Fri 19 September 2025
Cluster Coding Blog

সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব - ২)

maro news
সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে সুদীপ ঘোষাল (পর্ব - ২)

হারিয়ে যাওয়া একলব্য

আমি বলছি তোমরা পাঞ্চালরাজ দ্রুপদ কে যুদ্ধে পরাজিত করে বন্দি করে আমার কাছে নিয়ে এসো। এই আমাকে দেওয়ার শ্রেষ্ঠ দক্ষিণা। অনেক দিন ধরে আমার অন্তরে একটা আগুন জ্বলছে। তখন কুমারগণ সকলেই রথে চড়িয়া দ্রোনের সহিত দ্রুত গতিতে রাজ্যের দিকে ধাবিত হইলেন। দ্রোণাচার্য শিষ্যদের নিয়ে যুদ্ধে চলছেন।বাহিনীতে রয়েছেন দূর্যোধন, কর্ণ, যুযুৎসু, দুঃশাসন, বিকর্ণ, জলসন্ধ, পঞ্চপান্ডব। দ্রুপদ আর তার মন্ত্রীদের বন্দী করে দ্রোণাচার্যের কাছে আনা হল। অস্ত্রধারী দ্রোণাচার্য এই ক্ষণ টির অপেক্ষায় ছিলেন। এসো, এসো রাজা এসো! কোথায় তোমার সিংহাসন! রাজমুকুট, রাজছত্র, অমাত্য বিমাত্য! রাজভূষণের এ কী অবস্থা! নিশ্চয়ই তুমি আমার বন্ধু নও! বন্ধু ভেবে আমাকে আলিঙ্গনের চেষ্টা করো না। তুমি এখন রাজ্যহারা ভিখারী। রাজার বন্ধু কি ভিখারী হতে পারে? পাঞ্চালের রাজা এখন আমি ভরদ্বাজ গোত্রীয় ব্রাহ্মণ দ্রোণাচার্য। না না আমি তোমাকে প্রানে বধ করবো না কারণ আমি যে ব্রাহ্মণ, ক্ষমাই ব্রাহ্মণের ধর্ম। তাছাড়া, তুমি যে আমার বাল্যবন্ধু! সে কথা আমি ভুলি কেমন করে। তবে আমি তোমাকে একটি কথা বলছি শোনো? এই যে গঙ্গা নদী দেখতে পারছো না ওই নদীর দক্ষিণ দিকে রাজা তুমি।আর উত্তর দিকে রাজা আমি, এই কথা শুনে দ্রুপদ রাজি হয়ে গেলেন। মনে মনে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছেন আমাকে একটি মহাশক্তিশালী পুত্র চাই তবেই এই দ্রোণাচার্য কে পরাজিত করতে পারবো

কৌরব ও পান্ডবকুমারের কথা কৌরবরা ছিল একশ ভাই ও এক বোন আর পান্ডবরা পাঁচভাই।পান্ডুরাজা ছিলেন পান্ডবদের পিতা। শাপের কারণে পান্ডু যেহেতু সন্তান ধারণ করতে পারেননি, তাই পান্ডবরা একটি মন্ত্র ব্যবহার করে জন্মেছিলেন। পান্ডু এবং মাদ্রির মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তারা একটি বনে বাস করত। তাদের মৃত্যুর পরে কুন্তী নাকুলা ও সহদেবকে দত্তক নেন এবং তার পাঁচ সন্তানকে হস্তিনাপুরে নিয়ে যান। সেখানে তাদের চাচাত ভাইদের সাথে দেখা হয়েছিল, যারা তাদের আগমনে সন্তুষ্ট হয়নি। কৌরব এবং পাণ্ডবগণ কৃপাচার্য ও দ্রোণ দ্বারা শিক্ষিত ও প্রশিক্ষিত ছিলেন। শৈশব থেকেই দুর্যোধন এবং তাঁর দুষ্ট চাচা শাকুনি পাণ্ডবদের একাধিকবার হত্যা করার চেষ্টা করেছিলেন। এর মধ্যে একটি হ'ল লক্ষগ্রহীর ঘটনা, যা ভাই এবং তাদের মাকে লুকিয়ে রাখে। তাদের আত্মগোপনের সময়, ভীম হিদিম্বাকে বিয়ে করেছিলেন এবং ঘটোটকাচ নামে তাঁর একটি পুত্রও ছিল। এই সময়কালে, অর্জুন দ্রৌপদীর হাত ধরে কিন্তু কুন্তির ভুল বোঝাবুঝির কারণে তিনি পাঁচ ভাইয়ের সাথেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। পরে, ভাইদের ধৃতরাষ্ট্র দ্বারা শাসন করার জন্য একটি অনুর্বর জমি দেওয়া হয়েছিল। যাইহোক, তারা এটিকে ইন্দ্রপ্রস্থের এক দুর্দান্ত নগরে রূপান্তরিত করে। হিংসুক দুর্যোধন যুধিষ্ঠিরকে জুয়ায় আমন্ত্রণ জানিয়েছিল যা মহাকাব্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল। যুধিষ্ঠির জুয়ার আসক্তির কারণে পাণ্ডব এবং দ্রৌপদী খ্যাতি, সম্পদ এবং রাজ্য হারিয়েছিলেন এবং তের বছরের জন্য প্রবাসে প্রেরণ করেছিলেন। বারো বছর নির্বাসনের পরে, তারা ছদ্মবেশে বাস করত।

একলব্যের হারিয়ে যাওয়া জীবন তারপর একলব্যের আর এক জীবন শুরু হল।তিনি শূদ্রদের এক ছাতার তলায় নিয়ে এলেন।তাদের বললেন,তোমরা কি নপুংসকের মত জীবন কাটাতে চাও নাকি বীরত্বের সঙ্গে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চাও।সমস্বরে উত্তর আসে,আমরা মাথা উঁচু করে চলতে চাই।একলব্য বলেন, তাহলে আজ থেকে শুরু কর শরীরচর্চা ও সাধনা। তারপর শুরু হয় 'একলব্য দলের ' অস্ত্রশিক্ষা ও যুদ্ধের নিয়ম শেখার প্রস্তুতি।শূদ্রসমাজে এক নবযুগের জোয়ার জেগে ওঠে।জাতপাতহীন এই দলে সকলেই অস্ত্রশিক্ষা করতে পারতেন কোন মূল্য ছাড়াই।একলব্য দল, শুরু করল সমাজসেবা,শিক্ষা ও সমাজ সংস্কারের পূনর্মূল্যায়নের পাঠ। একলব্যের জয়ধ্বনিতে ভরে উঠল আকাশ, বাতাস। নবযুগের সূচনা হল শূদ্রসমাজে। সকলের আড়ালে থেকে একলব্য সাধনা করে গেছেন আজীবন সত্য, শিব ও সুন্দরের। এই বিখ্যাত ধনুর্ধর একলব্য ছিলেন,নিষাদ রাজ্যের রাজপুত্র। তিনি অর্জুনের থেকেও বড়বীর হতে পারতেন, যদি দ্রোণ কর্তৃক প্রতারিত না হতেন।দ্রোণ গুরুদক্ষিণা স্বরূপ বৃদ্ধাঙ্গুলি চেয়ে বসলেন।কারণ তিনি জানতেন একলব্যকে যদি দমন করা না যায় তাহলে পৃথিবীতে তিনিই শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর হিসেবে গণ্য হবেন।দ্রোণাচার্য ছিলেন,বিজ্ঞ রাজনীতিবিদ।রাজবংশের সুরক্ষার দায়ীত্ব তার।তাই ছলে,বলে,কৌশলে প্রতিপক্ষকে দমন করাই তার কাজ।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register