শনিবার রাতে কাজী পরিবহন বাসে করে আবারও কর্মস্থল গাজীপুরের উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। চোখের কোণে ঝলমল করছে ফেলে আসা ঈদের স্মৃতিগুলো।
0 Comments.