- 40
- 0
আমাদের রেলস্টেশন শহীদ মাতঙ্গিনী থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে রামনগর বলে একটা স্টেশন আছে, সেখান থেকেও টোটোতে চেপে প্রায় ৮ কিলোমিটার গেলে শিবগ্রাম। একটা ছোট্ট গ্রাম্য অঞ্চল। সেখানে ৫০ বছরের পুরনো একটা মন্দির তথা আশ্রম আছে। সেই আশ্রমের বার্ষিক প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে আমাদের নাট্যদল বনফুলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। সুধীর স্যারের সেই মর্মান্তিক হত্যার পর আমরা ভেবেছিলাম আমাদের নাটক করার সখ ঘুচলো। কিন্তু রণদা থাকতে তা হবে না। স্যারের স্মরণেই আমরা আবার নাট্যচর্চা শুরু করেছি। আমাদের বৈরাগীতলার মন্দির প্রতিষ্ঠা দিবসে সাধু মহারাজ দীননাথ স্বামী উপস্থিত ছিলেন, আমাদের কাজ দেখে উনি এতটাই খুশি হয়েছেন, ওনাদের বার্ষিক অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ আমাদের জানিয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়, আমাদের যাওয়া-আসা, থাকা, খাওয়া-দাওয়া সমস্ত খরচ ওনারাই বহন করবেন। চারদিন ব্যাপি হবে এই অনুষ্ঠান। আগামী ১৮ তারিখ সকালে আমাদের যাত্রার সূচনা। এবারে আমাদের দলটা বেশ বড়। আমি, রণদা, সুজনদাদা ছাড়াও নাট্যদলের আরও পাঁচজন, ভোলাদাদা, গোপালদাদা, নিকুদাদা, সুনির্মলদাদা ও রাখালদাদা। সবাইকে নিয়ে যাবার আমন্ত্রণ ছিল, কিন্তু পড়াশোনা বা কাজকর্ম ফেলে সকলের যাওয়া সম্ভব নয়। রণদা ঠিক করল, ওখানে আমরা আমাদের স্বর্গীয় মাস্টারমশাই সুধীর দাসের লেখা ‘চৈতন্য পালা’ নাটকটা করব। ওই নাটকে আমাকে আটটা গান গাইতে হয়। রণদা চৈতন্য সাজে। বাকিরা নানা ভূমিকায়। এই নাটকটা আমাদের নাট্যদলটিকে এক অন্য আঙ্গিকে নিয়ে গেছে। গুরুজি বলল, অত দূরে যাবি একা একা? রণদা বলে, একা কোথায়? আমরা সবাই তো আছি। মা বলল, তা হলেও, ওই অজ পাড়া গাঁ! তুই যা দস্যি! দেখিস বাপু! ঠাম্মি কিন্তু কোনও দুশ্চিন্তার কথা না বলে বেশ উত্তেজনার সাথে বলল, দাদুভাই চৈতন্যদেবের ওই গানটা যখন কুনাল গাইবে, তখন ৫০০ লোক চোখের জলে ভাসিয়ে দেবে! গা না ছোটভাই! আমি গাইলাম, বিরাজ গো প্রভু এই হৃদি জুড়ে সদা যেন তব দরশন পাই প্রকাশিছে আজি আমি ভবঘুরে কোথাও যে তব দেখা নাই! কি করে যে হেরি কায়া-তনু-মন অধম কিছু যে ভেবে নাহি পাই তোমার তরে প্রভু এ প্রাণ ত্যাজিনু এ দেহে লহো তুমি ঠাঁই।
0 Comments.