গদ্য কবিতায় স্নেহদিয়া
একাকীত্বের মূর্ছনা
সামগ্রিক ভাবে দেখতে গেলে একাকিত্ব একটি বড় অভিশাপ মানব জীবনে। মানুষ মূলত এক সমাজবদ্ধ জীব এবং সকল মানুষের সাথে থেকেই একসাথে সে বেড়ে ওঠে। সেই সমাজেই বাস করে যখন সে একলা হয়ে যায় বা একাকীত্ব অনুভব করে তখন সে যন্ত্রণা দুঃসহ হয়ে ওঠে । আবার সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা একাকিত্ব পছন্দ করে ।
তাদের কাছে একাকিত্ব সৃজনশীলতা ও নিজেকে পুনরুদ্ধার করার আর এক নাম। কিন্তু অধিকমাত্রায় কোনো জিনিস ই সুখদায়ক হয় না। তাই অনেক সময় দেখা গেছে যে একাকিত্ব যখন দীর্ঘায়িত হয় তখন মানসিক অবসাদে অনেকে ভোগেন।
এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে একটি বিন্দুর মতো আমরা সবাই একা।
সবথেকে কঠিনতম একাকীত্ব হল নিজেকে নিজের ভালো না লাগা ।
নিজেকে ভালো করে জানার জন্যও নিজেকে পর্যালোচনা করার জন্য একাকীত্বের প্রয়োজনীয়তা আছে।
মানুষের কখনও কখনও একা থাকা ভালো কারণ সেই সময়ে কেউ আপনাকে সেভাবে আঘাত করতে পারে না।
আমরা এই পৃথিবীতে সবাই একা এসেছি এবং একাই মৃত্যুবরণ করি ।অতএব নিঃসঙ্গতা অবশ্যই আমাদের জীবন যাত্রার একটি অংশ।
একাকীত্ব, মানুষকে নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করতে সুযোগ করে দেয়।
একা থাকা প্রতিটা সময় মানুষকে শক্ত ও সাহসী করে তোলে ।
বন্ধুবিহীন একাকীত্ব অসহনীয়।
একাকীত্বের কিছু কথা
মনকে সর্বদা শক্তিশালী করে রাখা যায় না , মাঝে মাঝে নিভৃতে একাকী থাকারও প্রয়োজন ;নিজের কান্না গুলির বহিঃপ্রকাশের জন্য।
একাকীত্ব একটি অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গেলে সেখান থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কষ্টসাধ্য।
অসৎ মানুষের সঙ্গ লাভ করার থেকে নিঃসঙ্গতা ও একাকীত্ব অধিকতর শ্রেয় ।
অবসর সময়ে নিজের সঙ্গকে উপভোগ করার জন্য একাকীত্ব অপরিহার্য।
একাকীত্ব তখনই মানুষ অনুভব করে যখন সে নিজের সাথে কথা বলে কারণ তখন কেউ তার কথা শোনার মত থাকে না।
মন্দ সাহচর্যের থেকে নিঃসঙ্গতা অনেক ভালো।
একাকীত্ব অপরের দ্বারা সৃষ্টি হয় না। এটি তখনই তৈরি হয় যখন নিজের অন্তঃসত্ত্বা বলে যে ,”তোমার জন্য ভাবার এ জগতে কেউ নেই”।
মনে রেখো তুমি জগতে একা নয়।তোমার মধ্যে ভগবান আর তোমার নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও বাস করে।
আমি একা থাকা অপছন্দ করি না কারণ আমি ভিড়ের মধ্যে অন্যতম একজন হতে চাইনা।
কায়িক পরিশ্রম যেমন মানুষকে করে তোলে শারীরিকভাবে ক্লান্ত ,তেমনি দীর্ঘদিন একাকীত্বের মধ্য জীবনযাপন করলে সে হয়ে পড়ে মানসিকভাবে ক্লান্ত।
মনের কথা বোঝাতে গেলে একলা বলতে হয়।
বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি সৃষ্টি করে একাকীত্ব , যা পরিশেষে মানুষের জীবনকে চরম কষ্ট প্রদান করে ।
সেই জিনিসটি মানুষকে স্বতন্ত্র করে যেটি অবধারিতভাবে তাকে একাকীত্বে নিমজ্জিত করেছিল।
কখনো কখনো রুটিন মাফিক জীবনের ব্যস্ততার থেকে রেহাই পাবার জন্য একা থাকার প্রয়োজনীয়তা পড়ে ।
সমাজবদ্ধ জীব মানুষ কখনো একা বেঁচে থাকতে পারে না তাই প্রায় প্রত্যেক মানুষের সঙ্গীর প্রয়োজন হয় ।
প্রিয়জনের বিদায় মানুষের মনকে দেয় সর্বাধিক একাকীত্ব ।
একাকী নিঃসঙ্গ জীবনের শ্রেষ্ঠ সঙ্গী একটি ভালো পুস্তক ।
যে ঈশ্বরের অস্তিত্ব প্রতিনিয়ত অনুভব করতে পারে সে জীবনে কখনো একাকিত্ব বোধ করে না ।
কিছু মানুষ একাকীত্বেই বেশি স্বচ্ছন্দ।
একাকীত্ব জন্ম দেয় মানসিক অবসাদের।
সবার মধ্যে থেকেও একলা অনুভব করাই হল সবথেকে কষ্টকর ও কঠিনতম একাকীত্ব।
সবার মধ্যে টিকে থাকা সহজ কিন্তু একা জুঝতে পারা খুবই কঠিন কাজ।
শুধুমাত্র বন্ধুত্বের অভাব ই একাকীত্ব এনে দেয় না; একাকীত্ব প্রকৃতপক্ষে লক্ষ্যের অভাব থেকে জন্ম নেয়।
একাকীত্ব জীবনের সৌন্দর্যকে বাড়াতে সাহায্য করে।
মানবজাতি সত্যিই বড় বিচিত্র ।যখন তারা একা থাকে তখন তারা সবার সঙ্গ চায় ,আবার যখন তারা সবার মধ্যে থাকে তখন তারা একাকীত্বকেই কামনা করে।
কিছু সময়ের একাকীত্ব ভাল কিন্তু সারা জীবনের জন্য নয়।
এমন কিছু নেই যা তোমার আয়ত্বের বাইরে আছে। নিজের অন্তরে দৃষ্টিপাত করো। তুমি যা চাও সেখানেই তা সুরক্ষিত আছে আর সেটাই হল প্রকৃতপক্ষে ‘তুমি’।
পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষ কোনো না কোনো সময়ে একাকীত্বের যন্ত্রণা ভোগ করেছে ।
কারো স্মৃতি আঁকড়ে বেঁচে থাকার সব থেকে খারাপ দিক টি কেবলমাত্র কষ্ট নয় ; তা হল একাকীত্ব ।কারণ একাকীত্ব কারো সাথে ভাগ করে নেওয়া যায় না।
একাকীত্ব মানে নিঃসঙ্গতা নয় এটি একটি ধারণা যে তোমাকে কেউ গুরুত্ব দেয় না, তোমার ব্যাপারে কেউ ভাবে না ।
একাকীত্ব এবং নিঃসঙ্গতাবোধের সৃষ্টি হয় বিচ্ছিন্নতাবোধ থেকে। প্রচণ্ড নিঃসঙ্গতাবোধ একজন মানুষকে মারাত্মক মানসিক অবসাদে নিয়ে যেতে পারে আর এই অবসাদ কে আমরা কেবল বিষণ্ণতা বলে আখ্যা দিতে পারি না। সেই বিষণ্নতা থেকেই সৃষ্টি হয় নানান জটিল রোগের যা মানুষকে শেষ করে দেয়। ধ্যান ও যোগের মাধ্যমে মানুষ নিজের মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সে একাকীত্ব ও নিঃসঙ্গতার মতো কঠিন ব্যাধি থেকে নিজেকে উত্তীর্ণ করতে তুলতে পারবে।
0 Comments.