Thu 18 September 2025
Cluster Coding Blog

গারো পাহাড়ের গদ্যে মোহাম্মদ শামীম মিয়া (ভ্রমণ কাহিনী)

maro news
গারো পাহাড়ের গদ্যে মোহাম্মদ শামীম মিয়া (ভ্রমণ কাহিনী)

স্মৃতিময় খুলনা

বৃহস্পতিবার অফিস থেকে দুপুরে ছুটে নিয়ে ছুটে চললাম খুলনা উদ্দেশ্য একবার ভেবেছিলাম নবীনগর দিয়ে দৌলতদিয়া ঘাট হয়ে বাসে যাবো, ততক্ষণে মত পাল্টে ফেললাম, একবার ভেবেছিলাম ট্রেনে করে যাবো, ট্রেনে নাকি ভ্রমন বেশ আরামদায়ক। ছুটে গেলাম জয়দেবপুর রেলস্টেশনে কিন্তু কপাল মন্দ তাই টিকেট পেলাম না। জয়দেবপুর থেকে বিকাল পাঁচটার আগে কোন ট্রেন ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে যাবে না, তাই সহজ পথে অটোরিকশা করে ছুটে চললাম টঙ্গী। যেখান থেকে রাইদা বাসে করে ছুটে গেলাম যাত্রাবাড়ি, কবি আসাদ সরকার ভাই ও ডক্টর মোয়াজ্জেম হোসেন স্যার নরসিংদী থেকে এসে অবস্থান করছিলেন আগেই, ওনারাও খুলনা যাবেন। ইলিশ এসি বাসে করে ছুটে চললাম, বাস দ্রুত নিয়ে গেলো মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া মাওয়া ঘাটে। সেখান থেকে লঞ্চে করে প্রায় দেড় ঘন্টায় পাড়ি দিলাম পদ্মা নদী। অনেক স্বপ্ন ছিল পদ্মাসেতু দেখবো ও ছবি তুলবো, রাতের আঁধারে সেতুটা দেখেছি মনের মতো ছবি তুলতে পারিনি। নদী পার হয়ে কাঁঠালিয়াবাড়ি লঞ্চ ঘাটে আমি ও কবি আসাদ সরকার ভাই পদ্মা নদীর তাজা ইলিশ মাছের ভাজি দিয়ে পেট ভরে ভাত গেলাম। খুলনার উদ্দেশ্য বাস তখন ছেড়ে দিচ্ছিলো তড়িঘড়ি উঠে গেলাম। বাস ছুটে চলল খুলনার উদ্দেশ্য ফরিদপুরের ভাঙা পার হয়ে, গোপালগঞ্জ পেরিয়ে বাগেরহাটের হাটের কাটাখালি ও মোংলা মোড় দিয়ে রুপসা ব্রিজ পেরিয়ে খুলনা শহর পৌঁছে গেলাম। জীবনের প্রথম রাত সাড়ে বারোটার সময় স্বপ্নের খুলনা শহর গিয়ে সত্যিই অভিভূত হলাম। তারপর শেরালী শেরবাগ ভাই নিজে এসে আমাকে নিয়ে গেলেন ওনার বাসায়। অনেক অনেক আপ্যায়ন করলেন মন ভরে গেলো। শুক্রবার সকালে পড়শী সাহিত্য সংস্থার ৫ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরিতে ছুটে গেলাম,ওখানে দেশী ও বিদেশি কবিদের সাথে মিশে কবিতা ও কথায় মন ভরে গেল। পাশেই টিএনটি জামে মসজিদে জুম্মার নামাজ আদায় করে নিলাম। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকে খুলনা শহরটা ঘুরেফিরে দেখার চেষ্টা করলাম।চমৎকার একটা শহর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, শহীদ হাদিস পার্ক, রেলওয়ে স্টেশন সহ আরো অনেক জায়গা দেখলাম। রাতে শেরালী শেরবাগ ভাইয়ের বাসার ছাদে চা পান করতে করতে ফুলের বাগান ও শহরের ছবি তুললাম, আলোয় শহরটা ঝলমল করছিল। রাতে মনে মনে স্বপ্ন দেখছিলাম যে, খুলনা এলাম তো সুন্দরবন না দেখলে মন ভরবে না একটা অতৃপ্তি মনের কোণে রয়েই যাবে। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠে সোনাডাঙা মোড় থেকে বাসে করে ছুটে চললাম মোংলা বন্দরের উদ্দেশ্য, সোয়া আটটার সময় পৌঁছে গেলাম মোংলা বন্দর, পশুর নদীর তীরে ঘুরেফিরে দেখে নিলাম ওখানকার সুন্দর পরিবেশটা, সকাল সাড়ে দশটায় কাস্টমস কর্মকর্তা তপন ভাই ও ইব্রাহিম খলিল ভাইয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় আমি কবি আসাদ সরকার ভাই ও ডক্টর মোয়াজ্জেম হোসেন স্যার পশুর নদীর বুক ছিঁড়ে ছুটে চললাম। সোয়া এক ঘন্টা পর পৌঁছে গেলাম স্বপ্নের সেই মায়াবী প্রাকৃতিক আশ্চর্য সুন্দরবনের করমজলে। টিকেট কেটে প্রবেশ করলাম সুন্দরবন পয়েন্টে, প্রথমে যাদুঘরের সংগ্রহশালায় দূলর্ভ বন্যপ্রাণীর অনেক কিছু দেখে মন ভরে গেলো, কুমির, হরিণ, নানান রকম গাছগাছালি,গোলপাতা দেখে অভিভূত হলাম। ইয়াবড় কাঠের পুল পেরিয়ে ওয়াচ-টাওয়ারে ওঠে পড়লাম, পুরো সুন্দরবন একনজরে দেখে নিলাম। জঙ্গলে ঘুরে ফিরে বানরের দেখা পেলাম,একটা জঙ্গলি বানরের সাথে মজা করতে গিয়ে খামছি খেয়েই ফেলছিলাম, কোন রকমে বেঁচে গিয়েছিলাম। কিভাবে জোয়ার ও ভাটার পানি ওঠানামা করে তাই দেখে নিলাম একপলকে। দুঃখ একটাই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখা পেলাম না। এইভাবে অসাধারণ সময় কাটিয়েছি সুন্দরবনে।বিকালে ট্রলারে করে ফিরে এলাম মোংলা বন্দর,সেখান থেকে কাটাখালী হয়ে মাইক্রোবাসে করে আবারও রওনা দিলাম ঢাকার উদ্দেশ্য। পথে ফিরতে ফিরতে খুলনা শহর ও সুন্দরবনের কথা মনে পড়ছিল।

Admin

Admin

 

0 Comments.

leave a comment

You must login to post a comment. Already Member Login | New Register